আমার দেখা নয়া চীন PDF রিভিউ | Amar Dekha Noya Chin Review – Mujibur
বইঃ আমার দেখা নয়া চীন
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমি
ভূমিকাঃ শেখ হাসিনা
ধরনঃ স্মৃতিনির্ভর ভ্রমণকাহিনী
প্রথম প্রকাশঃ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
কভারঃ হার্ডকভার
প্রচ্ছদঃ তারিক সুজাত
পৃষ্ঠাঃ ১৯৯
মূল্যঃ ৪০০ টাকা
ভূমিকাঃ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৭ ই মার্চ হাজার ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৬ সালে স্বদেশী আন্দোলন কারী এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সমর্থকদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৩৮ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী একে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে গোপালগঞ্জ সফরের সুবাদে ১৯৩৯ সালে কলকাতায় সোহরাওয়ার্দীর শিষ্যত্ব ঘোষণা করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দেন। যুদ্ধের সময় তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৭২ সালে দেশে ফেরেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আমার দেখা নয়া চীন বইটি লেখকের স্মৃতিনির্ভর ভ্রমণকাহিনী। বইটির ভূমিকা লিখেছেন শেখ হাসিনা।
বইটির সংক্ষিপ্ত বর্ননাঃ
১৯৫২ সালের ২ থেকে ১২ ই অক্টোবর চীনের পিকিংয়ে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে এ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নয়া চীন সফর করেন। আমার দেখা নয়া চীন স্মৃতিনির্ভর ভ্রমণ কাহিনী তিনি রচনা করেন ১৯৫৪ সালে কারাগারে বন্দি থাকাকালে। এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর সাম্রাজ্য বিরোধী মনোভাব, অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার গভীর পরিচয় ফুটে উঠেছে। একজন তরুণ রাজনীতিকের মনন-পরিচয়, গভীর দেশপ্রেম এবং নিজ দেশকে গড়ে তোলার সংগ্রামী প্রত্যয় ফুটে উঠেছে এই গ্রন্থে।
কমিউনিজমের বিপক্ষে হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহের সাথে একজন অনুসন্ধানীর দৃষ্টি নিয়ে লেখক চীনের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করেছেন। তার এই আগ্রহের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছেন-
“মাওলানা ভাসানী তাকে বলতেন, যদি সুযোগ পাও, একবার চীন দেশে যেও।”
শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি সম্মেলনে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন এবং অন্যান্য দেশেরও মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধার প্রতি মুগ্ধতার কথা আলোচনা করেছেন বারবার। তিনি তার অনুভূতি বইতে উল্লেখ করেছেন,
“আমি বক্তৃতা করলাম বাংলায়। দুনিয়ার সব দেশের লোকই যার যার মাতৃভাষায় বক্তৃতা করে। শুধু আমরাই ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা করে নিজেদের গর্বিত মনে করি।”
তাঁর বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি, মুক্ত উদার মনোভাব ফুটে উঠেছে তার লেখায়। তিনি এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন,
“আমাদের দেশের একদল লোক আছে ভালো কথা বললেই কমিউনিস্ট বলে চিৎকার শুরু করে। তাদের জন্য আজ লোকের মধ্যে দিনদিন ধারণা হচ্ছে কমিউনিস্টরাই বোধহয় ভালো কথা কয়। নয়া চীনে কমিউনিস্ট নীতি বলে কোন নীতি দেখলাম না। দেশের জনগণের যাতে মঙ্গল হয় তাই তাদের কাম্য সেই কাজই তারা করে।”
চীনের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প এলাকা শ্রমিকদের, তাদের শিশুদের জীবনযাপনের গভীর পর্যবেক্ষণ তাঁর মনে এক গভীর রেখাপাতের সৃষ্টি করে। তিনি লিখেছেন,
“নয়া চীন থেকে ঘুরে এসে আমার এই মনে হয়েছে যে, জাতির আমূল পরিবর্তন না হলে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা কষ্টকর। নতুন করে সকল কিছু ঢেলে সাজাতে হবে। ভাঙা দালানে চুনকাম করে কোন লাভ হয় না বেশি দিন টিকে না। আবার ভেঙে পড়ে।”
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
বইটির যে বিষয়গুলো আমার ভালো লেগেছেঃ
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, তাদের জীবনযাত্রা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাবার জন্য চীন সরকার, চীনা বিপ্লবের পর কিভাবে উন্নতি করেছে এবং পরিবর্তন এনেছে, সেগুলো জানতে তিনি সম্মেলনে যান। তিনি শুধু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেননি, খুব গভীরভাবে দেখেছেন কৃষকের বাড়ি, শ্রমিকের বাড়ি, তাদের কর্মসংস্থান, জীবনমান সবই তিনি দেখেছেন। শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। শিশু বয়স থেকেই দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করার যে প্রচেষ্টা ও কর্মপন্থা তাও অবলোকন করেছেন। আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণও করেছেন। এক কথায়, সকল বিষয় অত্যন্ত গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন।
শেষকথাঃ
শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যান্য বইয়ের মত আমার দেখা নয়া চীন বইটি পড়েও পাঠক উপভোগ করবে আশা করি। এতে রয়েছে ভ্রমণের বর্ননা আবার আছে নতুন একটি অবস্থায় পরিণত হওয়া এক দেশের কাহিনী।
লিখেছেনঃ Asif Ahmed
বইঃ আমার দেখা নয়া চীন [ Download PDF ]
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা সকল বইসমূহ