বইঃ কোয়েলের কাছে
লেখকঃ বুদ্ধদেব গুহ
আমি ঘরকুনো মানুষ। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে বিছানাকুনো (এই শব্দটা কি আসলে আছে?) মানুষ! একান্ত প্রয়োজন না থাকলে ঘর থেকে তো বের-ই হয় না, বিছানা থেকেও নামি না!
কিন্তু এই বিছানাকুনো (!) মানুষটাকেও যে জিনিসটা খুব টানে তা হলো পাহাড়। পাহাড় আমার কাছে বিশালতার প্রতীক। পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়ালে একদিকে যেমন নিজের ক্ষুদ্রতাকে বোঝা যায় তেমনি অন্যদিকে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে পুরো দিগন্তকে দেখা যায়, মনে হয় আমিই যেন নিচে থাকা সমস্ত মানুষের রাজা!
পাহাড়ের প্রতি আমার এই মুগ্ধতাকে যেসব বই বাড়িয়ে তোলে, সেই লিস্টে নতুন সংযোজন ‘ কোয়েলের কাছে ‘।
আরও পড়ুনঃ বাবলি উপন্যাস রিভিউ PDF বুদ্ধদেব গুহ
কাহিনী সংক্ষেপঃ
কাহিনীটা শুরু হয় কথক ‘লালসাহেব’ বা ‘মাখনবাবু’ কে নিয়ে। কলকাতার শহুরে ছেলে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমায় পালামৌর রুয়ান্ডিতে। শুরুতে যা হওয়ার ছিল তাই হলো, বন-পাহাড়ের নির্জনতায় নিজেকে মানিয়ে নিতে ভীষণ সমস্যায় পড়লে সে। কিন্তু অচিরেই সে সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে শুরু করল যখন তার সাথে পরিচয় হলো এলাকার রেঞ্জার বোহেমিয়ান যুবক যশোয়ন্তের সাথে।
বন-জঙ্গলকে নিবিড়ভাবে দেখা শিখতে লাগল সে, শিকারের খুটিনাটি বুঝতে শুরু করল, বনের জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করল। একে একে তার সাথে পরিচয় হলো ব্রজেন ঘোষ, তার পত্নী সুনিতা বউদি, বিদুষী মারিয়ানার সাথে, নিষ্ঠুর জগদীশ পান্ডের সাথে।
একদিকে যেমন নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিল লালসাহেব অন্যদিকে তেমনি ধীরে ধীরে আবিষ্কার করছিল বন ও বনের আশেপাশের মানুষের জীবনের নানা বাঁক। মারিয়ানার জীবনের ধূসর অধ্যায়, সুনিতা বউদির অতৃপ্তি, যশোয়ন্তের আক্ষেপ, জগদীশ পান্ডের ধূর্তামি।
একবছরের চুক্তিতে রুয়ান্ডিতে আসা লালসাহেব অচিরেই নিজেকে আবিষ্কার করল এমন এক জালের মধ্যে যেখানে বন-পাহাড় আর আশেপাশের মানুষ তাকে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে যা থেকে মুক্ত হওয়া অসম্ভব।
আরও পড়ুনঃ ঋজুদা সমগ্র PDF রিভিউ বুদ্ধদেব গুহ
প্রতিক্রিয়াঃ
” কোয়েলের কাছে ” বইটার যে দিকটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো লেখকের ডিটেইলিং। ঋতু বদল, উৎসব, শিকার, পাত্র-পাত্রীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ইত্যাদি লেখক এত সুন্দরভাবে, সবিস্তারে ফুটিয়ে তুলেছেন যে বিছানায় শুয়ে শুয়েও আমি যেন পালামৌতে পৌঁছে গিয়েছিলাম!
লেখকের নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে বলেই হয়তো লেখক এত সুচারুভাবে ঋতু পরিবর্তনকে বর্ণনা করতে পেরেছেন আর সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে লেখক যেভাবে লালসাহেবের পরিবর্তনকে এঁকেছেন সেটাও অনবদ্য।
ভেজ্জানাচ, দুর্গাপূজা, সারহুর প্রভৃতি উৎসবের যে চিত্রায়ণ করেছেন, সেটাও খুব ভালো ছিল। আর শিকারের কথা আর কি বলব, ক্রমান্বয়ে লালসাহেবের শিকারে পারদর্শিতা অর্জনের সাথে সাথে আমিও যেন শিকারকে ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখতে শিখছিলাম ; প্রথমদিকে ভয়ে ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে শিকারকে দেখা থেকে শেষদিকে শিকারের চোখে চোখ রেখে গুলি করা পর্যন্ত।
আরও পড়ুনঃ অভিলাষ বুদ্ধদেব গুহ PDF রিভিউ
বন-জঙ্গল, পাহাড় আর শিকার ছাড়াও বইটাতে আর যে দুইটা বিষয় উঠে এসেছে তা হলো প্রেম এবং প্রতিশোধ। মারিয়ানা ও সুগত, মারিয়ানা ও লালসাহেব, যশোয়ন্ত ও সুনিতা বউদি, যশোয়ন্ত ও লালতি – প্রত্যেকটা প্রেমকে লেখক ভিন্ ভিন্ন আঙ্গিকে ও ভিন্ন ভিন্ন রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন।
কেউ এখানে শুধু শরীরকেই চায়, কেউ শরীরের প্রেমকে ঘৃণা করে আবার কেউ কেউ একসাথে চায় দুইটাই। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রতিটা প্রেম হয়ে উঠেছে অনন্য। অবৈধ শিকার আর ভালোবাসার মানুষের অধিকার নিয়ে যশোয়ন্ত আর জগদীশ পান্ডের লড়াই এবং শেয়ানে-শেয়ানে লড়াইও ছিল ভীষণ উপভোগ্য।
আরও পড়ুনঃ হাজারদুয়ারী বুদ্ধদেব গুহ PDF রিভিউ
মোটের উপর বলতে গেলে ” কোয়েলের কাছে ” বইটা আমাকে মুগ্ধ করেছে, ঘরে বসে বন-পাহাড়ে ঘুরিয়ে এনেছে আর সব ছেড়ে ছুঁড়ে পাহাড়ে একটা ছোট্ট ঘর বাঁধার স্বপ্নটাকে আরও দৃঢ় করেছে।
লিখেছেনঃ Mohammad Shariful Islam
বইঃ কোয়েলের কাছে [ Download PDF ]
লেখকঃ বুদ্ধদেব গুহ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বুদ্ধদেব গুহ রচনা সমগ্র পিডিএফ ডাউনলোড করুন