হোস্টেলের ছোট্ট বিছানায় একটা নতুন চাদর বিছিয়েছি। সুন্দর করে আমার কর্নারটা গুছিয়েছি। এসব টুকটাক কাজ করতে করতে মনে হলো ১৩ নভেম্বর হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন। বিভিন্ন লেখা, পোস্ট, নিউজ দেখছিলাম গত দিন থেকে আজ পর্যন্ত। তখন হঠাৎ মনে হলো আচ্ছা, আমি বোধহয় রবীন্দ্র, নজরুল বা অন্যান্য লেখা যা টুকটাক পড়েছি সেই হিসেবে হুমায়ুন আহমেদ একটু পিছিয়ে আছেন। আমি যে খুব বড় একজন হুমায়ুন ভক্ত ব্যাপারটা তাও না। তবুও মনটা কেমন যেন বেদনায় সিক্ত হলো। কেমন একটা মন খারাপ হলো। মনে হলো না এখনি আমার হুমায়ুন পড়া উচিত, না হলে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না। কিন্তু হোস্টেলে আমার কাছে হুমায়ুন আহমেদের বই আপাতত নেই। অগত্যা এক বড় আপুর থেকে হুমায়ুনের “দিনের শেষে” বইটা ধার আনলাম।
তারপর রুমের সবাই ঘুমালে, আমি আরাম করে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় কম্বলটা পায়ের ওপর টেনে নিয়ে বইটা পড়া শুরু করলাম। লাল রং এর নতুন চাদর, টেবিল ল্যাম্পের সাদা আলো, সেই সাথে শীত শীত আবহাওয়া। মানে সবকিছু মিলিয়ে একটা দারুণ বই পড়ার আবহ তৈরি হলো। ৮৮ পৃষ্টার একটা বই আমি এক নিঃশ্বাসে শেষ করলাম। মানে হঠাৎ অনেক বেশি খিদে পেলে, মায়ের হাতের রান্না যেমন আমরা চেটে পুটে খাই, তৃপ্তি পাই, হুমায়ুন আহমেদের এই বইটা পড়ার পর তেমন লাগছিল। মনে হচ্ছিলো অবশেষে স্বস্তি।
ওনার লেখার সব থেকে যে জিনিস টা আমার ভালো লাগে তা হলো একটা লাইন, একটা ছোট্ট স্বপ্নের মধ্যেও উনি অনেক গুলোগল্প বলে দেন। কোন জটিলতা নেই, দুর্বোধ্য ভাষা বা কোন জটিল সমীকরণে অনুভূতির খেলা নেই, তবুও কেমন একটা সরল গল্পে মনকে নিবিষ্ট করে রাখে। এই গল্পেই, জহির, অরু, মিরু, তরু, আসমানি, আসমা, নাহার এদেরকে কেমন জীবিত করে পাঠকের সামনে হাজির করেন। জহির বোকা ধরনের মানুষ, তাকে দেখলে একেবারে তুচ্ছ কেরানী ছাড়া আসলেই কিছু মনে হয় না অথচ একটা মেয়ের অন্য ছেলের সাথে বিয়ের পর এই জহিরের জন্যেই সারাজীবন কাঁদবে… এই সুক্ষ্ম অনুভূতিগুলো এমন সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেন মনে হয় এগুলো আমি মনের গভীর থেকে দেখতে পাচ্ছি।
হুমায়ুন আহমেদের লেখা নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা থাকতে পারে, ওনার অনেক গভীর গবেষণা লব্ধ তথ্য থেকে লেখা উপন্যাসও আছে কিন্তু এই যে হুট করে মানুষের মনে তার লেখার জন্যে বেদনা জাগাতে পারা এই ক্ষমতা বোধ হয় সব লেখকের থাকে না। আমি যে ওনার সব বই পড়েছি তা কিন্তু না। হয়তো ওনাকে নিয়ে আমার জানাটাও অত গভীর না, ওনাকে বিশ্লেষণ করার মতোন দক্ষতা আমার নেই। তবে হুমায়ুন আহমেদ এই সব লেখাগুলো কোথাও একটা মনের আরাম এনে দেয়, প্রশান্তি বোধ করি।
এখন রাত ১ টা। হুমায়ুন আহমেদ আরো পড়ার, জানার ইচ্ছা নিয়ে, জহিরের জীবনটা এরপর কিভাবে কাটলো? এটার একটা কাল্পনিক জগৎ বানাতে বানাতে চোখ বুঝে ঘুমের অপেক্ষা করবো।
লিখেছেনঃ নিবেদিতা ভট্টাচার্য
বইঃ দিনের শেষে [ Download PDF ]
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত