Skip to content
Home » জ্যোৎস্না বিলাস – নুসরাত জাহান

জ্যোৎস্না বিলাস – নুসরাত জাহান

    নুসরাত-জাহান-জ্যোৎস্না-বিলাস-nusrat-jahan-jotsna-bilash-min
    Redirect Ads

    হুমায়ূন আহমেদের জ্যোৎস্না বিলাস বইটা দেনতো দেখি।

    দোকানী কিছুটা দ্বিধায় পড়ে বলল- “এই নামে কি কোনো বই আছে?”

    Download

    হুমায়ূন আহমেদের যেহেতু বৃষ্টি বিলাস, সমুদ্র বিলাস ইত্যাদি কিছু বই আছে তাই উত্তম ধরেই নিয়েছিল জ্যোৎস্না বিলাসও থাকবে। কিন্তু এটা ছিল তার নিছক কল্পনা। কল্পনার রাজ্যে তো সবাই স্বাধীন, মুক্ত। বাধা দেওয়ার কেউ নেই।

    উত্তমের সবচেয়ে প্রিয় মেয়েটি হলো ইন্দ্রানী। ইন্দ্রানির আসল নাম সুচিত্রা। উত্তম তাকে আদর করে সুচি বলে ডাকে। মন খারাপ হলে তার ছবি দেখে মন ভালো করে তারপর ঘুমিয়ে পড়ে।

    দীপ্তিময় চোখ, প্রলুব্ধকর হাসি আর আকর্ষণীয় মুখমন্ডল সুচির। সেই চোখ যখন উত্তমের মুখের উপর স্থাপন করে চেয়ে থাকে, উত্তম নিজ গুনে মুখ সরিয়ে নেয়। যদিও সেটা মনের বিরুদ্ধে।

    সে প্রকৃতি পছন্দ করে। শান্ত শীতল হাওয়া পছন্দ করে। সুচির সজল নয়ন পছন্দ করে আর তার কপলের ক্ষুদ্র তিলটিও। কিন্তু ভিরু সে। মুখ ফুটে কখনোই কিচ্ছু বলতেই পারে না। মনের মাঝেই উত্থান পতন ঘটায় হাজারো শব্দের।

    Download

    আজ পূর্নিমা রাত। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত চারপাশ। জ্যোৎস্না যে উপছে পড়েছে গ্রামের শীতল পরিবেশে, গাছের পাতায় পাতায়। নরম মাটিতে।

    সুচির কপোলের তিলটাও উত্তম দেখতে পাচ্ছে জোছনার আলোয়। আজ সে সাদা শাড়ি পড়েছে।কপালে ছোটো কালো টিপ। চুল গুলো শীতল বাতাসে হালকা উড়ছে। হাতে রেশমি সাদা কালো চুড়ি। সব মিলে তাকে মনে হচ্ছে কোনো এক পরী ভুল করে পৃথিবীতে এসে পরেছে। উত্তম আজ কী বলবে তাকে, খুজেই পাচ্ছে না। শুধু দেখেই চলেছে চুপটি করে।

    নাহ, সে কিছু বলবে না। কিই বা বলার আছে তার। এই সাজ যে তারই সাজানো। হুম সে নিজেই তার কল্পনার রাজ্যে সাজিয়েছে এই সুন্দরতম সুচিকে। জ্যোৎস্না রাতে মেঠোপথের ধারে বসে কল্পনা করা ছাড়া যে তার আর কিছুই করার ছিলো না।

    সে একা একা হাঁটে নরম দূর্বাঘাসের উপর দিয়ে। পূর্নিমার চাঁদ কিভাবে পুকুরের পানির তরঙ্গের উপর খেলা করে সে তাই দেখে বসে থেকে। মাঝে মাঝে উদাস হয়ে যায়। হারিয়ে যায় আবার অচেনা অজানা সেই কল্পনার রাজ্যে। সে ভাবে এই জ্যোৎস্না রাতে কী কী করা যায়??

    Download

    মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি দেখা যায়। ঝি ঝি পোকার চিৎকার শোনা যায়। বাতাসে গাছের ডালের আড়ালে চাঁদটার লুকোচুরি খেলা দেখা যায়। চাঁদের মাঝে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চড়কা কাটা বুড়ী আসলেই আছে কিনা তা দেখার চেষ্টা করা যায়। কবিতা বলা যায়। গান বলা যায়।

    হঠাৎ মনের অজান্তেই সে গেয়ে উঠে _
    নিশি রাত, বাঁকা চাঁদ, আকাশে
    চুপি চুপি, বাঁশি বাজে, বাতাসে।।
    ভাঙ্গা ঘরে দুদিনেরি খেলা ঘর
    হোক ভাঙ্গা তবু এলো জোছনা
    ফুলে ফুলে……

    জ্যোৎস্না-বিলাস

    তারপর রুমের সব বন্ধুরা তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। চুপচাপ ছেলেটা গান বলছে সবার সামনে!!! উত্তম বুঝতে পারল সে কল্পনার রাজ্যে বুদ হয়ে বাস্তবে তার প্রতিফলন করছে। সে মনে মনে লজ্জা পেল।তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেল। ইট পাথরে মোড়া এই শহরে সে এতো সুন্দর শীতল ছায়া মাখা পরিবেশ কোথায় পাবে? কোথায় পাবে সে জোছনা মাখা রাত? কোথায় পাবে সেই পুকুর পাড়ে বসে জ্যোৎস্না বিলাসের সুযোগ?

    সেতো এখন বাস্তব জীবনের স্বপ্ন পূরণের জন্য মরিয়া। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সে। চারপাশ প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত হয়েছে। পুরাতন যুগের চাঁদ দেখা আনস্মার্ট ছেলেতো তার হওয়া যাবে না। হলের রিডিং রুম এ বসে অনেক রাত কাটাতে হবে। জোছনা গায়ে মাখার সময় কই!

    Download

    এই ঢাকা শহরেও চাঁদ ওঠে, পূর্নিমার আলো ছড়ায়। কিন্তু তার আলো কে দেখবে? চারিদিকে তো অনেক আলো। প্রতিদিনই তো পূর্নিমার চেয়ে বেশি আলো। বিশেষ একদিন সময় নষ্ট করে চাঁদ দেখার কি আছে? তবুও চাঁদটা যে নিছক মাঝে মাঝে অপমানিত হওয়ার জন্য আকাশের কোণে উকি দেয়। কেউ দেখুক আর না দেখুক তাকে যে জোছনা ছড়াতেই হবে। উত্তমের কল্পনার সেই দিনটি যদি আসে কখনো! তখন তো তার প্রয়োজন হবে।

    উত্তম ভাবতে থাকে…
    এখন আপাতত জীবনের চাহিদা, স্বপ্ন গুলো পূরণ করা যাক। আত্মার তৃপ্তির জন্য জ্যোৎস্না বিলাস, সে হবে পরে অন্য কোনো এক ভরা পূর্নিমায়।

    জ্যোৎস্না বিলাস
    মোছাঃ নুসরাত জাহান
    বাংলা বিভাগ
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

    বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বই ধার করতে সদস্য হোন

    বইয়ের ফেরিওয়ালায় লিখতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন

    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন