মেয়েটার নাম জান্নাতুন নুর শশী-
শশী, যার আরেক নাম চন্দ্র। আঠারোবাঁকির তীরে যার বেড়ে উঠা! সে চন্দ্র যার কাজ অন্যকে আলোকিত করা, সেই চন্দ্রের জীবনের কিছু অন্ধকার সত্যকে নিয়ে গড়া এই উপাখ্যান ‘চন্দ্রলেখা’।
★কাহিনী সংক্ষেপঃ
শশী এবং তার বছর ছয়েকের ছোটভাই হাবুর পাতা কুড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়, তাদের বাবা মোক্তার হোসেন, যাকে এলাকার সবাই সহজ সরল বিনয়ী আর পরোপকারী হিসেবে জানতো,
সেই মোক্তার মিয়া জেলে গেলো আকস্মিক। তখন দেবদূতের মতো অভাবী পরিবারকে সাহায্যে এগিয়ে গেলো নন্দনপুরের চেয়ারম্যান আতাহার খান।
বহু চেষ্টা তদবীরের পর জামিন হলো মোক্তারের, তার পরদিন ভোরবেলা মোক্তার মিয়ার লাশ পাওয়া গেলো-
তারপর থেকে ক্রমশ নানা জটিলতা,নানা অন্ধকার আসতে থাকে বোর্ড স্ট্যন্ড করা মেধাবী মেয়ে চন্দ্রর জীবনে। মা লায়লা বানু, যাকে সে গ্রামের সহজ সরল মহিলা ভিন্ন ভাবতো না, সেই লায়লা বানু আচমকা এক অগ্নীমূর্তি নিয়ে ভিন্ন নারী রুপে সামনে আসতে বাধ্য হয়েছেন, পারিবারিক অভাব, টানাপোড়েন দক্ষ হাতে সামলে গেছেন পুরুষহীন একটি পরিবারের দুটো মেয়ে।
কিছুদিন পর মতিন নামের একটি আঠারো উনিশ ছেলের আবির্ভাব ঘটে তাদের পরিবারে, শশী তাকে প্রথমে আপদ ভাবলেও ধীরে ধীরে তাকে পরিবারের একজন হতে দেখা যায়৷ মতিনের গল্প, কী ভয়ানক গল্প, যেখানে যুগ যুগ ধরে চলা আরেক অন্ধকারের গল্প উঠে আসে-
শশীর জীবনের সেই অন্ধকার গল্পের ডালাপালা হয়ে কখনো কাশেম যে কিনা মায়ের ইঁদুরের গর্তের ধান হরণের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ছিলো, সে প্রতিশোধের আগুনে ঘি ঢেলেছেন এক প্রভাবশালী। কিন্তু তার কী স্বার্থ ছিলো তাতে?
অল্পসময়ে এসে বৃহৎ ঘোর লাগানো চরিত্র কামাল পাশা! তার কী ভূমিক ছিলো শশীর গল্পে?
কখনো মোতাহার খান, যে কিনা তার দ্বি’গুণ কম বয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করতে উতলা, ক্রমশ ঘোলাটে হতে থাকা শশীর রাত দিনে এক টুকরো আলোর রশ্মী হয়ে আসা জামিল, কিংবা সেই আবিদ! তাদের কী প্রভাব ছিলো শশীর জীবনে?
তালেবের বেপরোয়া আচরণে শশীদের মূলত ভ্রুক্ষেপ করার দরকার ছিলো কি!!
কিংবা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার পদক্ষেপে কতটুকু সফল ছিল মেধাবী শশী?
এমন অসংখ্য প্রশ্নের চমৎকার জবাব এই “চন্দ্রলেখা”
★উল্লেখযোগ্য চরিত্রঃ শশী, লায়লা বানু, আতাহার খান(চেয়ারম্যান), জামিল, মতিন ও আবিদ প্রমুখ।
★পাঠানুভূতিঃ আব্দুল্লাহ আল ইমরানের ভাষ্যে তিনি মোহান্ধ বারোয়ারী জীবনের গল্পে তার বুক পকেটকে লিখেন। ২৬৩পৃষ্ঠার এই উপন্যাস চন্দ্রলেখায় তিনি অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গল্পে হৃদয়কে নাড়া দিয়ে দিয়ে গেছেন তাবৎ শশীর গল্প বলতে যেয়ে।
শশীর জীবন য্যানো একটা হারিকেনের তীব্র ঝড়ের রাতে নিভতে নিভতে জ্বলে থাকা৷ নিজস্ব রঙে ঢংয়ে তিনি তার সেই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। অবস্থার বিবরণে তিনি কিছু অসাধারণ উপমা ব্যাবহার করেছেন, সর্বোপরি “চন্দ্রলেখা” পড়ে পাঠক কখনো আবেগী হবেন, কখনো হয়তো হোঁচট খাবেন,কখনো নিজের জীবনের সাথে মিলাতে চেষ্টা করবেন কোন অংশ।
চন্দ্রলেখা পড়তে পড়তে যেকোন পাঠক মাত্রই চোখের সামনে দেখতে পারবেন শশীর রাত জেগে পড়ার দৃশ্য, তার মায়ের অতিপাকৃত বিশ্বাস, কিংবা হাবুর গরুর মাংশ খাওয়ার উচ্ছ্বাস। তার বর্ণনায় মুগ্ধ হবেন এমনটাই যেন প্রাপ্য তার লেখকসত্তার।
কখনো গল্প শেষে আপনার মনে তীব্র প্রেম পাইয়ে দিবে “কলেজ ক্যাম্পাসে তোমার মত কাউরে দেখলে আমি কেমন থমকায় যাই, নদীর পাড়ে বইসা আড্ডা দিতাছি, ধরো হঠাৎ হাওয়ায় মন উদাস হইল, অমনি তোমার মুখ ভাইসা উঠে, এর মানে কী, শশী? তোমার ও কি এইভাবে আমার কথা মনে হয়? মন কেমন করে”র মত কিছু উক্তি, কিছু কার্যাবলী, কিছু বর্ণনা!
কখনো মা মেয়ের খুনসুটি, কখনো ভাই বোনের তীব্র স্নেহ মমতা পাঠককে আড়ষ্ট করবে!
★অসংলগ্ন অংশঃ গল্প বর্ণনায় তিনি হয়তো একটু বেশীই খোলামেলা ছিলেন, আমি শশীর গল্প পড়তে যেয়ে হয়তো গল্পের শেষটা লেখকের সমাপ্তির মতই আন্দাজ করেছি, হয়তো অনেক পাঠকই এটাই ভাববেন।
গল্পের ১৩৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছো সরকারবাড়ির সাজু সরকার যেদিন মারা যায় সেদিন বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছিলো শশীর।
২৪০ পৃষ্ঠায় সেই সাজু সরকার যিনি একজন মৃত তিনি কী করে শশীদের গল্পে চলে আসে?
★প্রিয় উক্তিঃ
১ঃ কারও চোখে চোখ রেখে মিছে স্বান্তনা দেওয়া কঠিন।
২ঃ কান্না সংক্রামক৷ খুব দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে।
৩ঃ অতি আপন মানুষের কাছে এলে অজস্র কথা একসঙ্গে যেন বের হয়ে আসতে চায়। একটার সঙ্গে আরেকটা পেচিয়ে শেষ পর্যন্ত আর কথাই বের হয়ে আসতে চায় না।
৪ঃ জগতে এমন কিছু কান্না আছে, যার ভাগ কাউরে দিতে হয় না। কিছু কান্না নিজের। কিছু কান্না একান্ত গোপন।
★বই পরিচিতিঃ
বইঃ চন্দ্রলেখা
প্রচ্ছদঃ সানজিদা পারভীন তিন্নি
পৃষ্ঠাঃ ২৬৪
প্রকাশনীঃ অন্বেষা
প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে বইমেলা ২০২০
মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৭০
আশা করছি এই উপন্যাসে একজন পাঠক হৃদয় তৃপ্ত হবে, মুগ্ধ হবে।
রিভিউ লেখক : তান্নি তামান্না, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বইয়ের ফেরিওয়ালায় লিখতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন
বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বই ধার করতে সদস্য হোন