বই: মামলার সাক্ষী ময়না পাখি
লেখক: শাহাদুজ্জামান
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশনী
মলাট মূল্য: ২৪০৳
শাহাদুজ্জামান এই বইয়ে এক স্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা শুনিয়েছেন, যিনি গল্প লেখেন, শুনিয়েছেন এমন একজনের কথা, যাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবস্থান খুব পরিষ্কার, কিংবা যাঁর হাতে টুকরো রোদের মতো খাম, জানিয়েছেন এক চিন্তাশীল প্রবীণ বানর, এক বোধিপ্রাপ্ত উবারচালক, অপস্রিয়মাণ তিরের দিকে তাকিয়ে থাকা এক যুগল আর ওয়ানওয়ে টিকিট হাতে এক বেকুবের কথা, সেই সঙ্গে শুনিয়েছেন এক বৃহস্পতিবারের গল্প, হরিণের মতো এক নারীর গল্প, যে লবঙ্গের বঙ্গ ফেলে দেয়, এক ময়না পাখির গল্প, যে মামলার সাক্ষী দেয়, সবশেষে মুখোমুখি করেছেন দুই নাজুক মানুষকে।
২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের ভেতর লেখা মোট এগারো টা ছোটগল্প নিয়ে এই বই। যেগুলোর রসদ মূলত বাস্তব থেকেই নেওয়া, আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো ঘটনাগুলোই লেখকের কলমে অসাধারণ ভাবে উঠে এসেছে। গল্পগুলোর সম্পর্কে কিছু কথা নিচে যোগ করা হলো।
আরও পড়ুনঃ একজন কমলালেবু রিভিউ PDF | শাহাদুজ্জামান
জনৈক স্তন্যপায়ী প্রাণী যিনিগল্প লেখেন
সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য শৈশবে খেলা অপরিহার্য। বেঁচে থাকবার বা বেঁচে উঠবার জন্য এর বিকল্প নেই। খেলা নিয়ে এই খেলা শারীরতত্ত্ববিদদের মতে পয়েন্টলেস বাট ইউজফুল। আর যারা সারাজীবন খেলে যান, তারা এই পয়েন্টলেস কাজটিই করে যান। মতিন কায়সার তাদের একজন। গল্প নিয়ে খেলেন তিনি। গল্পটা যাতে কোনোভাবেই ‘বানিয়ে তোলা’ না হয় তার জন্য তার অবিরাম চেষ্টা।
মৃত্যু সম্পর্কে আমার অবস্থানখুব পরিষ্কার
আইসিইউ তে শুয়ে বাবা- ছেলের কথা শুনে টিউব আর নানা যন্ত্রপাতির অতল গহ্বর থেকে মাথা নাড়ান। ছেলের মনে পড়ে, বাবা নিজের হাতকে বেগুন পোড়ার সাথে তুলনা করেন। মায়ের অকাল মৃত্যুতে তাকে অমর দেবী ইয়োস আর নিজেকে বুড়ো টিথোনাসের সাথে তুলনা করেন। সেই সাথে হিসেবি মগজে চলে বাস্তব চিন্তা। এই মাথা নাড়ানো দেখার জন্য এই বিলের বোঝা বয়ে বেড়ানো তার পক্ষে কতদিন সম্ভব!
টুকরো রোদের মত খাম
আন্দালীব এই যান্ত্রিক যুগেও কাগুজে পৃথিবীর কথা ভুলতে পারেনি। যখন হৃদয়ের সকল অনুভূতি বন্দী হত হলুদ খামে। পোস্ট অফিসে কাজ করা আত্মীয় তার হাতে তুলে দেয় কতগুলো বেওয়ারিশ চিঠি। যা তাকে সন্ধান দেয় আশ্চর্য এক মায়াময় জগতের!
আরও পড়ুনঃ ক্রাচের কর্নেল রিভিউ pdf – শাহাদুজ্জামান
চিন্তাশীল প্রবীণ বানর
পুরান ঢাকার লোকজনের মত উপমা রচনা এ জগতের কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। জনৈক যুবকের উক্তি- “চান্দের আলো হালায় মাইয়ার শরীলে ঢুইকা আর বাইরাইবার পারতাছে না।” মানুষের সাথে সাথে বানরেরা এই বিচিত্র এলাকার বাসিন্দা। নারিন্দার পাঠান মঞ্জিলে আব্দুল মোমেন কলকাতা থেকে এসে সংসার পেতেছেন। স্ত্রীর মৃগীরোগ থাকায় মাঝেমাঝে ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেন। এদিকে ভয়ে থেকে ওদিকে আবার কলকাতার ভাষার সাথে পুরান ঢাকার ভাষার সংঘর্ষেরও দুশ্চিন্তা করতে হয়। তবে মেয়ে টুম্পা এই ভাষা আয়ত্ত করে কিছুটা স্বস্তি দেয়। তাদের এই বিচিত্র কর্মযজ্ঞ নীরবে পর্যবেক্ষণ করে একটি খয়েরী লেজওয়ালা প্রবীণ বানর।
পৃথিবীতে হয়ত বৃহস্পতিবার
কায়সারের উপর মাসুদ নির্ভর করে আছে চাকরির কনফারমেশনের ব্যাপারে। ওদিকে কায়সারের পেছনে ফেউ লেগেছে। এ কথা সে কথায় চলে আসে নতুন আইডিয়া। কায়সাররেও পছন্দ হয়। কিন্তু এই ঘটনা যে তাকে মহাভারতের গল্পের কুদ্র আর বিনতার কথা মনে করিয়ে দেবে সে কি তা ভাবতে পেরেছিল?
উবার
সানগ্লাসে চোখ ঢাকা আধুনিকা নারী উবারের যাত্রী হয়ে চলেছেন। কিন্তু নামার আগে কেন তার এই বেশভূষা পরিবর্তন? বোরকায় আবৃত হয়ে কোথায় যাচ্ছেন তিনি? উবার চালককে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই বিচিত্র রঙ্গমঞ্চে তার ভূমিকা নীরব দর্শকের। কিন্তু রমণী কি নাটকের জন্ম দিতে যাচ্ছেন তা যদি জানতেন!
আরও পড়ুনঃ শ্রেষ্ঠ গল্প সমগ্র আবু ইসহাক PDF রিভিউ
অপস্রিয়মাণ তির
সাব্বির আর নীনার জীবনে আজ ঝড় বয়ে চলছে। সেই ঝড়ের উৎপত্তিস্থল শাহাব। জীবন দিলেই কি সব দেয়া হয়ে যায়? মানুষ আসলে কার সন্তান? আসলে কি চায় সে? পূর্ণতা আসে কিসে?
ওয়ানওয়ে টিকিট
সারাজীবন দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেটেছে বিদেশে থেকে যাওয়া নিয়ে। অবশেষে রফিকুল আলম ওয়ানওয়ে টিকিট নিয়ে প্লেনে চেপেছেন। চিরকালের বোকা, পদার্থবিজ্ঞান আর ম্যাজিকে বুঁদ হয়ে থাকা বাস্তব বুদ্ধিহীন রফিক সাহেবের এতদিনে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। ভায়রা রফিকুল ইসলাম জাগিয়েছে তার সেই চেতনাকে। বৈষয়িক লোকের কাছে কল্পনার রাজ্যে পড়ে থাকা লোকের নতিস্বীকার করতে হবে এ আর বিচিত্র কি!
লবঙ্গের বঙ্গ ফেলে
‘ছক্কা বেটি’ নার্গিস পারভীন এবার ছক্কা ফেলেছে কাঁঠাল ব্যবসায়ী মোজাম্মেল আলীর ঘরে। মেয়ে রাগে দুঃখে যোগাযোগ বন্ধ করেছে বাবার সাথে। যোগসূত্র স্বামী রুহুল। মাষকলাইয়ের ডালের হাঁড়ি নিয়ে যায়, আর খবর নিয়ে ফিরে আসে। মাঝখানে ডুবে থাকে ধাঁধায়। এ ধাঁধার উত্তর কি?
আরও পড়ুনঃ গল্পগুচ্ছ রবীন্দ্রনাথ PDF Download রিভিউ
মামলার সাক্ষী ময়না পাখি
বজলু গাছি গাছ বাইতে গিয়েই পা টা ভাঙল। সন্ধ্যায় হারিকেনের আলো জ্বেলে ‘মামলার সাক্ষী ময়না পাখি’ পুঁথি পড়ার দিন ফুরাল। এখন ঠিকানা হাসপাতাল। কিন্তু পা ভেঙে দেখি ভিটায় তরতরিয়ে দালান উঠে গেল! এখন আর পুঁথি কিনে এনে মোমেনাকে শোনানো হয় না! একটা অলিখিত চুক্তি হয়ে গেছে যেন! পা ভাঙার চিকিৎসা করতে গিয়ে বীর বনে যাওয়ার যোগসূত্রটা ঠিক ধরতে পারে না প্রতিবেশিরা।
নাজুক মানুষের সংলাপ
সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেই। আগে প্রশ্নকে ভালোবাসা শিখতে হবে। বুকের ভেতর যে কোনো সময় নৈতিকতা, নান্দনিকতা বা সৃজনশীলতার ঢেউ উঠতে পারে। আবার সেটা ভেসে থাকার সময়কালও সুনির্দিষ্ট। আশ্রয় খুঁজে পেলেও তা হারানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। স্থিরচিত্তই খুঁজে পেতে পারে সকল প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর।
বইটির দশম গল্প ‘মামলার সাক্ষী ময়না পাখি’ অনুযায়ী বইয়ের নামকরণ করা হয়েছে। যারা ছোটগল্প পড়তে পছন্দ করেন কিংবা পড়তে চাইছেন, তারা অবশ্যই এই বইটা পড়বেন।
লিখেছেনঃ Habiba Kamrun Shia
বইঃ মামলার সাক্ষী ময়না পাখি [ Download PDF ]
লেখকঃ শাহাদুজ্জামান
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
শাহাদুজ্জামানের অন্যান্য বই PDF ডাউনলোড করুন