অসমাপ্ত আত্মজীবনী

অসমাপ্ত আত্মজীবনী PDF রিভিউ | Oshomapto Attojiboni – Sheikh Mujibur

Redirect Ads

বইঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান

পৃষ্ঠাঃ ৩৩০
প্রকাশনীঃ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
মুদ্রিত মূল্যঃ ৫২৫

গ্রামের দুরন্ত কিশোর হতে মুসলিম লীগের এক সাধারণ কর্মী হয়ে উঠা, আবার এই সাধারণ কর্মী থেকেই বিখ্যাত নেতা হয়ে উঠা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান কে আমরা সকলেই চিনলে বা জানলেও তার এই মহান নেতা হওয়ার পিছনের কাহিনী বলতে গেলে আমরা কেউই জানিনা। অসমাপ্ত আত্মজীবনী -তে বর্ণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কৈশোর, বর্ণিত হয়েছে সফলতার গল্প, বর্ণিত হয়েছে তার দেশপ্রেম, তার উদারতা। এতে বর্ণিত হয়েছে মনোবল ভেঙে না যাওয়া এক তরুণের গল্প, বারবার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও এক ত্যাগী নেতার বেঁচে থাকার গল্প। এছাড়াও বইটিতে লেখক ব্যক্ত করেছেন তার সহকর্মীদের কথা, তার পরিবারের কথা, তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কথা যা বইটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস জানতে, দেশের গল্প, দেশের ভালোবাসার গল্প জানতে এখুনি পড়ে ফেলতে পারেন ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি ।

Download

কাহিনী সংক্ষেপঃ

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির কাহিনী যখন শুরু হয়, গোপালগঞ্জ তখনো জেলা হয়নি। ফরিদপুর জেলার একটি মহকুমা। তারই অন্তর্ভুক্ত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। অতীতে শেখ বংশের বেশ নামডাক থাকলেও শেখ মুজিব যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন বংশের সেই জৌলুস আর আগের মতো নেই।

অন্য দশজন মধ্যবিত্তের মতোই জীবন শুরু হয়। শেখ মুজিবুর রহমান মেট্রিক পরীক্ষা দেন ১৯৪১ সালে। কিন্তু তার আগেই জীবনে কত চড়াই-উৎরাই, কত বাধা বিপত্তি! স্থানীয় স্কুলে পড়া শুরু করার পর একাধিকবার স্কুল থেকে ছিটকে পড়েছেন। আবার শুরু করেছেন নতুন করে। বদল করতে হয়েছে একাধিক স্কুল।

স্কুলে থাকতেই জড়িয়ে যান রাজনীতির সাথে। তখন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেতে হয় জেলে। সাত দিনের জেল খাটেন। জীবনের প্রথম জেল। পরবর্তীতে এই জেলে তাঁকে বহুবার যেতে হয়েছে। ফলে সংখ্যাটাও আর সাতে সীমাবদ্ধ থাকেনি।

পড়ুনঃ শেখ মুজিবুর রহমানের জেল জীবন নিয়ে লেখা বই “কারাগারের রোজনামচা”

Download

মেট্রিক পাশের পর পুরোদমে রাজনীতিতে যোগ দেন। মিছিল, মিটিং আর বক্তৃতা ছাড়া কোনোদিকে নজর নেই। তখন লক্ষ্য একটাই- যে করেই হোক পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নেই।

১৯৪৩ সালে দেখা দিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। মা মরে রাস্তায় পড়ে আছে, ছোট বাচ্চা সেই মরা মায়ের দুধ খাচ্ছে। কেউ কেউ পেটের দায়ে নিজের ছেলেমেয়েকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির দুয়ারে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ চিৎকার করছে-“মা, বাঁচাও। কিছু খেতে দাও, মরে তো গেলাম, একটু ফেন দাও।” বলতে বলতে সেখানেই পড়ে মরে যাচ্ছে। ভয়াবহ সেসব দৃশ্য দেখে আর ঠিক থাকতে পারলেন না মাটির মানুষ শেখ মুজিব। আরেকবার লেখাপড়া ছাড়লেন। ঝাঁপিয়ে পড়লেন দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায়।

অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ১৯৪৭ সালে করা হলো পাকিস্তান। কিন্তু একি! পাকিস্তান হবার সাথে সাথেই শুরু হলো ষড়যন্ত্রের নতুন রাজনীতি। দাসত্বের শৃঙ্খলে চক্রাকারে ঘুরতে লাগল হতভাগা বাঙালির দল।

আবার শুরু হলো চড়াই-উৎরাই। দুর্গম পথচলা, জেলখাটা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অনলে একে অন্যকে পুড়িয়ে ছারখার করার পাঁয়তারা।

Download

আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

সামনে এসে দাঁড়াল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। পূর্ব বাংলার মানুষ ততদিনে বুঝে গেছে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে না পারলে দাসত্বের শৃঙ্খল আবার পরতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি। কিন্তু তাতে কী? সেখানে থেকেই দিয়ে গেলেন একের পর এক নির্দেশনা। আন্দোলন হলো, মিছিল-মিটিং হলো, গুলি হলো, তাতে তাজা প্রাণও ঝরল; এরপরই না মাতৃভাষা বাংলা হলো। কিন্তু সংগ্রাম থেমে থাকেনি। বরং আরো ঝেঁকে বসেছে।

এরপর একে একে সামনে এসেছে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান এবং সবশেষে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়ার ইতিহাস। প্রতিটি ঘটনাই বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনাই আবির্ভূত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে। তিনিই ছিলেন কেন্দ্রবিন্দুতে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ভেবেছিলেন সংগ্রাম বুঝি এবার শেষ হবে। কিন্তু হলো না। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যে বাংলাদেশকে পেলেন সে এক অন্য বাংলাদেশ। যেন এক ধ্বংসস্তূপ। চারিদিকে ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা আর অপুষ্টি। কিন্তু যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি কি আর পিছু হঠবেন? বাংলার আপামর জনগণকে নিয়ে শুরু করলেন নতুন এক সংগ্রামের। স্বপ্ন তখন একটাই- একটা সোনার বাংলা।

Download

পড়ুনঃ নতুন চীন ভ্রমণ নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বই “আমার দেখা নয়া চীন”

কিছু কথাঃ

১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বইটির লেখা শুরু করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বইটিতে বর্ণিত হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শৈশব থেকে যৌবনের শুরুর দিককার কথা।

তবে বইটি শেষ হয়েছে কিছুটা অতৃপ্তি দিয়ে। এর কারণ আসলে নামেই বুঝা যায়-অসমাপ্ত আত্মজীবনী। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া, উপসংহার ছাড়া, লেখকের অসমাপ্ত জীবনের মতোই একেবারে হুট করে শেষ হয়ে গেল। গোপালগঞ্জের ডানপিটে সাহসী কিশোর শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতা হয়ে ওঠার আভাস কেবল বইটিতে আছে। কিন্তু সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্পের প্রায় সবটাই অজানা রয়ে গেল।

বইটির শুরুতে শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা এবং বইয়ের বিভিন্ন অংশে জুড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির টুকরো ছবিগুলো বইটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল এই বই। অসাধারণ তথ্যে সমৃদ্ধ প্রতিটি পাতা। তাই বাইন্ডিং, মুদ্রণ বেশ গুরুত্বের সাথেই করা হয়েছে। এজন্য প্রকাশনা সংস্থা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, জাপানি, আররি, ফারসি, অসমীয়া, রুশসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখিনি কিন্তু অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে তাঁকে উপলব্ধি করেছি। পড়ার সময় মনে হয়েছে আলগোছে মহান মানুষটি যেন চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তর্জনী নাড়িয়ে দরাজ কন্ঠে বলে গেছেন জীবনের কথা। কানের কাছে ধ্বনিত হয়েছে সেই বজ্রকন্ঠ- জয় বাংলা।

Download

লিখেছেনঃ মোঃ জামাল উদ্দিন

বইঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী [ Download PDF ]
লেখকঃ
শেখ মুজিবুর রহমান

ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা সকল বইসমূহ

Facebook Comments

Similar Posts