পথের দাবী উপন্যাসের শুরু অপূর্বের রেঙ্গুন গমন থেকে। সেখানে থেকে পরিচয় ঘটে ভারতী নামের এক খ্রিষ্টান মেয়ের সাথে। যদিও ব্রাক্ষণপুত্র হওয়ায় ভারতীকে এড়িয়ে যেত অপূর্ব। কিন্তু নানা ঘটন-অঘটনের বেড়াজালে পড়ে একে অপরকে পছন্দ করে ফেলে। এতটুকু পর্যন্ত পড়ে যেকোন পাঠকে মনে হতে পারে নায়ক অপূর্ব, নায়িকা ভারতী। মনে হতে পারে, এ এক প্রেমের উপাখ্যান। উপন্যাসের মোড় ঘুরে যায় দৃশ্যপটে সব্যাসাচীর আগমনে। একজন বিপ্লবী। ভারতের স্বাধীনতাই যার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাঁরই গড়ে তোলা সংগঠন “পথের দাবী”।
উপন্যাস জুড়েই আছে পথের দাবী সংগঠনের ও তার সদস্যদের কাজকর্ম। সব্যসাচীর আশ্চর্য জীবন, ভারতীর সরলতা, অপূর্বর ভীরুতা, সুমিত্রার কঠোরতা উপন্যাসটিকে নিয়ে গিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।
উপন্যাসটির প্রকাশকাল ১৯২৬ সাল। ব্রিটিশ শাসনামল। তাদের শাসনামলে তাদেরই বিরুদ্ধে উপন্যাস লিখার সাহস দেখিয়েছেন লেখক। সেই সময় নিষিদ্ধ করাও হয়েছিল বই। অভিযোগ উঠে রাষ্ট্রদ্রোহের। তবে পাঠকদের কাছে ঠিকই পৌছে গিয়েছিল বই।
উপন্যাসটিতে শরৎচন্দ্রের আধুনিক মনোভাবের পরিচয় মেলে। তিনি নিজে ব্রাহ্মণ হয়েও উপন্যাসটিতে ব্রাহ্মণদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আমার পড়া সেরা একটি বই। সবাই পড়ে দেখতে পারেন।
বলে রাখা ভাল, নতুন পাঠকদের জন্য এই বই উপযুক্ত না। কিছুটা পড়ে হয়তো রেখে দিতে বাধ্য হবে। তার কারণ- কাঠিন্য। কঠিন শব্দের কারণে না, কঠিন বাক্যের কারণে। এমন অসংখ্য বাক্য আছে যা বোঝার জন্য কয়েকবার পড়তে হয়েছে। উপন্যাসের শেষের দিকে লেখক যুক্তিতর্কের আসর বসিয়েছেন। যাদের যুক্তিতর্ক ভাল লাগেনা, তাদের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। তবে আমি মনে করি, এটা প্রত্যেক পাঠকের জন্য আবশ্যক একটি উপন্যাস।
নোটলাইন- সে সমুদ্র। আছেই ত তাহাতে ভয়, আছেই ত তাহাতে উত্তাল তরঙ্গ, আছেই ত তাহাতে কুমির হাঙ্গর! তরী সেইখানেই ডোবে, -তবু সেই খানেই আছে জগতের প্রাণ, তারই মধ্যে আছে সকল সম্পদ, সকল সার্থকতা। নিরাপদ পুকুর লইয়া কেবলমাত্র প্রাণধারণ করাটুকুই চলে, বাঁচা চলেনা।
লিখেছেনঃ শাহেদ মোস্তফা
বইঃ পথের দাবী [ Download PDF ]
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছোট গল্প সমগ্র