বইঃ কুহক
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৬৫
হুমায়ূন আহমেদ যতগুলো সাইন্স ফিকশন লিখেছেন সবগুলোই হ্য় উপন্যাসিকা আর না হয় ছোটগল্প। এক বসায়, এক টানে পড়ে ফেলার মতো বইগুলো। কিন্তু উপন্যাসিকা হলেই কাহিনীগুলো সাদামাটা বা গভীরতা কম , এমনটা মনে হয় না আমার । সমগ্র ক্রয় করার পর থেকে এখন পর্যন্ত উনার যতগুলো সাইন্স ফিকশন পড়লাম প্রায় সবগুলোর প্লটই বেশ চিত্তাকর্ষক মনে হয়েছে এবং সবগুলোই কমবেশি দারুণ লেগেছে। এর মধ্যে তারা তিনজন বইটার কথা আলাদাভাবে বলতে হয়, অসাধারণ একটি সাইন্স ফিকশন এবং ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বইটা বেশ আন্ডাররেটেডও।
‘কুহক’ নামে ৬৫টি পৃষ্ঠার এই ছোট্ট বইটি হুমায়ূন আহমেদের সাইন্স ফিকশন সমগ্রতে স্থান পেলেও এটাকে ঠিক সাইন্স ফিকশন জনরাতে ফেলা যাচ্ছে না। আমি বইটিকে প্যারাসাইকোলজিকাল থ্রিলার বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব। কিন্তু কাহিনীতে সাইন্স ফিকশন উপাদান যে ছিল না ব্যাপারটা এমন না, সাইন্স ফিকশনকে বইটির সাব জনরা ধরা যাবে। ছোট বইটির কাহিনী সম্পর্কে খুব বেশি না জানিয়ে হালকা একটু ধারণা দেইঃ
কাহিনী সংক্ষেপঃ
অঙ্কের শিক্ষক নিশানাথ বাবু সাইনাসের ব্যথা নিয়ে পলিক্লিনিকে যান এক্সরে করাতে। এক্সরে মেশিনটায় হঠাৎ কোথাও ম্যালফাংশন হয়, ম্যালফাংশন হওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবে মেশিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা না হয়ে একটা বিরাট ঝামেলা হয়ে যায়। যেখানে স্বাভাবিকভাবে কুড়ি মিলি রেডিয়েশনের বেশি একজন মানুষের শরীরের ভেতর দিয়ে চালানো যায় না সেখানে নিশানাথ বাবুর মাথার ভিতর দিয়ে খুব কম করে হলেও ১০ হাজার রেডিয়েশন চলে যায়। কিন্তু আকস্মিকভাবে তিনি বেঁচে যান এবং তার সাথে অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা ঘটে। নিশানাথ বাবু অদ্ভুত একটি ক্ষমতা পেয়ে যান, তিনি মানুষের মনের কথা বুঝতে শুরু করেন এবং ইচ্ছে হলে তাদের মাথার ভেতরও ঢুকে যেতে পারেন!
এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ
সাইন্স ফিকশন উপন্যাসিকাগুলোর মতো এই বইটিতেও ছোট পরিসরে দারুণ প্লট গড়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। ‘কুহক’ বইটি একটি টানটান উত্তেজনাপূর্ণ প্যারাসাইলোজিকাল থ্রিলার। মিসির আলি সিরিজের কয়েকটা বই এই ঘরানার। তাই এই জনরায় যে লেখক চমৎকার লিখেন তা মিসির আলি পাঠকদের অজানা নয়। মাত্র ৬৫টি পৃষ্ঠার বই কিন্তু গল্পটা মনে দাগ কেটে গেছে ভীষণভাবে। খুবই সাজানো গোছানও একটি বই, একদম প্রথম থেকেই আগ্রহ ধরে রাখে।
হুমায়ূন আহমেদ আমার খুবই পছন্দের একজন লেখক এবং উনার লেখা বরারই আমাকে অনেক টানে এবং অনেক বেশি ভালো লাগে। এই বইতেও ব্যতিক্রম ঘটেনি, দুর্দান্তভাবে পুরোটা গল্প বলে গেছেন তিনি। লেখকের অন্য সাই ফাইগুলোর মতো এই বইতেও মানবিক একটা দৃষ্টিকোণ আছে এবং ব্যাপারটা বরাবরের মতোই উপভোগ করেছি। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এই থ্রিলার বইটিতে যেভাবে তিনি এই দিকটাকে দক্ষতার সাথে হাইলাইট করেছেন তা সত্যিই দারুণ লেগেছে। আর আগেই যেমনটা বললাম হুমায়ূন আহমেদ উনার বইতে প্যারাসাইকোলজিকাল বিষয়বস্তুগুলো দারুণভাবে হ্যান্ডেল করেন, আর সেকারণেই উপভোগের মাত্রাটাও বেড়ে যায়।
ছোট বইতে চরিত্রগুলোর ফুটে উঠার জায়গা কম থাকে। তবে লেখক কয়েক পৃষ্ঠাতেই চরিত্রগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। গল্প নিজ গতিতে আগানোর পাশাপাশি চরিত্রগুলোও প্রয়োজনমতো ফুটে উঠার জায়গা পেয়েছে। নিশানাথ বাবুর জন্য পাঠকের মনে সহানুভূতি জাগাতে, তার জন্য কেয়ার করাতে লেখক পুরোপুরি সফল ছিলেন। দীপা ও আলোর চরিত্রটাকেও বেশ ভালো লেগেছে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
হুমায়ূন আহমেদের কিছু উপন্যাসিকা পড়ে ( বিশেষ করে সাইন্স ফিকশন ও সাইন্স ফ্যান্টাসি জনরার ) মনে হতো লেখক প্লটের গভীরতাটাকে পুরোপুরি এক্সপ্লোর না করেই সমাপ্তি টেনে দিয়েছেন। কিন্তু ‘ কুহক ‘ বইটির ক্ষেত্রে সেরকম মনে হয়নি। বইয়ের বাকিটুকুর মতো সমাপ্তিটাও দারুণ লেগেছে এবং বেশ সন্তোষজনক ছিল।
সর্বোপরি, টানটান উত্তেজনাপূর্ণ দারুণ একটি প্যারাসাইকোলজিকাল থ্রিলার ‘কুহক’। সামাজিক ও সমকালীন বইগুলোর পাশাপাশি থ্রিলার ও সাইন্স ফিকশন জনরাতেও দারুণ কিছু কাজ করে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ।লেখকের সাইন্স ফিকশন একটাও না পড়া থাকলে বা মাত্র একটা -দুইটা পড়া থাকলে আমি অন্বেষা প্রকাশনীর সমগ্রটা কিনে ফেলতে সাজেস্ট করব। ১০০০+ পৃষ্ঠার বইটির কোয়ালিটি বেশ ভালো এবং দামটাও অনেক রিজনেবল (২৫ পার্সেন্ট ছাড়ে মাত্র ৬০০ টাকায় পেয়ে যাবেন) । আলাদাভাবে শুধু ‘কুহক’ বইটি প্রতীক প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে , কেউ চাইলে সেটাও নিতে পারবেন।
থ্রিলার পাঠকদের জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড , থ্রিলার তেমন না পড়া হলে বা খুব একটা ভালো না লাগলেও বইটি ভালো লাগবে বলেই বিশ্বাস করি।
বইঃ কুহক
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত