বইয়ের নামঃ সারেং বৌ
লেখকঃ শহীদুল্লাহ কায়সার
ধরনঃ উপন্যাস
প্রকাশকালঃ ১৯৬২
প্রকাশকঃ নওরোজ সাহিত্য সম্ভার
মূল্যঃ ১২০/-
“ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া……” এই গানের লাইন শুনলেই এক গ্রামের বধুর স্বপ্নজোড়া মুখ ও বিরহে কাতর এক সারেং এর মুখ ভেসে উঠে। “সারেং বৌ” সিনেমাটির সাথে কম বেশি অনেকেই পরিচিত। হ্যাঁ এই উপন্যাস অবলম্বনেই সিনেমাটি তৈরি হয়েছে। ১৯৬২ সালে এই উপন্যাসের জন্য লেখক আদমজি ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।
শুরুতেই সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার সম্পর্কে কিছু কথায় আসি। লেখক ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর নিজ বাসা থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর কর্তৃক অপহৃত হন। তার আরেকটি পরিচয় তিনি প্রখ্যাত লেখক, চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সহোদর ভাই। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস “সংশপ্তক “।
আরও পড়ুনঃ শহীদুল্লাহ কায়সারের জীবনী | What Happened to Him
“সারেং বৌ” বইটিতে সমুদ্রতীরবর্তী গ্রামীণ জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে সংগ্রামী মানুষের জীবনের দুঃখ, কষ্ট সব ছাপিয়ে দাম্পত্যজীবনে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বস্ততা প্রাধান্য পেয়েছে। গ্রামের বধু নবিতুন যার স্বামী কদম সারেং ও মেয়ে আককি কে নিয়ে তার সংসার। জীবিকার তাগিদে কদম সারেং বছরের পর বছর জাহাজে কাটিয়ে দেয়। সমুদ্র বন্দরে জাহাজের লোকেদের জন্য রয়েছে একাকীত্ব ঘুচানোর, জৈবিক তৃষ্ণা মেটানোর লোভনীয় সুযোগ। যা থেকে কদম সারেং নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেস্টা করে প্রতিনিয়ত। প্রতি তিন মাস অন্তর সারেং নবিতুনকে টাকা ও চিঠি পাঠায়।
হঠাৎ সারেং এর টাকা ও চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়! আর এদিকে যুবতী নবিতুন মেয়েকে নিয়ে অভাব অনটনে জর্জরিত অবস্থায় দিন কাটাতে থাকে। তার ওপর পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি।প্রতিবেশী সগির মা প্রতিনিয়ত প্রভাবশালী লুন্দর শেখের প্রস্তাব মেনে নিতে প্রলুব্ধ করতে থাকে তাকে। সব মিলিয়ে সে টিকে থাকার চেস্টা করে।
আরও পড়ুনঃ জহির রায়হানকে নিখোঁজ করলো কারা?
সবকিছুর মাঝেও নবিতুন স্বামীর সাথে কাটানো মুহুর্তগুলোর সুখস্মৃতি মনে করে মনে জোর পায়, আর তার স্বামী ফিরে আসবে সেই বিশ্বাসে দিন কাটায়। এভাবেই চলতে থাকে নবিতুন -কদম সারেং এর জীবন গাঁথা। গল্পের একেবারে শেষে দেখা যায় নবিতুন ধর্মীয় এমন এক বিধি লংঘন করে যা গ্রামের, সাধারণ যেকোন নারীর পক্ষে কল্পনাতীত!
কেনই বা কদম সারেং পরিবার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে? সেও কি তবে অন্যদের মত কালের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছিল? নবিতুন কি পারবে লোভাতুর পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি উপেক্ষা করে টিকে থাকতে? কদম সারেং কি শেষ অবদি ফিরে এসেছিল? কি এমন ঘটেছিল যার কারণে নবিতুনকে ধর্মীয় বিধি লংঘনের মত কাজ করতে হলো? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
উপলব্ধিঃ
বইটির যে অংশটুকু আমাকে সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে তা হলো সমাজে নারীদের অবস্থান। আদিকাল থেকে এ অবদি পুরুষ শাষিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী খুব একটা পাল্টায়নি। একজন একাকী নারীর পক্ষে হোক বিবাহিত অথবা অবিবাহিত পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি, সমাজের নানা কুকথা, কুমন্ত্রণা ইত্যাদির মাঝে টিকে থাকা দুঢ়হ। নিজের সম্মান বাঁচিয়ে নিরাপদে টিকে থাকতে ঘরে বাইরে তাকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়।
আরেকটা বিষয় দাম্পত্য জীবনে বিশ্বস্ত থাকার বিষয়টি। চাইলেই যেখানে সুখ সাচ্ছ্যন্দের জীবন বেছে নেওয়া যায়, মনের দেহের দুই তৃষ্ণায় মেটানো যায়, সেখানে যোজন যোজন দুরে থেকেও দুটি মানুষ নিজেদের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার চেস্টা করছে! যে কোন সম্পর্কে একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার গুরুত্ব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গল্পটিতে।
সমুদ্রউপকূলবর্তী মানুষের জীবন সংগ্রাম, গ্রামীণ জীবনের বর্ণনা, সামজিক প্রেক্ষাপট, বিরহ ভালোবাসা সব মিলিয়ে বইটি ভালো লেগেছে। বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে সিনেমার চিত্রনাট্যে চিত্রনাট্যকারকে মনে হয় খুব বেশি ঘষা মাজা করতে হয়নি এমন নিখুঁতভাবে উপন্যাসে সবকিছু বর্ণিত হয়েছে।
লিখেছেনঃ Sabrina Irin Swati
বইঃ সারেং বৌ [ Download PDF ]
লেখকঃ শহীদুল্লাহ কায়সার
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
শহীদুল্লাহ কায়সারের বইসমূহ ডাউনলোড করুন