বই: বিষাদ সিন্ধু
লেখক: মীর মশাররফ হোসেন (গাজী মিয়া)
মাইকেল মধুদূদন দত্ত আফসোস করে একবার বলেন, বাংলা সাহিত্যে এমন কোনো মুসলিম সাহিত্যিক কি নাই যিনি কারবালার বিষাদময় কাহিনী নিয়ে লিখবেন?
মাইকেলের ঐ আফসোস করার প্রায় এক যুগ পর মীর মশাররফ হোসেন লিখেন কারবালার বিষাদময় কাহিনী অবলম্বনে “বিষাদ সিন্ধু”।
আরও পড়ুনঃ জমিদার দর্পণ নাটক পিডিএফ
কাহিনি সংক্ষেপেঃ
এজিদ আব্দুল জব্বার এর স্ত্রী জয়নাবের রুপে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের করে পেতে চায়। শুরু হয় তার কুটিল-কুৎসিত পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার প্রথম শিকার মোসলেম ও জয়নবের স্বামী আব্দুল জব্বার। অতঃপর ইমাম হাসান, মায়মুনা ও জায়েদা।
এরপর একাদিক্রমে আব্দুল ওহাব, হাসান পুত্র কাসেম, হোসেন পুত্র আলী আকবর, আলী আসগর, আব্দুল্লাহ, দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ ইমাম বংশের সমস্ত পুরুষ সদস্য।এমনকি কিছু নিরপরাধ নারী পর্যন্ত। হোসেনের নিষেধাজ্ঞায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে যেতে না দেওয়ায় একমাত্র জয়নাল আবেদীন কারবালার প্রান্তরে জীবিত থাকে। এজিদ সকলকে বন্ধি করে দামেস্কে নিয়ে যায়।
ইতোমধ্যে মোহাম্মদ হানিফাকে বিস্তারিত ঘটনা জানানো হলে সে বিভিন্ন মুসলিম দেশের অধিপতিতের সহয়তা ও মসহাব কাক্কাকে সাথে নিয়ে এজিদ বাহিনী কে পর্যুদস্ত করে। হোসেনের শিরচশ্ছেদকারী জঘন্য সীমারকেও হত্যা করে মসহাব কাক্কা। এজিদের স্থান হয় চিরজ্বলমান ভয়ংকর কূপ। অবশেষে হানিফাও দুলদুল সমেত প্রস্তরময় প্রাচীরঘেরা হয়ে শোচনীয় অবস্থায় বন্দি হয়। ইমাম বংশের একমাত্র জীবিত সন্তান জয়নাল আবেদীন মুসলিম খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে হামানকে মুসলিম জাহানের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে। এভাবেই শেষ হয় বিষাদ সিন্ধুর কাহিনি।
আরও পড়ুনঃ উদাসীন পথিকের মনের কথা – মীর মশাররফ হোসেন
একদিন এক ছোট ভাই আমাকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা ভাই, বলতো বাংলাদেশের মুসলামনদের ঘরে ধর্মীয় বই বাদে (কোরআন, হাদীস) আর কোন বই থাকবেই থাকবে?
উত্তরটা আমার জানা ছিলো না।
পরে সে বললো, বিষাদ সিন্ধুর কথা।
ছোটবেলায় আশেপাশের বাড়িগুলোতে বেড়াতে গেলে দেখতাম, যারা বই পড়েন তাদের ঘরে আর কোনো বই থাকুক বা না থাকুক, বিষাদ সিন্ধু বইটা থাকতো।
ক্লাস নাইন-টেনে এই বইয়ের ষোড়শ প্রবাহের মহরম পর্বের একটা কাহিনী পড়েছিলাম, ‘অপূর্ব ক্ষমা‘ শিরোনামে। শয্যাশায়ী ইমাম হাসান রা: তার স্ত্রী জাএদাকে ক্ষমা করে দেবার কাহিনী, যে জাএদা তাকে বিষপান করিয়েছিলো।
ইসলামী ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ কারবালার কাহিনী। এই কাহিনীকে মীর মশাররফ হোসেন তার বইয়ে তুলে ধরেন।
ইমাম নির্বাচন নিয়ে মতানৈক্যের জের ধরে রক্তপাত, মতানৈক্যের প্রেক্ষাপট এবং পরিশেষে কারবালার ময়দানের করুণ পরিণতির কাহিনী লেখক অন্তর্নিহিত সংলাপের মাধ্যমেও তুলে ধরেছেন।
আরও পড়ুনঃ বসন্তকুমারী PDF | গাজী মিয়াঁর বস্তানী
বিদ্র: বইটি একদিকে যেমন অনেক সুনাম কুড়িয়েছে, অন্যদিকে বইটি নিয়েও নানাবিধ সমালোচনা আছে। বইটিতে কিছু সত্যকে উপেক্ষা করে কিছু মিথ্যা কাহিনীও বর্ণিত হয়েছে।
সর্বোপরি ইসলামি ইতিহাসের অন্যতম ট্রাজেডির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে বইটি অনেকটা সহায়ক হবে আশাকরি, পাশাপাশি কারবালার কাহিনী নিয়ে আরো ভালো কিছু বই আছে, সেগুলো পড়লে সত্য কাহিনী সম্পর্কে অনেকটা পরিস্কার ধারণা লাভ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
পছন্দের উক্তিঃ-
১. “ঈশ্বর নিয়োজিত কার্যে কেহ বাধা দিতে পারে না”
২. “যে আমার নয়, আমি কেন তাহার হইবো?”
৩. “বিনাশ করা অতি সহজ, রক্ষা করা বড়ই কঠিন।”
৪. “প্রাণে আঘাত লাগলে মুখ বন্ধ থাকে না”
লিখেছেনঃ আরিফুল ইসলাম
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের সেরা সাতটি বই রিভিউ
কারবালার ঘটনা সম্পর্কিত আরও কিছু বইঃ-
* কারবালা – সোলায়মান শিপন
* হুসাইন রাঃ এর জীবনী – ড. আলি সাল্লাবি
* কারবালা : বাস্তবতা বনাম কল্পকথা – ফরিদ আল বাহরাইনী
* আল বিদায়া ওয়া আন নিহায়া – হাফেয ইবনে কাসির
* ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস – মুফতি মনসূরুল হক
বই: বিষাদ সিন্ধু [ Download PDF ]
লেখক: মীর মশাররফ হোসেন
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
জনপ্রিয় ও সেরা ৫০ বই PDF রিভিউ