বইঃ ওঙ্কার
লেখকঃ আহমদ ছফা
কালের বিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারা একজন বাবা। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, তিনি কালের পৃথিবীতে বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছিলেন। তিনি রন্ধে রন্ধে ধারণ করেছিলেন পূর্বপুরুষদের অতিহ্য। তাকে পূর্বপুরুষদের আশ্রয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে করার জন্য আরও ছিলো বংশপঞ্জি। যুগ-যুগান্তের পুরনো কীটদষ্ট পাংশুটে তুলোট কাগজ।
যুক্তফ্রন্ট সরকার পূর্ব-পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসে সে সময়। জমিদারি প্রথা উঠিয়ে দিলেও তিনি স্বপ্ন দেখেন জমি জিরাত নিয়ে আবার ক্ষমতার ছড়ি ঘুরাবেন।
ক্ষমতার জানান দেবার জন্য মামলা-মোকাদ্দমা করেই মনের ঝাল মেটাতেন। যে কেউ খাজনা না দিলে বা কিছুদিন দেরি করলেই তার বিরুদ্ধে মামলা করা ছিলো তার প্রধান কাজ। এমনকি কারও সাথে ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হলেও তাকে খুন করার কথা সাড়ম্বরে ঘোষনা করে নিজের ক্ষমতার জানান দিতেন।
অতঃপর তিনি একবার সত্যি সত্যিই ফেঁসে গেলেন এক আঁধা খুনের মামলায়। এই মামলার পিছনে গাটের শেষ পয়সাটাও ঢালতে হয় তাকে তারই প্রতিবেশি আবু নসর মোক্তার সাহেব কে। কিন্তু নসর মোক্তার সাহেব সুযোগে সৎব্যবহার করে তাদের বাড়ি ঘর সব নিলামে তোলেন।
এতক্ষণ যে বাবার কথা বললাম তিনার একমাত্র ছেলে এ গল্পের কথক। তিনি শহর থেকে বিএ পাশ করে বাবার এ দুঃসংবাদ শুনে বাড়ি ফেরেন। নসর মোক্তার সাহেব নিলাম থেকে বাড়ি ঘর বাঁচানোর একমাত্র শর্ত দেন তার বোবা মেয়ের সাথে বিয়ের।
অনেকটা নিরুপায় হয়ে বোবা মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হোন আমাদের নায়ক।
তেজি বাবা ছেলের বাজে অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী ভেবে দিন দিন গুমোট হয়ে গেলেন।
তারপর একদিন তার অনুপযুক্ত পৃথিবী ছাড়লেন।
বাবার পিছু পিছু মা ও-
একমাত্র বোনকে নিয়ে আমাদের নায়ক শশুরের আশ্রয়ে শহরের বাড়িতে উঠলেন।
শশুরের দয়ায় ভালোই কাটছিলো।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার
সময়টা ১৯৭১ সাল।
আবু নসর মোক্তার সাহেব আইয়ুব খানের এক একান্ত সহচর হয়ে উঠেন দিন দিন।
আমাদের নায়কও শশুরের ভক্ত হয়ে উঠেন। প্রথমদিকে বোবা বউয়ের প্রতি প্রচণ্ড বিরক্তিভাব থাকলেও দিনকে দিন তা কেটে ভালবাসার জন্ম দেয়।
সময় গড়িয়ে চলছিলো দ্রত। আউয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠছিলো দেশ।
সারাদিন মিটিং, মিছিল। আমাদের নায়কের এসব ভালো লাগতেন না। তিনি ভাবছিলেন আউয়ুব খান যে কেন গুলি করে মিছিল থামিয়ে দিচ্ছেন না।
ওদিকে তার বোবা বউ মিছিল দেখলেই দৌড়ে জানালা দরজা খুলে মিছিল, স্লোগানে নিজেকে সঁপে দিতেন। যদিও তিনি বোবা তবুও তিনি মিছিল দেখলেই গোঁ গোঁ শব্দে আকাশ বাতাশ ভারী করতেন স্লোগানের সাথে। সে এক মনোরম দৃশ্য।
আরও পড়ুনঃ পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ PDF রিভিউ – আহমদ ছফা
আসাদকে গুলি করে মারার পর ঘেরাও-পোড়াও-জ্বালাও-অভিযান স্লোগান মিছিলে বাংলা সহিংস রুপ ধারণ করল। এক মিছিলের সাথে সাথে তার বোবা বউও গলার সব ধব্বনি দিয়ে গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলতে তুলতে একসময় বাকযন্ত্র ছিঁড়ে গল গল রক্ত স্রোতে উচ্চারণ করে “বাঙলা”।
তারপর জ্ঞান হারায়।
মেঝেয় পড়ে থাকা ছোপ ছোপ রক্ত হাতে নিয়ে আমাদের নায়ক তার অচেতন বউয়ের দিকে তাঁকিয়ে ভাবেন-কোন রক্ত বেশী লাল?
-শহীদ আসাদের নাকি আমার বোবা বউয়ের?
হিন্দু পুরাণ মতে ওঙ্কার হচ্ছে আদি ধব্বনি,সকল ধব্বনির মুল। লেখক বলতে চেয়েছেন,বাহ্য কান দিয়ে আমরা ধরতে পারি ব। না পারি সকল ধব্বনি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়।
এ গল্পে বোবা মেয়েটা তা করে দেখিয়েছে।
রেটিং ১০/১০
লিখেছেনঃ Jannatul Ferdaus Lucky
বইঃ ওঙ্কার [ Download PDF ]
লেখকঃ আহমদ ছফা
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
আহমদ ছফা রচনাসমগ্র PDF Download করুন