বইয়ের নাম : ইরিনা ( হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম সায়েন্স ফিকশন )
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
ধরন : সায়েন্স ফিকশন
মূল্য : ১১৩ টাকা
রিভিউ
চার’শো বছর আগে একদল ভূগর্ভস্থ বিজ্ঞানী অমরত্ব লাভ করার জন্য তারা বিশেষ ঔষধ আবিষ্কার করেন এবং হরমোন ব্লকিং রিএজেন্টের ঔষধটি তাদের শরীরে ঢুকিয়ে অমরত্ব লাভ করেন। তারা সংখ্যায় চল্লিশ জন ছিল। পৃথিবীর মানুষজনের উপর তাদের শাসনতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তারা পৃথিবীকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করার পরিকল্পনা করেন এবং তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার সিডিসির সাহায্যে পৃথিবীর মানুষজনকে নিয়ন্ত্রণ করেন।সিডিসি নিষিদ্ধ নগরের মূল কম্পিউটার।
বিজ্ঞানীরা আণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পৃথিবীর মানুষদের মেরে ফেলে তারা বাকী কিছু সংখ্যক মানুষদের নিয়ে শহরভিত্তিক সমাজব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেন।
প্রথম শহর, দ্বিতীয় শহর এবং তৃতীয় শহর নামে পৃথিবীকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং, রোবট শাসনতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করেন। এই তিন শ্রেণীর মানুষদের মধ্যে জীবনযাপন করার জন্য নানা বিধিমালা, সাবধান কার্ড সহ আইন কানুন জুড়ে দেন। যাতে তারা এসব নীতিমালা মানতে মানতেই জীবন কাটিয়ে দেয়। অমর বিজ্ঞানীদের ব্যাপারে আর কোনো কৌতূহলী নাহয়।…..
আরও পড়ুনঃ হুমায়ূন আহমেদ এর সবগুলো চলচ্চিত্র একসাথে
প্রথম_শহর:-
প্রথম শহরের আইন কানুন হচ্ছে সবচেয়ে বেশি কড়া এবং(সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত) দশ ঘন্টা কাজ, চল্লিশ মিনিট ব্রেক আর সাপ্তাহে একবার রেশন দিয়ে পুরো সাপ্তাহ চলতে হয়। এবং পড়ালেখার মধ্যে তেমন জ্ঞান, বিজ্ঞানের সিমাবদ্ধতা নেই।২৫০ বিধিগুলো মুখস্থ করা এবং মেনে চলা প্রথম শ্রেণীর কাজ। কেউ অমর মানুষদের ব্যাপারে কৌতূহলী হলে সেটা প্রথম শ্রেণীর অপরাধ এবং তার কার্ডে লাল কালির দাগ পড়ে যায়। এভাবে পোনেরোটার বেশি কার্ডে লাল কালির দাগ পড়লে কেউ সারা জীবনেও আর দ্বিতীয় শহরে যেতে পারবেনা। প্রথম শহরে ত্রিশ বছর থাকার পর দ্বিতীয় শহরে।…
দ্বিতীয়_শহর :-
দ্বিতীয় শহর হচ্ছে সুখের শহর।সেখানে তেমন কোনো নিয়মকানুন নাই বললেই চলে। সবাই স্বাধীন এবং যে যার ইচ্ছেমত চলাফেরা করছে।বাজার থেকে যার যা প্রয়োজনীয়, কিনছে। এতে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই।দ্বিতীয় শহরে বিশ বছর থাকার পরই সবাই তৃতীয় শহরের দেখা পায়। তাও লটারির মাধ্যমে বিজয়ী হতে হয়।…..
তৃতীয়_শহর:-
তৃতীয় শহর হচ্ছে সুখের শহর।সবাই তৃতীয় শহর কে স্বর্গ মনে করেন। এবং মরার আগে একবার তৃতীয় শহরের দেখা পাওয়ার জন্য কত কত নিয়ম পাড়ি দিয়ে তারা এই স্বপ্নের শহরে আসার আশা করে।
নিষিদ্ধ_নগর :-
ভূগর্ভস্থের এই নগরীর বাসিন্দা হলেন সেই চল্লিশজন অমর বিজ্ঞানী। যাদের হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পুরো পৃথিবীর সমাজব্যবস্থা।সিডিসি নিষিদ্ধ নগরের মূল কম্পিউটার। নিষিদ্ধ নগরীর পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ তার দায়িত্ব।
গল্পের মূল চরিত্র হচ্ছে ইরিনা, মীর আর মূল কম্পিউটার সিডিসি।
ইরিনা আর মীরকে কম্পিউটার সিডিসির নির্দেশে প্রথম শহর থেকে তাদের নিষিদ্ধ নগরীতে নিয়ে আসা হয়। যেখানে অমর মানুষরা থাকে এবং নিষিদ্ধ নগরীতে যারা একবার যায়, তারা আর ফিরে আসেনা।..
তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইনের সর্বচ্ছ কর্মকর্তা গ্যালাকটিক ইন্টেলিজেন্সের লোক অরচ লীয়নকে পাঠানো হয়। ইরিনা কখনো বুঝতে পারেনা তাকে কেনো নিষিদ্ধ নগরীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! সে কোনো প্রথম শ্রেণীর অপরাধ করেনি। তার মধ্যে হতাশা আর ভয় জমাট বাঁধতে থাকে।
আরও পড়ুনঃ তোমাদের জন্য ভালোবাসা হুমায়ূন আহমেদ PDF
অপরদিকে মীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও সাহসী ছেলে। যার তেতাল্লিশ বার কার্ডে লাল কালির দাগ পড়েও সে বেঁচে আছে। তেতাল্লিশটি দাগ পড়লে সরকারী নিয়মে সে লোককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তার বেঁচে থাকার কারন তার বাবা একজন আইনের সর্বচ্ছ কর্মকর্তা অরচ লীওন। যদিও তার জন্মের পর তার বাবাকে বুঝে উঠার আগেই তার বাবা দ্বিতীয় শহরে চলে যায়। তাই তার সাথে আইনের নিষেধ অনুযায়ী মীরের যোগাযোগ নেই।
মীর কখনো এসব নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। এবং তার ধারণা সে খুব বুদ্ধিমান। ইরিনার সাথে তার ট্রেনেই দেখা হয় নিষিদ্ধ নগরীতে নিয়ে যাওয়ার সময়। এবং অরচ লীওন ও তাদের সাথে ছিলো। ট্রেন থেকে নেমেই তাদের নিষিদ্ধ নগরীতে আনাহয়।
চল্লিশজন অমর বিজ্ঞানীদের মধ্যে আর মাত্র নয়জন বেঁচে আছে। সবাই দীর্ঘ জীবনের হতাশায় ভুগে একে একে সুইসাইড করে মারা গেছেন। নয় জনের মধ্যে বিশেষ একজন,যার জন্য মূলত কম্পিউটার সিডিসির নির্দেশে ইরিনাকে নিষিদ্ধ নগরীতে আনা হয় এবং তার প্রাক্তন প্রেমিকার বংশধর ইরিনা।
রোবটিক্স শাসনতন্ত্র ক্রমে ক্রমে প্রভাবিত হচ্ছে বুঝে এবং বিজ্ঞানীদের না জানিয়ে ইরিনা মীর ও অরচ লীওন কে নিষিদ্ধ নগরিতে নিয়ে আসার কারনে অমর মানুষদের মধ্যে সে বিশেষ একজনের সন্দেহ কম্পিউটার সিডিসি ও তার কার্যক্রমের উপর যায়। যার ফলে পৃথিবীতে যন্ত্রের শাসন আর বেশি দেরি নেই ভেবে তিনি অরচ লীওনকে কম্পিউটার সিডিসিকে হত্যা করার দায়িত্ব দেন।
অরচ লীওন কি পারবে কম্পিউটার সিডিসির সকল ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে?
এবং তার সাথে সাথে অমর বিজ্ঞানীরাও কি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে?
জানতে পড়ুন হুমায়ূন আহমেদের রচিত অসম্ভব সুন্দর এই সায়েন্স ফিকশন “ইরিনা”।…
আরও পড়ুনঃ ওমেগা পয়েন্ট হুমায়ূন আহমেদ PDF রিভিউ
পাঠ_প্রতিক্রিয়া :-
বইয়ের নাম ইরিনা হলেও তার ভূমিকা অত্যন্ত গৌণ।এই বইয়ে সবচেয়ে ভাল লেগেছে মীর চরিত্র। জটিল সব সমস্যার সমাধানগুলো সে অত্যন্ত সহজভাবে করে। তার কাছে জটিল বলতে তেমন কিছুই মনে হয় না।
রোবট গুলোকে ধাঁধাঁ দিয়ে বিচলিত করে দেওয়াটাও ছিল অসম্ভব মজার। তার সব ব্যাপারে জানার উৎসাহ, গোলক ধাঁধাঁ সমাধান এবং সব জায়গায় চিন্তা মুক্ত, সে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটাও ছিলো চমৎকার ।…
পুরো বইটা পড়ে তার বুদ্ধির প্রশংসা করার দাবিদার। তাছাড়া অমর মানুষদের বিশেষ একজন, যার সাথে কম্পিউটার সিডিসির সারাক্ষণ কথা হয়। বইতে তার চরিত্র ও অসাধারণ ছিলো। বিশেষ করে শেষ মুহূর্তে ইরিনার সাথে দেখা হওয়ার ব্যাপারটাও ছিলো দারুণ এবং বেদনাদায়ক দুটোই।……
সব মিলিয়ে অতি চমৎকার একটি বই, পড়ে দেখতে পারেন।
হ্যাপি রিডিং…
লিখেছেনঃ Farjana Risha
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
হুমায়ূন আহমেদ রচিত সকল বই রিভিউ সহ PDF ডাউনলোড করুন