প্রিয়তমেষু
হুমায়ূন আহমেদ
(Spoiler / recap, not book review)
আমার জীবনের প্রথম কেনা বই এটা। টিফিনের ১ টাকা ২ টাকা ও বাবার পকেট থেকে টাকা সরিয়ে ৩২ টাকায় কিনেছিলাম বইটি ১৯৯৩ সালে। আজ আবার পড়লাম।
প্রিয়তমেষু বইটিতে ঢাকায় বসতি গড়তে আসা স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুগ্ধপুষ্য শিশু সন্তান নিয়ে গড়া একটি ছোট্ট নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনি বলা হয়েছে।
সদ্য কৈশোরুত্তীর্ণ পুষ্প রাকিবের স্ত্রী। তাদের প্রতিবেশি নিশাত ও জহির (আমি না কিন্তু)! নিশাত-রা কিন্তু দরিদ্র নয়। বড়লোক বাপের মেয়ে নিশাত, স্বামী জহিরও ভালো চাকরি করে। পুষ্পরা ওদের পাশের ফ্লাটে তিম মাসের জন্য ঘটনাচক্রে মুফতে থাকার সুযোগ পেয়ে এখানে এসে উঠেছে।
নিত্য অভাবের সংসারে অতি অল্পতেই চমকিত ও প্রফুল্ল হয়ে যায় পুষ্প। বাগানে ফোটা পুষ্পের মতোই সুন্দর ও সহজ সরল মেয়ে এই পুষ্প।
রাকিবের বাল্য বন্ধু মিজান বেশ অর্থবিত্যশালী। উপরে জানাশোনাও বেশ। রাকিব মাঝেসাঝেই মিজানের কাছ থেকে টাকাপয়সা ধার নেয়। মিজানও বন্ধুকে নানান দিকে, যেমন- ভাড়াবাড়ি খুঁজতে, ড্রাইভার সহ সারাদিনের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে ও অন্যান্য প্রয়োজনে বন্ধুকে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ হরতন ইশকাপন হুমায়ূন আহমেদ রিভিউ
সে সুবাদে মিজান রাকিবদের বাসায়ও আসে মাঝেসাঝেই। এমনকি রাকিব যখন বাসায় থাকে না, তখনও। পুষ্পের এই ব্যাপারটি ভাল না লাগলেও সে তা রাকিবের কাছে বলতে সাহস করে না। কারন, বন্ধুর প্রতি ওর অগাধ বিশ্বাস। চট করে রাগারাগি করতে পারে। পরে একদিন ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলতে হবে।
কিন্তু, পুষ্প সে সুযোগ আর পায়নি। মিজান এমনই এক দুপুরে পুষ্পকে বাসায় একা পেয়ে ধর্ষণ করে।
প্রথমে পুলিশ-কেইস ইত্যাদি করতে চাইলেও, পরে রাকিব বেঁকে বসে। লোকলজ্জার ভয়, অর্থ সংকট ইত্যাদি নানান টানাপোড়ান। কিন্তু নিশাত নাছোড় বান্দা। সে এর একটা শেষ দেখে ছাড়বে। জহির বিরক্ত হলেও পরে সহায়তা করে নিশাত ও পুষ্পকে।
নারী নির্যাতনের ব্যাপারগুলো অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত বিচার পায় না, ভিকটিমদের পিছিয়ে যাওয়া এর একটি বড় কারণ। আর কোর্ট-কাচারিতে লোকদের সামনে ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে নাজেহাল করার মানষিকতা একটি বড় কারন।
যাহোক, শেষ পর্যন্ত পুষ্প বিচার পেয়েছিল। তদন্তকারী পুলিশ অফিসার নিজেকে খারাপ মানুষ হিসেবে ঘোষণা করলেও মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রেখেছেন।
মামলাটির রায় যখন হলো, আর মিজানের জাবজ্জীবন কারাদন্ড হলো, নিশাত অঝোড় ধারায় কাঁদছিল। জহির অনেক শান্তনার বাণী শুনিয়েও নিশাতের কান্না থামাতে পারল না। কান্না থামবে কী করে, বহুদিন ধরে নিশাত তার মনের গোপন কোঠরে দুঃখের মেঘ জমিয়ে রেখেছে। কাউকে সে বলতে পারে নি, আর পারবেও না যে তার বড় দুলাভাই কোন এক অলস দুপুরে তার ঘরে ঢুকে পড়েছিল। আজ মিজানের শাস্তির মাধ্যমে সেই দুখের আগল খুলল!
লিখেছেনঃ Muhammad Zahirul Bhuiyan
বইঃ প্রিয়তমেষু [ Download PDF ]
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত