সঙ্গীত ও সাংবাদিকতায় তাঁর প্রতিভা আর বেহিসাবী জীবন নিয়ে সঞ্জীব চৌধুরী প্রায় কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন অল্প দিনের মধ্যেই। একসময় ভোরের কাগজের ফিচার বিভাগে ইতস্তত ছুটে বেড়ানো মানুষটিকে দেখলে আনন্দবাজার অফিস দাপিয়ে বেড়ানো শক্তি চট্টোপাধ্যায় এর কথা মনে পড়ত অনেকেরই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন গণিত বিভাগে; অথচ কদিন পরেই চলে এলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। ওখান থেকেই অনার্স, মাস্টার্স।
অসম্ভব প্রাণচঞ্চল ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে কিছুটা মুখচোরাও। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করলেও গানের জগতে আত্মপ্রকাশের আগ পর্যন্ত তার নাম তেমনটা প্রচার পায়নি। আত্মপরিচয়বিমুখ মানুষটি চিরকাল সভা-সমাবেশ এড়িয়েই চলেছেন। অথচ আড্ডায় তিনিই ছিলেন মধ্যমণি। আর সে আড্ডায় অপরিহার্য ছিল তার গান। অফিসকক্ষেই টেবিলে তবলার বোল ফুটিয়ে একের পর এক গান গেয়ে যেতেন তিনি। গানই ছিল তাঁর প্রাণ।
চাইলে আশির দশকেই অডিওবাজারে আসন গেড়ে বসতে পারতেন সঞ্জীব। চাননি। সংশয়, নির্লিপ্ততা আর অলসতা হয়তো ছিল মূল কারণ। আশেপাশের অনেকের ‘ঠেলাধাক্কার’ পর ‘৯০ এর দশকের মাঝামাঝি বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে মিলে বের করলেন তার প্রথম অ্যালবাম ‘আহ্’। দুজনে মিলে তারা গঠন করলেন ‘দলছুট’। সঙ্গে ছিলেন চারুকলার আরো এক শিল্পী। ‘দলছুট’ গানের দল গড়ে সঙ্গীতে শব্দ আর সুরের এক নতুন রুচির খোঁজ করছিলেন এই জাতশিল্পী।
গানের জগতে ঢুকে তাঁর কবিতার চর্চা কমে গিয়েছিলো সম্ভবত তার কাব্যধর্মী গানগুলোই এই অভাব অনেকখানি পূরণ করেছিল।
একসময় বেশ কিছু ছোট গল্প লিখেছিলেন তিনি। বিভিন্ন ছোট কাগজে ছাপা হয়েছে সেসব নিরীক্ষাধর্মী গল্প।
তাঁর ফিচার তো ফিচার ই! শুধু লেখেননি, লিখিয়েছেন, শিখিয়েছেন। এদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে আছেন বিখ্যাত সাংবাদিক যাদের হাতেখড়ি হয়েছে সঞ্জীব চৌধুরীর কাছে। রীতিমতো হাতে ধরে শিখিয়েছেন তিনি কীভাবে ছোট বাক্যে ফিচার লিখতে হবে, কীভাবে শব্দগঠন করতে হবে, কীভাবে সাক্ষাৎকার নিতে হবে ইত্যাদি।
তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর গদ্যের দেখা মিলে রাশপ্রিন্ট গ্রন্থে। সত্তরের দশকের অকালপ্রয়াত লেখক, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী খান মোহাম্মদ ফারাবীর লেখা কয়েকটা লাইন প্রায় ই আবৃত্তি করতেন সঞ্জীব চৌধুরী।
“আমি তো তাদেরই জন্য,
সূর্যের দিকে চেয়ে থাকবার অভ্যাসে যারা বন্য!
আমি তো তোমারই জন্য,
কপাল রাঙানো যে মেয়ের টিপ রক্তের ছোপে ধন্য!”
আজ ২৫ ডিসেম্বর কিংবদন্তি সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মবার্ষিকী। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই তাঁর প্রতি।
লিখেছেনঃ Ahmad Istiak
বইয়ের ফেরিওয়ালায় আপনার লেখা প্রকাশ করতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন।
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন