বইঃ Animal Farm (এনিমেল ফার্ম )
লেখকঃ জর্জ অরওয়েল
প্রকাশঃ অগাস্ট ১৯৪৫
এনিমেল ফার্ম গ্রন্থটি একটি রাজনৈতিক রূপক উপন্যাস। যা রচিত হয় রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও বিপ্লব পরবর্তী সমাজ ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে। বিপ্লব পরবর্তী স্ট্যালিনের কার্যপদ্ধতি, প্রশাসন, তৎকালিন সামাজিক অবস্থা, পশু খামারের প্রতীক দ্বারা উপস্থাপন করেছেন।স্টালিনের একনায়কতন্ত্র উপন্যাসে নেপোলিয়ানের মধ্যে ফুটে উঠেছে।
“ম্যানর ফার্মে” মেজর নামক এক বৃদ্ধ শুকর স্বপ্নে দেখেন, পশুদের জীবনকাল খুবই অল্প এবং দুঃখ কষ্টে ভরা। মানুষ তাদের হাড়ভাঙা খাটুনি খাটায় কিন্তু খাবার দেয় খুবই কম। মানুষ তাদের কষ্টের ফসল পুরোটাই ভোগ করে। সুতরাং পশুদের একমাত্র শত্রু মানুষ। খামার থেকে যদি মানুষকে সরিয়ে দিয়ে পশুরা এটার দায়িত্ব গ্রহন করতে পারে তাহলে পশুদের আর কোন দুঃখ কষ্ট থাকবে না। নিজেদের সম্পদ নিজেরাই ভোগ করতে পারবে। অতএব পশুদের প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা।
[উপন্যাসে বর্ণিত এই বৃদ্ধ মেজর (শুকর) হল সমাজতন্ত্রের জনক কার্ল মার্কস। যিনি প্রথম সমাজতন্ত্রের কথা বলেন এবং সাধারণ মানুষের মুক্তির কথা বলেন।]
আরও পড়ুনঃ নাইনটিন এইটি ফোর | ১৯৮৪ জর্জ অরওয়েল
উপন্যাসে দেখানো হয়েছে “ম্যানর ফার্ম” নামে খামার থেকে কিভাবে পশু খামারের মালিককে তাড়িয়ে পশুরা নিজেরাই সেই খামার দখল করে। খামার দখলের পর পশুদের রাজত্ব কায়েম হয়। পশুরা নিজেদের জন্য ৭ টি নীতিমালা তৈরি করে।
- ১/ “দু পেয়েরা শত্রু চার পেয়েরা বন্ধু।
- ২/ কোন পশু অন্য পশুকে হত্যা করবে না।
- ৩/ যারা ৪ পায়ে চলে ও পাখা আছে তারা বন্ধু
- ৪/ কোন পশু কাপড় পরিধান করবে না।
- ৫/ কোন পশু বিছানায় ঘুমাতে পারবে না।
- ৬/ কোন পশু মদ পান করবে না।
- ৭/ সব পশুই সমান
পশুরা নেপোলিয়ন ও স্নোবল নামক দুটি শুকরের নেতৃত্বে খামার পরিচালনা করতে থাকে।পশুদের খামার দখলের খবর দ্রুত বাইরে ছড়িয়ে পরলে অন্যন্য পশুখামারেও বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং খামার মালিকরা তখন ভীত হয়ে পড়ে। খামার মালিকদের সাথে পশুদের ২ টা যুদ্ধ হয় “গোয়ালঘরের যুদ্ধ ” ও “হাওয়াকলের যুদ্ধ “। দুটো যুদ্ধেই পশুরা জয়লাভ করে।
পশুদের দিন খুব ভাল যাচ্ছে এখন তাদের আর পরাধীন হয়ে কাজ করতে হয় না। সবাই সমান। কিন্তু কিছুদিনের মধ্য নেপলিয়নের নেতৃত্ব শুকরদের আধিপত্য বেড়ে যায়। তারা কোন কাজ না করে আরাম আয়েশে খায় দায়, ঘুমায়। সবপশুদের থেকে শুকররা বেশী সুযোগ সুবিধা নেয়া শুরু করে।ভাল খাবার, বিছানা সবই শুকরদের দখলে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স বাংলা – কিয়েগো হিগাশিনো
বিপ্লবের পরবর্তী সময় প্রতি রবিবার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সভা বসত। সবার মতামত নিয়ে শুকরদের নেতৃত্বে খামার পরিচালিত হত। কিন্তু একটা সময় এসে নেপোলিয়ন (শুকর) সভা আয়োজন বাদ দিয়ে নিজেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করে। অন্যান্য পশুরা তার মতের বিরুদ্ধে সামনাসামনি কখনোই কথা বলত না। ধীরে ধীরে নীতিমালার পরিবর্তন হওয়া শুরু করে।
নীতিমালা ছিল পশুরা কেউ মানুষের তৈরি কোন কিছু ব্যবহার করবে না কিন্তু নেপোলিয়ন খামার মালিকের বিছানা, রান্নাঘর, বিলাসবহুল বাসনপত্র, ব্যবহার শুরু করে। এবং সাধারন পশুদের এটা বোঝায় যে, শুকররা সব পশুদের ভালমন্দ দেখভাল করে, পরিকল্পনা করে, খামার পরিচালনা করে সেহেতু তাদের একটু ভাল ভাল খাবার ও আরাম আয়েশের দরকার আছে।
শেষ পর্যন্ত পশুদের নেতা নেপোলিয়ন সভ্য জগতের মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে।পশুখামারে একনায়কতন্ত্র স্থাপিত হয়। পশুরা অসহায়ের মত সে সব প্রত্যক্ষ করে আর উদয়াস্ত খাটে।
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের সেরা সাতটি বই রিভিউ পিডিএফ
উপন্যাসটিকে একসময় নাম দেওয়া হয়েছিলো ‘A Fairy Story’, মনে হচ্ছে “এনিমেল ফার্ম” সবকিছুর চেয়েও বেশকিছু! মানুষের দাসত্ববন্ধনের উৎপীড়নে অসুস্থ এবং ক্লান্ত হয়ে Manor Farm এর জীবজন্তুগুলো বিদ্রোহ করে বসে! নীতির বাইরে থেকেও যেন দাসত্বকে আঁকড়ে ধরে রাখা হয়েছিলো তখনকার সমাজব্যবস্থায়।
এক নীতিতে পরিচালিত হয়েও ‘সকল পশু সমান’ দাসত্ববৃত্তি বেশ জাঁকড়ে ধরেছিলো তখনকার ঘুঁণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে। তবে, সকল সমাপ্তির পূর্বেও ‘সকল পশু সমান’ এর অর্থবহতার বিস্তর ফারাক দেখা যায়।
Orwell এর সুচারূভাবে ধারায় লিখিত এই সাধারণ গল্পটি তৎকালীন রাশিয়ান সমাজের বিদ্রোহের বিক্ষোভের চেহারাকে উন্মুক্ত করে দেয়, যেখানে এনিমেল ফার্ম একটি রূপক বিশেষ। কিভাবে লোকেরা নিজেদের স্বাধীনতা ও অধিকারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়াই করেছিলো রূপকের সাহায্যে এখানে সুস্পষ্ট করা হয়েছে।
লিখেছেনঃ Shafiqul Islam
বইঃ এনিমেল ফার্ম [ Download PDF ]
লেখকঃ জর্জ অরওয়েল
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্বের সেরা অনুবাদ বই গুলো ডাউনলোড করুন