বই- তারিণীখুড়োর অভিযান
লেখক – সত্যজিৎ রায়
প্রকাশনা – নওরোজ সাহিত্য সম্ভার (ঢাকা)
প্রকাশকাল – জুন ২০১৬
প্রচ্ছদ ডিজাইন – সত্যজিৎ রায়
মূল্য – ২০০/=
মোট গল্প – ১৩টি
তারিণীখুড়োর পরিচয়:
ঘনাদা আর টেনিদার পর সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি কালজয়ী চরিত্র তারিণী খুড়ো । পুরো নাম-তারিণীচরণ বাঁডুজ্জে । বাঁড়ুজ্জে- “বন্দ্যোপাধায়” পদবীর চলতি নাম । গল্পের স্টক খুড়োর অঢেল । নানা ধরণের চাকরী করতে গিয়ে ভদ্রলোক সারা ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়িয়েছেন । অভিজ্ঞতার ঝুড়ি একেবারে ভর্তি হয়ে টইটুম্বুর । বিচিত্র সেই সব অভিজ্ঞতা, আর তাই গল্পগুলোও নানা স্বাদের । তারিণী খুড়োর মতে, আর্টের খাতিরে যেটুকু কল্পনার আশ্রয় নিতে হয় সেটুকু ছাড়া আর নাকি সবই সত্যি!! অবশ্য এই আর্টের খাতিরে কল্পনার আশ্রয় নেবার কথাই বা কে স্বীকার করে?
খুড়োর জন্ম বাংলার মধ্যবিত্ত পরিবারে হলেও কাজকর্মের সূত্রে নিজেকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পুরো ভারতে। তাই বেশ একটা সর্বভারতীয় ফ্লেভার তাঁর সব গল্পেই । স্কুল পড়ুয়া ন্যাপলা, ভুলু, চটপটি, সুনন্দরা হচ্ছে এই সব গল্পের শ্রোতা ।
তার গল্পের স্টকে সবসময়ই গল্প সদা প্রস্তুত থাকে। ভুত, প্রেত, শিকার অভিযান, কি নেই?
মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি সকলেরই খুড়ো, কারন যারা তার সাথে মেশেন, তার এখন অবদি খুড়ো ছাড়া কিছু শুনেননি। তাই বড় ছোট সকলেরই খুড়ো। বরংচ তাকে কেউ খুড়ো না বললে চটে যান😆
আরও পড়ুনঃ যখন ছোট ছিলাম সত্যজিৎ রায় PDF রিভিউ
➡ ১ম গল্প, তারিণীখুড়ো ও ডুমনিগড়ের মানুষ খেকো। (পর্যালোচনা)
খুড়ো সভাব সুলভ ভাবে বসেছেন গল্প করবেন বলে। আর যথারিতি শ্রোতা ন্যাপলা, ভুলু, চটপটি, সুনন্দরা।
শুরু করলেন, ‘আমি তখন ছিলাম ডুমনিগর নেটিভ স্টেটের ম্যানাজার’ এতটুকু বলতে না বলতেই ন্যাপলা দিলো বাম হাত। বলে ‘খুড়ো, ডুমনিকি ম্যাপে আছে’😁 আচ্ছা বলেনতো গল্পের মাঝে আটকালে কার ভালো লাগে?
খুড়োও চটে গেলেন। ‘ ভগবানের সৃষ্টিতে ডিফেক্ট থাকে জানিসতো? হাতে ছ-টা আঙ্গুল, বাছুরের দুটো মাথা, শুনিশনি? না নেই ম্যাপে। এই নিয়ে ফিলিপসের অ্যাটলাস কোম্পানিকে কড়া একটা চিঠিও লিখে ছিলাম। তারা বলল, ভেরী সরি স্যার, পরের সংস্করনে ঠিক করে দবি। দেয়নি, শ্রেফ গাফিলতি করে গেছে।😄
আরও পড়ুনঃ শরৎচন্দ্র রচনা সমগ্র PDF Download
যাইহোক, তিনি গল্প বলছে ডুমনিগড় রাজ্যর। সেখানকার রাজা ভূদেব সিং এর আন্ডারে কাজ করতেন তিনি। রাজার তিন পুত্র, শ্রীপত, ভুপত, আর অনুপ। এর মধ্যে রাজা বড় ছেলেকেই ক্ষমতা দিবেন। এবং বড় ছেলেটা ভালোও বেশ। রাজার মেজো ছেলে খুব ভালো শিকারী, ঘটে বুদ্ধিও রাখে। কিন্তু একটু বেশী মদ্যপ। তাই রাজা তাকে তেমন সু-নজরে দেখেন না।
হঠাৎ শ্রীপত খুন হলো, রাজা স্বাভাবিক ভাবেই মূর্সে পড়লেন। খুনিকে কেউ ধরতে পারলেন না। তাই সেটা রহস্যই থেকে গেলো। আসলে খুনি কে?
আগে ডুমিনিগড়ে বেশ জঙ্গল ছিলো, বিদেশে থেকে সাহেবরা আসতো শিকার করতে। ভূদেব সিং তাদের প্রয়োযন মিটাতেন। এবারো আসলো বড় ছেলের খুন হবার ২ মাস আগে, সবকিছু যোগাড়ও করে দিলেন রাজা। কাসা বাটি পিটিয়ে জঙ্গলের চারপাশ থেকে বাঘ, হরিন সব সাহেবদের নাগালে এনে দিলেন। সাহেবরা শুধু লক্ষ্যভেদ করবেন। কিন্তু তারপরও ব্যার্থ হলো এক সাহেবের নিশানা। একটা বাঘের লেজ আর পায়ের গোড়ালিতে গুলি করে জখম করলেন শুধু। পরে শুনতে পাওয়া যায় গ্রামের মানুষরা বেশ ভয়ে আছেন, কারন বাঘটা মানুষ খেকো হয়ে ঘেছে। এ নিয়ে সবাই অভিযোগও আনলেন রাজার কাছে।
আরও পড়ুনঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস সমগ্র [PDF]
এখন সেই বাঘ শিকারের দায়িত্ব দিলেন রাজা খুড়োকে। এতে রাজার মেজো ছেলে ক্ষেপে যান। রাজার নিষেধ অমান্য করে শেষে শিকারেও যান। কিন্তু শেষে শিকার হয় কে?
মাঝে রাজার জন্য ডায়াবেটিসের ওষুধ আনতে খুড়ো যান এক আগতো তান্ত্রিকের কাছে। তান্ত্রিক, খুড়োকে দেখেই বলেন ‘আয়, বোস এখানে, কি চাস তুই’। খুড়োকে তুই বলাতে ধাঁ করে তার মাথায় রক্ত চড়ে যায়, বলেন, ‘রাজা অনুরোধে তোর সাথে দেখা করতে আসলাম’ 😂
তান্ত্রিক শেষে খুড়োর কপালে সবুজ কি মেখে দিয়ে বলেন,…..? কি বলেন😂
মতামত:
তাড়িরিণীখুড়োর কাহিনী শুনি আমি ‘রেড়িও মিরচিতে’ অনুষ্ঠিত ‘সানডে সাসপেন্স’এ। আমার খুব ভালো লাগে। সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে কিছু বলার সাহস বা যোগ্যতা আমার নাই। যেমন তার লিখনী তেমন তার বলার ভঙ্গি। খুব চমৎকার।
আরও পড়ুনঃ একেই বলে শুটিং PDF সত্যজিৎ রায়
ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু লিখে তিনি যেমন লিজেন্ড তেমনি তাড়িরিণীখুড়োও তাকে আরো একধাপ উপরে তুলেছেন। বই হোক আপনার, আপনি বইয়ের ।
লিখেছেনঃ Mohammad Kamrul Hasan
বইঃ তারিণীখুড়োর অভিযান [ Download PDF ]
লেখকঃ সত্যজিৎ রায়।
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত