বইঃ দেয়াল
লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ (শেষ উপন্যাস)
আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য সাধারন জ্ঞান পড়তে ভালো লাগে না। তবে গল্প উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে। তারা নিঃসন্দেহে হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লেখা বই পড়তে পারেন। স্যারের যেকোনো বই পড়লে সাধারন জ্ঞান সহ বিজ্ঞানের অনেক মজার বিষয় জানা যায়। এটাকে ইংরেজিতে বলে (Subconscious process of learning) যেমন আপনি বিদেশে গেলেন ব্যাবসা বা চাকরি করে অর্থ উপার্জন করতে। এর পর বিদেশিদের সাথে কথা বলতে বলতে তাদের ভাষা আপনার জানা হয়ে গেলো। যা আপনার উদ্দেশ্য ছিল না।
প্রকাশনাঃ
সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের একজন হুমায়ূন আহমেদ স্যারের চল্লিশ বছরের বর্ণাঢ্য লেখকজীবনের সর্বশেষ উপন্যাস ‘দেয়াল।’ ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে তিনি ‘ দেয়াল ‘ রচনা শুরু করেছিলেন। স্যারের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের একুশের বইমেলায় উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনঃ কবি হুমায়ূন আহমেদ PDF রিভিউ
বিষয়বস্তুঃ
সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের পরবর্তী সময়ের পটভূমিতে লেখক এ উপন্যাসটি লিখেছেন।
ইতিহাসের সত্যের সাথে কল্পনার রঙ মিশিয়ে হুমায়ূন আহমেদ জন্ম দিয়েছেন এই হৃদয়গ্রাহী উপাখ্যানের।
যে সময়কে উপজীব্য করা হয়েছে ‘দেয়াল’-এ, তা একটি সদ্যস্বাধীন জাতির ভাগ্যকাশের চরম অনিশ্চয়তার কাল। উপন্যাসের কিছু চরিত্র বাস্তব থেকে নেওয়া, নাম-ধাম সবই বাস্তব, ঘটনা-পরস্পরাও বাস্তবেরই অংশ। লেখক যেহেতু উপন্যাস লিখেছেন, তাই আছে আবন্তির মত কিছু কাল্পনিক চরিত্রও।গল্প আবর্তিত হয়েছে এদের ঘিরেও।
অনেকের মতেই এখানে প্রকৃত ইতিহাসের দেয়ালকে কিছুটা বিকৃতি করা হয়েছে। অন্তত বইটি পড়লে অনেক অজানা ব্যাক্তিদের নাম ও কাজ সহজেই মনে করা যায়। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ধর্মীয় কিছু গোড়ামী, ক্ষমতার লোভ, চারিত্রিক পরিবর্তন এসব কিছু বিষয়কে স্যাটায়ার করা হয়েছে বইটিতে।
তবে সকল মতাদর্শের বাইরে গিয়ে যদি কেবলমাত্র উপন্যাস হিসেবে বইটি গ্রহন করা হয়,
তাহলে অবশ্যই দেয়াল হুমায়ুন আহমদের সেরা একটি উপন্যাস।
আরও পড়ুনঃ বাদশাহ নামদার PDF হুমায়ূন আহমেদ
আমার নোটলাইনঃ
আমি যেকোনো বই পড়লে সেই বই থেকে আমার পছন্দের নোটলাইন খোঁজা এটি একটি অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এগুলো আবার কিছু বিভিন্ন সময় কথা বলার সময় রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগে। তাই দেয়াল উপন্যাসটিতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
বাম পাশে পৃষ্ঠা নাম্বার উল্লেখ আছেঃ
১৪-গল্প-উপন্যাস হলো অল্প বয়সী মেয়েদের মাথা খারাপের মন্ত্র।
১৬-এমনও কি হতে পারে কিছু বিশেষ দিনে কামিনী ফুল গন্ধ দেয়না।
১৮-ঘনঘন অবাক হলে লিভারের ফাংশন ভালো থাকে।
২৮-যুদ্ধের সময় মিথ্যা বলার সুযোগ থাকে না।
২০-মানুষ এবং পশু শুধু বন্ধু খোঁজে না,তারা প্রভুও খোঁজে।
২৩-অতি রুপবতীদের কারও প্রেমে পড়তে নেই। অন্যরা তাদের প্রেমে পড়বে, তা-ই নিয়ম।
২২-ক্ষুধার সময় দেবতা সামনে এসে দাঁড়ালে তাঁকেও নাকি খাদ্যদ্রব্য মনে হয়।
২২- কুকুর হয়ে জন্মানোর একটা সুবিধা আছে। খুব ক্ষিধা পেলে ডাস্টবিন ঘাঁটাঘাঁটি করলে কিছু-না-কিছু পাওয়া যায়। মানুষের এই সুবিধা নেই।
২৫-মনে মনে গান করলে বাইরের কোনো শব্দ কানে ঢোকে না।
২৭- ক্ষুধার্ত অবস্থায় পথে বের হওয়া যায়।ভিক্ষা চাওয়া যায়। নগ্ন অবস্থায় সেটা সম্ভব নয়। তাই বস্ত্রের অভাবই বড়।
২৮-অতিরিক্ত ভোজন এবং অতিরিক্ত বাচালতা প্রাননাশক।
৩৩-মানুষ চুম্বকের মতো। একটি চুম্বক যেমন পাশের চুম্বককে প্রভাবিত করে, মানুষও করে।
৩৯- কেও হেসে আনন্দ পায়। কেও কেঁদে আনন্দ পায়।আনন্দটাই প্রধান। হাসা বা কাঁদাটা কোনো ব্যাপার না।
৫৬-যুদ্ধের সময় ক্যামেরার প্রয়োজন ছিল।তখন অপূর্ব সাবজেক্ট ছিল।এখন নেই।
৫৮- মানুষ একমাত্র প্রাণী যে পুরোপুরি সফল জীবন পার করার পরেও আফসোস নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।
৭০- রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ থাকে। তারা রাষ্ট্রের কল্যানে কাজ করে। পরিবারেও গোয়েন্দা বিভাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। এই গোয়েন্দা বিভাগ পরিবারের কল্যানে কাজ করে।
৭৪- চোখে যা দেখা যায় তা দ্রুত তার রহস্য হারায়।চোখে যা দেখা যায়না, যেমন ‘মন’ অনেক দিন রহস্য ধরে রাখে।
৯৯- পুরোপুরি পাগল হলে গোপন খবর পাওয়া যায়।
১১৯- জীবন রক্ষার জন্য শুধু পা চেপে ধরা না,পা চাটাও যায়।
১৪১- মূর্খদের সাথে তর্কে জড়ালে তারা তোমাকে তাদের পর্যায়ে নিয়ে আসবে।
১৪৩-একটা বয়সের পর বাবা-মা নিজ সন্তানদের ভয় পেতে শুরু করে।
১৫৫-জগতে কারো জন্য কিছু আটকে থাকে না,এটাই মন্দ হয় আদি সত্য।
১৭৬- মানবজাতির স্বভাব হচ্ছে সে সত্যের চেয়ে মিথ্যার আশ্রয়ে নিজেকে নিরাপদ মনে করে।
১৮৭- পৃথিবীর সব দেশে, সবসময় সব পরিস্থিতিতে ‘টাকা কথা বলে’।
হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে থাকলে হয়তো তার পরবর্তী কোন উপন্যাসে লিখতেন যে, বইয়ের ভেতরের রসে ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে না।
লিখেছেনঃ মোঃ নাইমুর রহমান
বইঃ দেয়াল [ Download PDF ]
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র PDF Download করুন