সরদার ফজলুল করিম উক্তি

দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম এর কিছু উক্তি

Redirect Ads

শুভ জন্মদিন মনীষী সরদার ফজলুল করিম (১৯২৫-২০১৪)
আজ পহেলা মে, মনীষী সরদার ফজলুল করিমের ৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে সরদার ফজলুল করিম স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

সরদার ফজলুল করিম সর্বদা জীবনের জয় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “হতাশার নিবাস কোথায়?” মহামারী উদ্ভূত আতঙ্ক ও হতাশার এই সময়ে সরদার ফজলুল করিমের চিন্তা মনোবল-সঞ্চারী হয়ে উঠতে পারে। এই আশাবাদ নির্ভর হয়ে আমরা এখানে সরদার ফজলুল করিমের কিছু উক্তি সর্বজনের সমীপে উল্লেখ করছিঃ

Download

এক। সেই কোন কাল থেকে মানুষ মরে যাচ্ছে, ডুবে যাচ্ছে, তলিয়ে যাচ্ছে ও হেরে যাচ্ছে। এই মানুষই আবার ভেসে উঠছে, টিকে থাকছে এবং জিতে যাচ্ছে।

দুই। এভরি লাইফ ওয়ান্টস টু লিভ। সে লাইফ মানুষ হোক আর অন্য কিছু হোক। যে জীবন বাঁচতে চায় না, সে জীবন কোনো জীবন না। আমি এটা বুঝতে পারি না, তোমরা হতাশ-হতাশ বলে এত চিৎকার করতে পারো কিন্তু আশা-আশা বলে চিৎকার করতে কেন পারো না! হতাশাকে তো অন্বেষণ করতে হয় না।

তিন। জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়াটা একান্তই জরুরি। তা না হলে পরে অপরজন কীভাবে আমার কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হবে? মানুষ পরস্পর একসঙ্গে বাস করে অপরের কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আশায়। হাট থেকে বাড়ি ফেরার সময় মানুষ যখন অন্ধকারকে ভয় পায়, তখন পাঁচজন মানুষ মিলে একসঙ্গে যায়। এটাই তো আসল ব্যাপার। এই মানুষগুলো পরস্পরের কাছে আশা চায়। সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রেই একই ব্যাপার। মানুষ মানুষের কাছে আশা চায়।

চার। আমি নিশ্চিত যে জীবন জয়ী হবে এবং মৃত্যু পরাজিত হবে। …। জীবন লড়াই করবে মৃত্যুর সঙ্গে এবং মৃত্যু পরাজিত হবে ও জীবন প্রবহমান থাকবে। জীবন বেঁচে থাকবে এবং মৃত্যুর মৃত্যু ঘটবে – এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকাটা একান্ত আবশ্যকীয়।

আরও পড়ুনঃ অধ্যাপক ডঃ নেহাল করিম স্যারের লাইফ চেঞ্জিং কিছু উপদেশ

পাঁচ। আমাদের এভাবে ভাবতে হবে যে, আমি যেমন গ্লোবের মধ্যে আছি গ্লোবও তেমনি আমার মধ্যে আছে। আমার সমস্ত অসহায়তা নিয়েই বলতে চাই যে, উইদাউট মি দেয়ার ইজ নো গ্লোব। এভাবে ভাবতে পারলে একটু সাহস পাওয়া যায়। তুমি হয়ত ব্যঙ্গ করতে পার এই বলে যে, ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সরদার! হোক না। আমার ঢাল-তলোয়ার না থাকুক, তথাপি আমি নিধিরাম সরদার। সরদার তো।

ছয়। আমার চারদিকে হতাশার সর্বগ্রাসী একটা ব্যাপার দেখি। হতাশা বোধ হচ্ছে এক সংক্রামক ব্যাধি। ব্যক্তির হতাশা থেকে হতাশার মহামারি হয়। জীবনের মধ্যে হতাশাকে অন্বেষণ করতে হয় না। জীবনের মধ্যে আশার বীজ অন্বেষণ করতে হয়। জীবনপথের স্বর্ণখন্ডকে চিনতে না পারলে এবং চিনে তাকে হাতে তুলে না নিলে স্বর্ণখন্ড নিজে এসে তোমাকে বলবে না যে এই দ্যাখো আমি তোমার জীবনের স্বর্ণখন্ড। আমি তোমাকে এ কথাটা বলতে চাই যে, হতাশার বিবরে আবদ্ধ হয়ে থাকলে চলবে না।

সাত। কোথাও মৃত্যু দেখলে? আমি তো জীবন ছাড়া আর কিছু দেখি না। গোর্কির কথাই আমাদের জীবন দর্শন হোক ’মানুষ ছাড়া কোনো দেবতা নাই’। এই আমি যখন মানুষকে দেখি, আমি দেখি যে, কত লক্ষ-হাজার বছর ধরে মানুষ লাইন ধরে জীবনের পথে এগিয়ে চলেছে। সে এগোচ্ছে আর এগোচ্ছে জীবনের সড়কে। প্রতি মুহূর্তে তারা জীবনের খানাখন্দে পড়ছে আর মরছে। আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে। আবার চলছে। এই দৃশ্য আমাকে মৃত্যঞ্জয়ী সুধায় অভিষিক্ত করে। আমাকেও অমর শক্তিতে পরিণত করে।

আট। যারা শান্তি বিনষ্ট করার তারা শান্তি বিনষ্ট করবেই। কিন্তু বাড়িতে ডাকাত পড়লে লাঠিসোঁটা যাই থাকুক তাই দিয়ে প্রতিরোধে নামতে হবে। শান্তিকামী মানুষ মরেও অমর হবে এই বোধে আস্থা রেখে যার যেটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে প্রতিরোধে নামাটাই বিধেয়। যে বাঁচার চেষ্টায় নেমে মরছে, সেই হচ্ছে জীবন। আর যে মারতে নেমেছে, সে মেরেও মৃত্যুর বাড়া। তোমরা এসব কিছু বোঝো না বা বুঝতে চাও না।

আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় ও সেরা কিছু বই PDF রিভিউ

নয়। আমাদের সময়ে একটা সেন্টিমেন্ট ছিল। একটা যৌথসমাজ দাঁড় করানোর সেন্টিমেন্ট। আমি যখন একজন হিন্দু কমরেডের নাম নিয়ে বলি সে আমার ভাই, কিংবা যখন বলি সন্তোষের (সন্তোষ গুপ্ত) মা আমার মাসিমা, তখন আমার মধ্যে ইউনাইটেড হিউম্যান কমিউনিটির বোধটা কাজ করে। এখনকার সময়ে এসে দেখছি যে চামড়ায় একটু আঁচড় কাটলে পরিচয়টা ফুটে বেরিয়ে আসে। এটা খুবই দুঃখজনক। তবে এটাও ঠিক যে হতাশা, ব্যর্থতা ও বিফলতার অভিজ্ঞতা ছাড়া সমাজ রূপান্তর সম্ভব নয়।

দশ। তরুণরা আমাকে প্রশ্ন করছে এই বলে যে আপনার ঘোড়ার ডিমের বিপ্লব কবে আসবে? এই কথাটা জিজ্ঞেস করাই তো একটা বিপ্লবাত্মক ব্যাপার। একদিন দেখলাম, এক মেয়ে এক ছেলেকে চড় মেরেছে। আমার চোখে এটা বিশাল এক বিপ্লব। তুমি জিজ্ঞেস করছ, এর আদৌ কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে কি না। আমি বলব অবশ্যই আছে। বিশাল রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে।

এগারো। জীবন কখনো মরে না। সময়হীন সময় ধরে জীবন অগ্রসর হচ্ছে। লাইফ ইজ এন্ডলেস। মৃত্যুভাবনা নিয়ে কথা বলছি জীবনের আনন্দ উপভোগ অব্যাহত রাখার জন্য। একটা জীবন যখন মৃত্যুর হাত থেকে উঠে আসে, সে আনন্দ ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। আমার সে অভিজ্ঞতা আছে। তোমাদের নাই। আমার মতো করে জীবনকে তোমরা বুঝতে পারবে না। আগে অভিজ্ঞতা নাও। এ সমস্ত প্রশ্ন না করে পারলে আমার মতো এগারো বছর জেলখানায় থেকে আসো। তারপর বুঝতে পারবা প্রতিটা অভিজ্ঞতা কতই না মূল্যবান। জীবন কতই না মূল্যবান। আমি ব্যক্তিগত মৃত্যুর প্রসঙ্গটিকে ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। আমি কোনো একলা আমি নই। আমার পরিবার, বন্ধুজন, পারিপার্শ্বিক, তোমরা, সব মিলিয়ে আমি। আমি হচ্ছি সমাজের আমি। আমি শুধু মানুষের সমাজের স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি।

উৎসঃ
শান্তনু মজুমদার, “জীবন জয়ী হবেঃ সরদার ফজলুল করিমের সাথে কথোপকথন”, ঢাকাঃ সময় প্রকাশন, বইমেলা ২০০৪।

ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

Download

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

Facebook Comments

Similar Posts