“সত্যের সন্ধান” বইটি সম্পর্কে জানার পূর্বে লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের ব্যাক্তিজীবনে একটু চোখ বোলানো যাক। ১৯৩২ সালে আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা ঘটে, যার মাধ্যমে তাঁর চেতনার উন্মেষ ঘটে, বোধ বিকশিত হবার সুযোগ পায়; জ্ঞানলোকের পথ উন্মুক্ত হয়, মনের ভেজানো অর্গল যায় খুলে। বলা যায়, একটি মাত্র ঘটনাই আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
১৯৩২ সালে তাঁর মায়ের মৃত্যু ঘটলে তিনি জীবনের সবচেয়ে আপনজনের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাঁর মৃত মায়ের ছবি তুলে রাখতে চাইলেন। গ্রামের লোক তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস অনুযায়ী এই ছবি তোলার প্রতিবাদস্বরূপ তাঁর মায়ের জানাজা বর্জন করে। এই সময় আরজ আলী মাতুব্বর সুহৃদ কয়েকজনকে নিয়ে জানাজা সম্পন্ন করেন।
আরজ আলী মাতুব্বরের অনুভূতিপ্রবণ মনে এই ঘটনা নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং তাঁর মনে বিভিন্ন প্রশ্নের উদয় হয়। এই ঘটনার পর থেকে আরজ আলী মাতুব্বরের বোধের যে উন্মোচন ঘটে, তা ক্রমশ সুসংহত হতে থাকে এবং মুক্তবুদ্ধিচর্চায় মনোনিবেশ করেন তিনি।
তাঁর পুরো জীবনীটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
চলে আসি “সত্যের সন্ধান” বইয়ে। বইটি মূলত কতগুলো এলোমেলো প্রশ্নকে শ্রেণীবিভাগে প্রকাশ। যেটা সম্পর্কে লেখক নিজেই বলেছেন-
“ধর্মজগতে কতগুলো নীতি, প্রথা, সংস্কার ইত্যাদি এবং ঘটনার বিবরণ আছে, যাহা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নহে এবং ওগুলি দর্শন ও বিজ্ঞানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নহে। এমনকি অনেকক্ষেত্রে বিপরীতও বটে। ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান এই তিনটি মতবাদের সমন্বয় সাধনের উদ্দেশে চিন্তা করিতে যাইয়া আমার মনে কতগুলি প্রশ্নের উদয় হইয়াছে এবং হইতেছে।”
“সত্যের সন্ধান” বইটিতে প্রথমেই প্রশ্ন করা হয়েছে সত্য কি? একটি ঘটনার কি একই সাথে দুইটি সত্য থাকতে পারে? সত্যের রূপ কি? সত্যতা বিচারের মাপকাঠি কি? সত্যতা প্রমানের উপায়ই বা কি? তারপর বিভিন্ন ধর্মের মতানৈক্যের বিষয়ে আলোচনা করেছেন লেখক আরজ আলী মাতুব্বর।
তাঁর মতে, সাধারণত আমরা যাকে ধর্ম বলি সেটা হচ্ছে কল্পিত ধর্ম। বিশ্বমানবের স্বভাবধর্ম হইল সুখে-শান্তিতে বাঁচিয়া থাকা এবং এইখানে প্রতিটি মানব কোন বিরোধ ছাড়াই তাদের নিজের ধর্ম পালন করতেছে। গোলমাল হচ্ছে কল্পিত ধর্ম পালনের মধ্যে। কতগুলো ধর্মকে নিয়ে তুলনামূলক আলোচনার সাথে কতগুলো প্রশ্ন তুলে ধরেছেন বইটিতে। আত্মা, ঈশ্বর, পরকাল, ধর্ম ও প্রকৃতি বিষয়ক প্রশ্নের মাধ্যমে বইটিকে শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে।
আধুনিককালে মানুষ কুসংস্কার মুক্ত হতে চায়, চায় সত্যের সন্ধান। কোনরকম গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রত্যেক ধর্মকে যথাসম্ভব কুসংস্কারমুক্ত করা উচিত। কুসংস্কার ত্যাগ করার অর্থ ধর্মকে ত্যাগ করা নহে এরকমটাই বইটির উপসংহার।
বইঃ সত্যের সন্ধান [ Download PDF ]
লেখকঃ আরজ আলী মাতুব্বর
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার