ক্রীতদাসের হাসি পিডিএফ রিভিউ | Kritodasher Hashi Book Review PDF
বইঃ ক্রীতদাসের হাসি
লেখকঃ শওকত ওসমান
পৃষ্টাঃ ৮০
মুল্যঃ ১০০
রচনাকালঃ ১৯৬২ (আইয়ুব খানের শাসনামল)
“দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে৷ বান্দা কেনা সম্ভব-!কিন্তু-কিন্তু-ক্রীতদাসের হাসি-না-না-না-না-”
-তাতারীর শেষ উক্তি
‘ক্রীতদাসের হাসি’র মূলভাব তুলে ধরতে উপন্যাসের অন্তিম মুহূর্তে ক্রীতদাস তাতারীর এই আর্তনাদটুকুই যথেষ্ট মনে হয়েছে। পুরো উপন্যাসটিই অগ্রসর হয়েছে এই হাস্যার অপারগতার উপরেই। তবে এই আর্তনাদকে অনুভব করতে হলে অবশ্যই এই উপন্যাসটির আরো ভেতরে যেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান – একজন অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ
ক্রীতদাসের হাসি’কে উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এর প্রায় সবটুকু অংশই সংলাপ নির্ভর। ভূমিকার অংশটুকু ছাড়া নাটকের মতো কথোপকথনের মাধ্যমেই সমগ্র উপন্যাস শেষ হয়েছে। এমনকি নাটকের মতো ‘স্টেজ ডিরেকশন’-ও রয়েছে কিছু কিছু জায়গায়। ইংরেজি সাহিত্যে যাকে বলে “ড্রামা-নভেল” যেটি দেখা যায় জেন অস্টিন এর “প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস” নভেলে। বাংলা সাহিত্যে এরকম ‘না-উপন্যাস না-নাটক’ রূপের উপস্থাপন এর আগে দেখা যায়নি। সেই হিসেবে ‘ক্রীতদাসের হাসি’ শওকত ওসমানের একটি সফল নিরীক্ষা।
আরও পড়ুনঃ চোখের বালি উপন্যাস PDF রিভিউ
লেখকের উদ্দেশ্যঃ
শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’ যখন প্রকাশিত হলো, সময়টা তখন ১৯৬২ সাল। সমগ্র পাকিস্তান জুড়ে সামরিক শাসন জারি করা হয়েছে, বাঙালিদের ঘাড়ে চেপে রয়েছে আইয়ুব খান। পূর্ব বাংলা স্বৈরশাসনের অত্যাচার-নিষ্পেষণে নরকতুল্য হয়ে উঠেছে, যেন উপন্যাসের বাগদাদেরই প্রতিচ্ছবি। বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, প্রতিবাদ করতে গেলেই মুখে চেপে বসছে শাসকের জাঁতাকল, প্রতিনিয়ত কমে আসছে গণমাধ্যমের সংখ্যা।
আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনকেই ব্যঙ্গ করে শওকত ওসমান এ উপন্যাসটি লিখেছিলেন। যেখানে রূপক অর্থে পূর্ব বাংলা হয়ে উঠেছে বাগদাদ, খলিফা হারুন-অর-রশিদ হলেন স্বয়ং আইয়ুব খান আর তাতারী হলো স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের প্রতিনিধি।
আরও পড়ুনঃ শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই গুলো PDF রিভিউ
নারীঃ
নারী চরিত্রগুলোকে সরাসরি খুব বেশি প্রাধান্য দেয়া না হলেও তৎকালীন সময়ে তাদের নিয়ে পুরুষদের ধারনা প্রকাশিত হয়েছে।তাদের রুপের গুনেরও প্রকৃত পরিচয় দেয়া হয়েছে। এবং একজন পুরুষের জীবনে হাসিমুখে ভালো থাকার জন্য নারী কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝানো হয়েছে। বুসায়না নামক একজন পতিতার আত্নহত্যাই প্রকাশ করে সে আসলে সমাজের কাছে কি চায়।
এবার আসা যাক আমার পছন্দের অংশে যেটিকে আমি বলি “আমার নোটলাইন”। আমি কোন বই পড়বো আর সেখান থেকে কিছু ভালোলাগার কথা সংগ্রহ করে রাখব না তা কিভাবে হয়।
আরও পড়ুনঃ জননী – শওকত ওসমান পিডিএফ রিভিউ
নোটলাইনঃ
১- বিশ্রামের অর্থই তো কেবল ঘুম নয়।
২- মৃত মানুষকে কি কেও খুন করে?
৩- দেহের প্রতীক ছন্দ নাকি ছন্দের প্রতীক দেহ?
৪- যা বহমান নয় তাই উচ্ছিষ্ট। তাই জীবন, যৌবন আর নদী উচ্ছিষ্ট নয়।
৫- যারা ভালো কথা বলতে পারে তা ভালো হাসতেও পারে।হাসি আর কথার মুল উৎস এক জায়গায়।
৬- হেকিমী দাওয়াই তৈরি করতে অনেক রকম উপাদান প্রয়োজন হয়। তেমনি হাসির জন্য বহু উপাদান দরকার। হাসি একটা জিনিস কিন্তু হাসি তৈরি হয় নানা জিনিস দিয়ে।খাওয়া লাগে, আরাম লাগে, শিক্ষা লাগে আরো বহু কিছু। এর কিছুর অভাব হলে আর হাসি আসেনা। যেমন সব আছে কিন্তু নিরাপত্তা নেই তখন হাসি আসবেনা।
আরও পড়ুনঃ কপালকুন্ডলা PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৭- যোগ্যতা থেকে কোন কিছু না পেলে তা ঢিলে লেবাসের মত বেখাপ্পা-ই দেখায়। আর যোগ্যতা মেহনত ছাড়া যারা পুরস্কার আশা করে তারাই হচ্ছে দুনিয়ার আসল গোলাম।
৮- মানবীর যৌবনই কি যতেষ্ট? তাহলে জননী রুপে সে কিরুপে মর্যাদা পায়?
৯- রুপের হাটই আসল হাট।
১০- পরের দুঃখ মুছে দিতে পারলে রুহে আত্নায় যে কত শান্তি আসে তা যদি মানুষ জানত।
১১- কালো পাথর কোনদিন নকল হয়না।সাদা আর ঝলমলে পাথরই সহজে নকল করা যায়।
১২- ভুল কে ভুল বলাই কবিদের ধর্ম। তারা শুধু সুন্দরের পূজারী-ই নন।
১৩- আকাশের কোন নক্ষত্র খসে গেলে অন্যান্য তারা কি নিজের কর্তব্য ভুলে যায়?বরং ঐ শূন্য জায়গা পূরণে এগিয়ে আসে নব উজ্জ্বলতায়।
১৪- হাসি মানুষের আত্মার প্রতিধ্বনি (শেষ লাইন)
আরও পড়ুনঃ হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি বইয়ের রিভিউ পিডিএফ
বলা বাহুল্য, তিনি এই উপন্যাসের জন্য আদমজি পুরুস্কার পেয়েছেন। অনেকের মতেই এটি লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এই সত্য মিথ্যা যাছাইয়ের হাসিমুখেই পড়ে নিতে পারেন বইটি।
হ্যাপি রিডিং…
লিখেছেনঃ Nayeems Rah’man
বই: ক্রীতদাসের হাসি [ Download PDF ]
লেখক: শওকত ওসমান
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত