চীন দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা বঙ্গবন্ধুর আগে থেকেই ছিল। যা আমার দেখা নয়া চীন গ্রন্থের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর এই উক্তিটির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
“জেলে থাকতে ভাবতাম, আর মাঝে মাঝে মাওলানা ভাসানী সাহেবও বলতেন, যদি সুযোগ পাও একবার চীন দেশে যেও”।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে দুটি বই—অসমাপ্ত আত্মজীবনী(২০১২) ও কারাগারের রোজনামচা (২০১৭)। এই বই দুটির লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই পুস্তক-ই বাংলাদেশের বই বিক্রির ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
ইতিমধ্যে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর লক্ষাধিক কপি বিক্রি হয়েছে এবং বেরোনোর এক বছরের মধ্যে কারাগারের রোজনামচাও বিক্রি হয়েছে ৭০ হাজার কপি। বাংলাদেশে আর কোনো রচনা এমন বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি। বইগুলোতে আছে বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘটনা ও অনুষঙ্গ। লক্ষ করার বিষয় হলো, দুই বইয়েই তাঁর ভাষার গাঁথুনি বেশ আকর্ষণীয় ও প্রাঞ্জল।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বের হওয়ার পর সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখক পরিচয়ের গোপন কুঠুরি। সেই কুঠুরির আরেকটি অংশ একটি ভ্রমণকাহিনি। বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের ওপর ভিত্তি করে তাঁর লেখা আমার দেখা নয়াচীন নামে বইটি ।
‘আমার দেখা নয়াচীন’-এ নয়া চীনকে চেনানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু নিজেকেও চিনিয়েছেন ভিন্নভাবে। ভ্রমণ-কাহিনী পড়তে পড়তে পাঠকের যেন কোনরূপ বিরক্তি না আসে, সেজন্যে বঙ্গবন্ধু রসবোধের পরিচয় দিয়ে প্রধান অনুষঙ্গগুলোকে উপজীব্য করে তুলতে সঙ্গতিপূর্ণ ভ্রমণের মজার ঘটনাগুলোকে তুলে ধরেছেন।
৩২ বছর বয়সের টগবগে তরুণ নেতার নয়া চীন ভ্রমণ; অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি, তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি, বাস্তবতা-সবকিছু-ই দারুণ দক্ষতা ও পরম মমতায় লিপিবদ্ধ করেন। বয়স তখন তাঁর ৩৪ বছর।
১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে নয়া চীনের পিকিং-এ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তদানীন্তন পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলা থেকে শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন। পূর্ববাংলা থেকে তাঁর ভ্রমণ-সঙ্গী ছিলেন পূর্ববাংলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি জনাব আতাউর রহমান খান, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস ও ইউসুফ হাসান।
নয়া চীন ভ্রমণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু মিয়ানমার, ব্যাংকক ও হংকংও গিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে রাজবন্দী থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু সেই ভ্রমণের সরস বিশ্লেষণ করেছেন ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে। নয়াচীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও সেতুং এর প্রতি সেদেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা, নয়াচীনের রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক অবস্থা ও বাস্তবতা বঙ্গবন্ধু এ ভ্রমণে প্রত্যক্ষ করেন। চীন ভ্রমণের এসব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন; যেখানে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান ও চীনের রাজনৈতিক-আর্থসামাজিক অবস্থার তুলনা, কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের চর্চা প্রভৃতি বিষয়াদি প্রাঞ্জলভাবে আলোচনা করেন। এটিই বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’।
আমার দেখা নয়া চীন গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথাই শুধু বলতে চাননি; বরং এই ভ্রমণের আদ্যোপান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে মনের ভিতর লালন-পালন করেছিলেন। একটা বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন তাঁর ভিতরও নিহিত ছিল। সদ্য স্বাধীন সাধের পাকিস্তান জন্ম লগ্ন থেকেই তা পূরণে ব্যর্থ হয়। পাকিস্তান নামক সদ্য স্বাধীন দেশে ৫৬ ভাগের বেশি মানুষ পূর্ব পাকিস্তানে নিগৃহীত হচ্ছে, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, নিপীড়ণের শিকার হচ্ছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে নয়া চীনের ঘুরে দাঁড়ানো বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার দালাল চিয়াং কাইশেকের নির্যাতন-নিপীড়নকে পরাভূত করে চীনের জাতীয়তাবাদী নেতা মাও সেতুং এর হাত ধরে নয়া চীনে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, ধনী-গরীবের ভিতর যে সমতা এসেছে, একটা শোষণমুক্ত সমাজ গঠিত হয়েছে; তা বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে আলোড়িত করেছিল।
একটা শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের প্রেরণা হয়তো বঙ্গবন্ধু এখান থেকে পেয়েছিলেন, যার ইঙ্গিত এই গ্রন্থে রয়েছে। মাঝে মাঝে নয়াচীনের নয়া শাসকদের রাষ্ট্রপরিচালনার বিভিন্ন ইতিবাচক দিকের সাথে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর শোষণের তুলনা করে পাকিস্থানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষের উপর যে বিমাতাসুলভ আচরণ করেই চলেছে, তা তুলে ধরেছেন।নয়া চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের ৬৬ পৃষ্ঠায় লেখেন:
“আমি লেখক নই, অনুভব করতে পারি মাত্র, লেখার ভিতর দিয়া প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা খোদা আমাকে দেন নাই।”
বঙ্গবন্ধু নিজেকে লেখক দাবি না করলেও তাঁর রচিত ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থটির প্রাঞ্জল বর্ণনা, জটিল বিষয়বস্তুকে সরলভাবে উপস্থাপন পাঠক-হৃদয়ে ছুঁয়ে গেছে। একজন তরুণ রাজনীতিকের উপলব্ধিতে এসেছে দারুণ সব অভিজ্ঞতার বয়ান এবং নয়া চীন রাষ্ট্রের সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের গল্প। বিপ্লবের পর সমাজে যে পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়, বঙ্গবন্ধু নয়া চীন ভ্রমণের মধ্য দিয়ে তা আত্মস্থ করেছিলেন এবং তার বাস্তব প্রয়োগের স্বপ্নও হয়তো তিনি অন্তরে বপন করেছিলেন, তার ইঙ্গিতও এ গ্রন্থে রয়েছে।
মহান নেতা মাও সেতুং এর নেতৃত্বে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল চিয়াং কাইশেকের পতন হয়। বিপ্লব পরবর্তী সময় নয়াচীনের মনোজগতে আসে এক বিরাট পরিবর্তন। ধনী-গরীব, মহাজন-কৃষক, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে ব্যবধান কমে আসে। কৃষিজমি, কলকারখানা; মালিক-শ্রমিক, মহাজন-কৃষকের হয়ে ওঠে। নয়া চীন মাত্র তিন বছরে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে থাকে।
নয়াচীন সরকার কায়েম হবার পর তারা ‘লাঙল যার, জমি তার’ প্রথা প্রবর্তন করলো। বড় বড় জমিদারের জমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকের মধ্যে বণ্টন করা হল। অনাবাদি খাস জমিও কৃষকের মাঝে চাষের জন্য বণ্টন করে দেয়া হল। যখন কৃষক বুঝতে পারলো, এ জমিতে চাষ করলে কেউ আর ফাঁকি দিতে পারবে না, তখন তারা পুরো উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করলো। শুরু হলো নয়াচীনের নবতর যাত্রা। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের পৃষ্ঠা: ৮৯-৯০ তে লেখেন-
“নয়া চিনে একখণ্ড জমি দেখলাম না, যা অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। রেললাইনের পাশে যে গর্তগুলি পড়ে থাকে সেগুলিতেও ফসল করা হয়েছে। যদি কোন জমি ইচ্ছাকৃতভাবে পড়ে থাকে তাহলে সরকার কঠোর শাস্তি দেয়”।
শুধু আইন করে নয়; জনমত গঠন, মানবীয় ব্যবহার, প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় কঠোর আচরণ, কর্মসংস্থান-বাসস্থান সৃষ্টির মধ্যদিয়ে নয়াচীন ভিক্ষাবৃত্তি, বেকার সমস্যা, ডাকাতি, আফিম নেশামুক্তি, বেশ্যাবৃত্তিকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল। সেজন্য বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন:
“আইন করে কোনো অন্যায় কাজই বন্ধ করা যায় না, অন্যায় বন্ধ করতে হলে চাই সুষ্ঠু সামাজিক কর্মপন্থা, অর্থনৈতিক সংস্কার ও নৈতিক পরিবর্তন।”
মাত্র ৩ বছরের মধ্যে চীন সরকার ও তাদের জনগণ এক হয়ে কাজ করে দেশটিকে বদলে ফেলেছে; যা বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বিশেষ করে চীনের জনগণের রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য, দেশের প্রতি ভালোবাসা দেশপ্রেম- বঙ্গবন্ধুকে মুগ্ধ করেছে। এ বিষয়গুলি বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় তুলে ধরেছেন। গ্রন্থের ৯১ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন:
“সরকার ডাক দিলো- একশত মাইল একটা রাস্তা করতে হবে। তোমাদের যথেষ্ট অসুবিধা হতেছে; সরকারের অত টাকা নাই, তাই তোমাদের নিজেদের কাজ নিজেদেরই করাই উচিত। প্রত্যেকের আসতে হবে, অন্তত দু’দিন কাজ করে দিতে হবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এক মাসের ভেতর সমস্ত রাস্তা করে দিল। এইভাবে নয়াচীনে হাজার হাজার গঠনমূলক কাজ জনসাধারণ করেছে, কারণ জনসাধারণের আস্থা আছে সরকারের ওপরে এবং মনে করে একাজ তাদের নিজেদের।”
চীনের জনগণের চরিত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের ৬৪ পৃষ্ঠায় লেখেন:
“এদেশের লোকের মনে অহংকার নাই। সকলকেই আপন করতে চায়। সকলেই মনে করে ‘রাষ্ট্র আমাদের’-একে গড়ে তুলতে হবে। ”
মাত্র তিন বছরের মধ্যে চীনের শিক্ষা ব্যবস্থায় আসে আমূল পরিবর্তন। সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধুর আগ্রহ ছিল। এজন্য বঙ্গবন্ধু চীন ভ্রমণে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে লিখেছেন:
“আমাদের দেশের মতো কেরানী পয়দা করার শিক্ষাব্যবস্থা আর নাই। কৃষি শিক্ষা, শিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনিক্যাল শিক্ষা দেয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।”
এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু পৃষ্ঠা: ৬০-এ একটা তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে নয়াচীনের ইতিবাচক ভবিষ্যতের কথা ব্যক্ত করেন:
“এক এক দেশে এক এক প্রকারের ‘স্বার্থ সংশ্লিষ্ট শ্রেণি’ (প্রিভিলেজড ক্লাস) আছে- যেমন আমাদের দেশে অর্থশালী জমিদাররা ‘প্রিভিলেজড ক্লাস’, অন্যদেশে শিল্পপতিরা ‘প্রিভিলেজড ক্লাস’; কিন্তু নতুন চীনে দেখলাম শিশুরাই ‘প্রিভিলেজড ক্লাস’। এই ‘প্রিভিলেজড ক্লাস’টা সরকারের নানা সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকে। নয়াচীন সরকারের হুকুম, প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে স্কুলে দিতে হবে, একটা পরিমাণ ঠিক করে দিয়েছে, সেই পরিমাণ খেতে দিতে হবে। পোশাক ঠিক করা আছে, সেইভাবে পোশাক দিতে হবে। যাদের দেবার ক্ষমতা নাই, তাদের সরকারকে জানাতে হবে। সরকার তাদের সাহায্য করবে। এভাবেই নতুন মানুষের একটা জাত গড়ে তুলছে নয়াচীন। ১৫-২০ বৎসর পরে এরা যখন লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে, তখন ভেবে দেখুন নয়াচীন কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে?”
চীনের শান্তি সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ শান্তির সপক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু নিজেও বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের নিজ ভাষায় বক্তব্য প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু নিজেও মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেন। পশ্চিম বঙ্গ থেকে আসা লেখক মনোজ বসুও বাংলায় বক্তৃতা করেন। কিন্তু অনেকে মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, যা বঙ্গবন্ধুর ভাল লাগে নাই। উল্লেখ্য করা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। তারও ২২ বছর আগে তরুণ শেখ মুজিব চীনের শান্তি সম্মেলনে বাংলায় বক্তব্য প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের ৪৩ পৃষ্ঠায় লেখেন:
“বাংলা আমার মাতৃভাষা। মাতৃভাষায় বক্তৃতা করাই উচিত। কারণ পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের কথা দুনিয়ার সকল দেশের লোকই কিছু কিছু জানে। মানিক ভাই, আতাউর রহমান খান ও ইলিয়াস বক্তৃতাটা ঠিক করে দিয়েছিল। দুনিয়ার সকল দেশের লোকই যার যার মাতৃভাষায় বক্তৃতা করে। শুধু আমরাই ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা করে নিজেদের গর্বিত মনে করি।”
নয়াচীন ভ্রমণকালে বঙ্গবন্ধু প্রত্যক্ষ করেছেন, নয়াচীনে নারী-পুরুষ প্রকৃত অর্থেই সমানাধিকার ভোগ করছে। নারী-পুরুষ সমানভাবে দেশের জন্য কাজ করছে, আয়-রোজগার করছে; কেউ কারও উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে না। সমাজ থেকে নারী-পুরুষ সমান সম্মান পাচ্ছে।
তরুণ বয়সেই বঙ্গবন্ধু সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অসাম্প্রদায়িক মানবিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতায় রূপান্তরিত হচ্ছিলেন; এ গ্রন্থ তাঁর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গ্রন্থের ৬৩ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন:
“যাক বাবা, আমেরিকার বিরুদ্ধে সত্যকথা লিখে বিপদে পড়তে চাই না, কারণ আজ আমেরিকা পাকিস্তানের ‘একমাত্র বন্ধু’। এক মুসলিমলীগের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলেই প্রত্যেক বৎসর জেল খাটি। আবার এদের বিরুদ্ধে বলে কি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলবো?”
১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণকালে বঙ্গবন্ধু গভীর দৃষ্টি দিয়ে নয়াচীন পর্যবেক্ষণ করেন। চীন সম্পর্কে কিছু ভবিষ্যৎ বাণী তিনি এ গ্রন্থে দিয়েছিলেন। বিশ্বে বর্তমান চীন রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর সেই ভবিষৎবাণী আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’। কিন্তু লেখক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বড় কীতিত্ব সম্ভবত এখানে যে নিজের অভিজ্ঞতাগুলো তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন সহজ ভাষায়, অতিরঞ্জনের অশ্রয় না নিয়ে। বোধ করি এটা বড় লেখকেরই গুণ।
বইঃ আমার দেখা নয়াচীন লেখকঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশকঃ বাংলা একাডেমি রিভিউঃ মো: রায়হান
শেখ মুজিবুর রহমানের সকল বই পিডিএফ ডাউনলোড করুন