শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই PDF রিভিউ | Sheikh Mujibur Rahman Books
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
প্রকাশনী : ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
মূল্য : ২২০ টাকা
পৃষ্ঠা : ৩৩০
শেখ মুজিবের বেড়ে উঠা, বাল্যকাল, পারিবারিক অবস্থা, পড়াশোনা, রাজনীতির হাতেখড়ি, কলকাতায় যাওয়া, ইসলামীয়া কলেজে ভর্তি হওয়া, বেকার হোস্টেলের জীবন, মুসলিম লীগের কর্মী হিসাবে সক্রিয় হওয়া, লাহোর প্রস্তাব, ফজলুল হক ও সোহওয়ার্দীর সাহচর্য, জিন্নাহ ফান্ড সংগ্রহ, দিল্লি ভ্রমণ, সিলেটের গনভোটের জন্য গণসংযোগ, ভারতভাগ, কলকাতার দাঙ্গার সময়ের বর্ননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি, মুসলিম লীগ থেকে চলে এসে আওয়ামী লীগ গঠনের বর্ননা, দেশের বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফর, চীন ভ্রমন, জেলে বন্দী থাকার টুকটাক বিবরণ ও ভোট ও গনতন্ত্রের জন্য লড়াই। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।
শেখ মুজিবের ভাষ্য, রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্নীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছে থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে?মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।
কারাগারের রোজনামচা
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
প্রকাশনী: বাংলা একাডেমি
মূল্য: ৪০০ টাকা
পৃষ্ঠা :৩৩২
দুই বছরের কারাগারের বন্দি থাকার বর্ননা আছে এই বইতে। শেখ মুজিব তার রাজনৈতিক জীবনের উল্ল্যেখযোগ্য সময়ে প্রায় ৪৬৮২ দিনের উপরে জেলখানায় বন্দি ছিলেন। তারমধ্যে ব্রিটিশ আমলে মানে ১৯৩৮ সালে ৭ দিন বন্দি ছিলেন আর বাকি দিনগুলো পাকিস্তান আমলের যা শুরু হয় ১৯৪৮ সাল থেকে। ওই সময়ের মধ্যে থেকে ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সালের জেলখানার বিচিত্র অভিজ্ঞতা লিখেছেন। কারাগারে কার দায়িত্ব কি, সুযোগ সুবিধা, অপরাধ অনুসারে ডিভিশন পাওয়া, কারাগারের ভিতরে দায়িত্বশীল বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কি নামে ডাকা হয়, কারাগারে বন্দি অন্যান্য ব্যক্তিদের সময় কাটানো ইত্যাদি। চিঠি আদান প্রদান কিভাবে করতেন তা উঠে এসেছে। বইটি শুরু হইছে থালা বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল এই নামের অধ্যায় দিয়ে। প্রচুর ফটোগ্রাফ দেওয়া আছে।
আমার দেখা নয়া চীন
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
প্রকাশনী : বাংলা একাডেমি
মূল্য :৪০০ টাকা
পৃষ্ঠা :১৯৩
১৯৫৪ সালে জেলে বন্দি থাকার সময় লেখক তার নয়াচীন সফরের উপর স্মৃতিচারণমূলক লেখা লেখেন। যা গোয়েন্দা পুলিশ ও কারাগারের গার্ড কর্তৃক নজরদারি হতো এবং সেন্সর হতো (তা থেকে বুঝা গেছিলো যে ১৯৫৪ সালে বন্দি থাকার সময় এই লেখা লিখেছিলেন)।১৯৫২ সালে পিস কনফারেন্স অব দি এশিয়ান এন্ড প্যাসিফিক রিজিওন্স কর্তৃক আয়োজিত সম্মেলনে যোগদানের জন্য নির্বাচিত হন পূর্ব পাকিস্তান থেকে। ওনার সাথে আরো ছিলো আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জনাব আতাউর রহমান, ইত্তেফাকের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, খোন্দকার মুহাম্মদ ইলিয়াস ও ইউসুফ হাসান। আর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একটি দল যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট দরকার, তখন পাকিস্তানের রাজধানী করাচি থেকে অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে পাসপোর্ট ইস্যু হতো।
যেহেতু শেখ মুজিব রাজনীতিবিদ ছিলো তাই হোম মিনিষ্ট্রির অনুমতির দরকার ছিলো। আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইয়ার মোহাম্মদ খানের সহযোগিতায় আবেদনের পরের দিন পাসপোর্ট গ্রহণ করে। বাংলাদেশ থেকে চীনের রাজধানী বেজিং (পূর্ব নাম পিকিং) যাওয়ার সরাসরি কোনো ওয়ে ছিলো না বিধায় বার্মার রেঙ্গুন, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ব্রিটিশ শাসনাধীন হংকং হয়ে চীনের যাত্রা ছিলো। যাত্রাপথের বিভিন্ন দেশের শহরের বর্ননা পাওয়া যায়। হংকং থেকে চীনের প্রবেশের, দুই দেশের ইমিগ্রশন ও কাস্টমস এর বর্ননা। ক্যান্টন থেকে পিকিং এর যাত্রা, সম্মেলনে যোগদান, বিভিন্ন দেশের নেতাদের বক্তব্য, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক, কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা, টানা ১১ দিন এই সম্মেলন চলে, যাতে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের ৩৭ টি দেশের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।
শেখ মুজিব ২৫ দিন নয়াচীনের বিভিন্ন শহরে অবস্থান করে তাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি, শিল্পকারখানার নিয়মাবলী ও উৎপাদন, আইনশৃঙ্খলা, বিরোধী দলের উপর নির্যাতনের খবরাখবর, শিক্ষার পদ্ধতি, মুসলমানদের হালহাকিকত , কারখানার পরিবেশ, খাদ্য উৎপাদন, চাকরির ব্যবস্থা, পরিকল্পিত উন্নয়ন, জাতীয়তাবাদ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন ও প্রয়োগ, ভিক্ষুক দুরীকরন, ধর্মীয় কুসংস্কার, চিকিৎসা পদ্ধতি, সম্পদের সুষম বন্টন, বেশ্যাবৃত্তি দুরীকরন ও তাদের কাজের সংস্থান, চীনের শাসন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন এবং তৎকালীন আমাদের দেশের সাথে তুলনা করার চেষ্টা করেছেন যে আমরা কত পিছিয়ে আছি।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেও উন্নয়ন তেমন করতে পারে নাই (তখন ৫ বছর হইছে স্বাধীনতার) আর নয়াচীন ১৯৪৯ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে এই ৩ বছরে প্রচুর উন্নয়ন ও সমাজ পরিবর্তন করেছে। নয়াচীনের নেতা মাও সে তুঙ্ দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্ণ ধর্ম জাত বন্ধু প্রতিবেশী আত্মীয় মানে নাই যেখানে অন্যায় দুর্নীতি রাহাজানি দেখছে ওইখানে কঠোর আইন প্রয়োগ করেছেন। মাও সে তুঙ এর এক বন্ধু দুর্নীতিতে ধরা খাইছে কিন্তু তার শাস্তি ফাসি ছিলো এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর যেকোনো দেশের ৩/৪ বছর গুরুত্বপূর্ণ এই সময় যেসব দেশ সঠিক পরিকল্পনা ও দূরদর্শী সম্পন্ন নীতিমালা প্রনয়ণ করে এবং বাস্তবায়ন করে তাহলে ওই দেশের অগ্রযাত্রা রোধ করা কঠিন। নয়াচীন থেকে প্রচুর উপহার পাওয়া ও কেনাকাটার কথা উল্লেখ করেছেন। বইয়ের শেষে শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী, হাতের লেখা ডায়েরির কপি ও বইতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত বিবরনের টীকা দেওয়া আছে।
লিখেছেনঃ Md Fakhrul Islam Bhuyian
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন