বইঃ গৃহদাহ
লেখকঃ শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশনীঃ বুকস্ ফেয়ার
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৭৬
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০ টাকা
অচলা-সুরেশ কিংবা মাহিম-অচলা কাহার ভালোবাসা সত্য ছিল? সেই ভালোবাসা কেনো এমন ছিলো এই প্রশ্নের জবাব কেবল শরৎ বাবুই জানেন, আমি আজও এর কোনো সদোত্তর পাইনে।
প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে সুরেশ হলো ধনীর দুলাল এবং ভীষণ বন্ধুবৎসল। অনেক ভালো গুণের সাথে তার একটা অবিশেষ গুণও রয়েছে, তা হলো কোনো জিনিসের প্রতি তার নজর পড়লে যেকোনো উপায়েই সেই জিনিস হাসিল করে নেয়।
সুরেশের প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধু হলো মাহিম। কথায় কাজে সুরেশ যতটা চঞ্চল, মাহিম ঠিক তার উল্টো টা। মাহিমকে মিতভাষী উপাধি দিলেও যেন বেশি হয়ে যায়। সে দরিদ্র হিন্দু ব্রাহ্মণের ছেলে,কিন্তু শিক্ষিত। কিছুদিন হলো সে এক বেহ্ম মেয়ের প্রেমে পড়েছে এবং তাকে বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বেহ্মবিরোধী সুরেশ সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। সুরেশ ঠাকুর দেবতায় বিশ্বাস করেনা, তবে জাতপাতের সংস্কারে বেশ স্পর্শকাতর। প্রাণের বন্ধু এক বেহ্ম কন্যাকে বিয়ে করে জাত খোয়াবে তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না। বন্ধুকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে বিয়ে ভাঙতে সেই মেয়ের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।
কিন্তু ওই মেয়েকে দেখে সে নিজেই যেনো মোহে আটকে গেলো, বন্ধুর বিয়ে ভাঙতে গিয়ে সুরেশ একপ্রকারে নিজের বিয়ের সমস্ত ঠিক করে এলো। মেয়ের বাবা সবদিক ভেবে দেখলো মাহিম অপেক্ষা সুরেশ পাত্র হিসেবে ঢের ভালো। কিন্তু ঘটনা চক্তে সেই মেয়ের বিয়েটা মাহিমের সাথেই হলো, তারচেয়ে বলা যায় সেটা সুরেশের জন্যই সেটা সম্ভব হয় । আর সেই মেয়ের নাম হলো অচলা।
আরও পড়ুনঃ শ্রীকান্ত – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বিয়ের পর অচলা কলকাতা ছেড়ে পাড়াগাঁয়ে তার স্বামীর জীর্ণ কুটিরে এসে উঠে । সেখানে এসে হাজির হয় মাহিমের এক দূরসম্পর্কের ভগিনী মৃণাল। তার সাথে ছেলেবেলায় নাকি মাহিমের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু যেকোনো কারণে হোক সেটা সম্ভব হয়নি। মৃণালের চঞ্চলতা অচলার যেমন ভালো লাগতো আবার মাঝে মাঝে তা বিরক্তির কারনও হয়ে উঠেছিলো। তবে মৃণালের প্রতি অচলার সবচেয়ে বেশি যেটা ছিলো তা হলো হিংসা।
এরপর এক দিন সুরেশও সেখানে এসে হাজির হয়। কিছুদিন পর একরাতে মাহিমের বাড়িতে আগুন লেগে ঘরবাড়ি সব পুড়ে যায়। মাহিম বেহ্ম মেয়ে বিয়ে করেছে বলে গ্রামের কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে না আসায় অগত্যা অচলা ফিরে যায় কলকাতায় তার বাবার কাছে।
গ্রামের বাড়িতে থেকে মাহিম অসুস্থ হয়ে পড়ায় সুরেশের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে হাওয়া বদল করতে মাহিম অচলা এবং সুরেশ তিনজনে রওনা দেয় পশ্চিমে। কিন্তু অচেনা এক স্টেশনে মাহিমকে রেখেই সুরেশ অচলাকে নিয়ে নেমে যায়। কিন্তু কেনো?
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
ত্রিভুজ প্রেমের কথা মাথায় এলেই প্রথমেই যে বইয়ের নাম মনে আসে তা হলো গৃহদাহ। শরৎ চন্দ্রের সেরা উপন্যাস গুলোর মধ্যে গৃহদাহ একটি । হৃদয়ে প্রেমের গভীর আকুলতা বোঝাতে যে শরৎ বাবুর জুড়ি নেই, গৃহদাহ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
যদিও শরৎ বাবুর সমালোচনা করার যোগ্যতা আমার নেই, তবুও মনে হয়েছে তিনি চাইলে উপন্যাস টা আরও ছোট করতে পারতেন, ২০/২৫ পাতা কম লিখলেও কাহিনি বর্ণনায় তেমন কোনো অসুবিধা হতো না।
সবশেষে বলবো, সুরেশের ব্যক্তিত্ত্ব আর অচলার প্রতি আকুলতা, অচলার আত্মোভিমান কিংবা দ্বিচারিতা, মাহিমের অতি শীতলতা এবং মৃণালের সরলতা সবমিলিয়ে অদ্ভুত এক ত্রিকোণ প্রেমের উপন্যাস এই গৃহদাহ। তাই আর দেরী না করে পড়েই ফেলুন।
লিখেছেনঃ Habiba Kamrun Shia
বইঃ গৃহদাহ [ Download PDF ]
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা সমগ্র