আগে পড়ুনঃ বিশ্বসাহিত্য ভাষণ : আলেকজান্ডার পুশকিন | প্রথম পর্ব
যাইহোক, এবার আমি পুশকিনের সৃষ্টিকর্মের দিকে আলোকপাত করি। প্রথমেই আসি তাঁর বিখ্যাত ‘ইউজিন ওয়ানিয়াগিন’ প্রসঙ্গে। এটি একইসাথে কবিতা, এবং উপন্যাস। বিষয়টি বুঝতে যাদের অসুবিধা হবে, তাদেরকে আমি মীর মোশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’-র কথা কল্পনা করতে বলবো। তবে ‘ইউজিন ওয়ানিয়াগিন’ এবং ‘বিষাদ সিন্ধু’ এক জিনিস নয়। শুধু গীতিকবিতার রূপটি বুঝানোর জন্য আমি এ তুলনাটি করছি। কারণ, কাব্যিক ভাষায়ও যে গল্প বা উপন্যাস লিখা যেতে পারে, এ বিষয়টি আমাদের এ প্রজন্মের অনেকেই ভুলে গেছেন।
কবিতাটি পুশকিন, প্রথম প্রকাশ করা শুরু করেছিলেন ১৮২৫ সালের দিকে। এরপর সিরিয়াল আকারে এটিকে প্রকাশ করে আসছিলেন ১৮৩২ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ কবিতাটি লিখতে তাঁর ৮ বছর সময় লেগেছিলো। কবিতাটি ১৪-লাইনের স্ট্যানজারূপে লেখা। স্ট্যানজা কী? স্ট্যানজা হলো কোনো কবিতা বা ছড়া বা পদ্যের পংক্তিগুচ্ছ। বিষয়টি একটু খুলে বলি। যেমন নজরুলের তালগাছ পদ্যটি এরকম:
ঝাঁকড়া চুলো তালগাছ, তুই দাঁড়িয়ে কেন ভাই ।
আমার মতো পড়া কি তোর মুখস্ত হয় নাই ।।
আমার মতো এক পায়ে ভাই,
দাঁড়িয়ে আছিস কান ধরে ঠায়
একটুখানি ঘুমোয় না তোর পণ্ডিত মশাই ।।
এখানে পদ্যটির দুটি স্ট্যানজা আছে। প্রথম স্ট্যানজাটি দুই লাইনের, দ্বিতীয় স্ট্যানজাটি তিন লাইনের। ছন্দমিলের ধরণ অনুযায়ী স্ট্যানজাকে নানাজন নানা ভাগে ভাগ করে থাকেন। যেমন এখানে, প্রথম স্ট্যানজাটির ছন্দমিল হলো আই-আই (ভাই-নাই)। দ্বিতীয় স্ট্যানজাটির ছন্দমিল হলো আই-আয়-আই (ভাই-ঠায়-মশাই)।
এরকম স্ট্যনজা, পুশকিনের ‘ইউজিন ওয়ানিয়াগিন’-এ আছে ৩৮৯-টি। প্রতি স্ট্যানজায় ১৪-টি করে লাইন বা পংক্তি থাকলে, ৩৮৯-টি স্ট্যানজায় মোট লাইন বা পংক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪৪৬-টি। পুশকিন তাঁর এ স্ট্যানজাগুলোতে যে-ছন্দমিল ব্যবহার করেছেন, তা এরকম:
AbAbCCddEffEgg
এখানে মোট ১৪-টি অক্ষর আছে, যা প্রতি স্ট্যানজার ১৪-টি লাইনের, প্রতিটির শেষ শব্দের ছন্দের ধরণকে নির্দেশ করছে।
এখানে আপনাদের আমি একটি ব্যাপার বলতে চাই। মানুষে যেমন নারী-পুরুষ আছে, ছন্দেও তেমন নারী-পুরুষ আছে। উপরের ১৪-টি অক্ষরের মধ্যে যে-অক্ষরগুলো বড় হাতের, সেগুলো নারীছন্দকে, আর যে-অক্ষরগুলো ছোট হাতের, সেগুলো পুরুষ ছন্দকে নির্দেশ করছে।
নারীছন্দ কী? হেনরি লংফেলোর ‘A Psalm of Life’ কবিতাটির কথাই ধরা যাক। কবিতাটি এরকম:
Tell me not, in mournful numbers,
Life is but an empty dream!—
For the soul is dead that slumbers,
And things are not what they seem.
Life is real! Life is earnest!
And the grave is not its goal;
Dust thou art, to dust returnest,
Was not spoken of the soul.
এখানে চার লাইনের দুটি স্ট্যানজা আছে। প্রতিটি লাইনের ছন্দমিল ধরতে আমলে নিতে হবে লাইনগুলোর শেষ শব্দের সিলেবলগুলোকে। সিলেবল কী, তা সম্ভবত বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়ে থাকে, তাই এখানে আমি আলোচনা করছি না।
কবিতাটির প্রথম লাইনের ছন্দ: নাম-বার্স বা আম-আর্স (লাইনটির শেষ শব্দের সিলেবল অনুযায়ী)।
ধরা যাক ছন্দের এ রূপটিকে আমি প্রকাশ করতে চাই AB, এ দুটি অক্ষর দ্বারা, যেহেতু এখানে দুটি সিলেবল আছে (একটি ‘নাম’, আরেকটি ‘বার্স’)। প্রত্যেক সিলেবলের প্রথম কনসোন্যান্ট বা ব্যঞ্জনবর্ণ বাদ দিলে পাবো— ‘আম’ এবং ‘আর্স’। চাইলে এ দুটি সিলেবলের ছন্দরূপকে শুধু একটি অক্ষর ‘A’ দ্বারাও আমি প্রকাশ করতে পারতাম, কিন্তু আপনাদের বুঝার সুবিধার জন্য ‘A’ এবং ‘B’ দুটি পৃথক অক্ষর ব্যবহার করছি (যেহেতু এখানে সিলেবলের সংখ্যা দুটি)।
কবিতাটির দ্বিতীয় লাইনের ছন্দ: ড্রিম বা ইম (লাইনটির শেষ শব্দের সিলেবল অনুযায়ী)।
ছন্দের এ রূপটিকে আমি প্রকাশ করবো একটি অক্ষর C দ্বারা, যেহেতু এখানে সিলেবলের সংখ্যা একটি।
কবিতাটির তৃতীয় লাইনের ছন্দ: স্লাম-বার্স বা আম-আর্স (লাইনটির শেষ শব্দের সিলেবল অনুযায়ী)।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বসাহিত্য ভাষণ : মাক্সিম গোর্কি | প্রথম পর্ব | Maxim Gorky
লক্ষ করুন, প্রথম লাইনের ছন্দের মতো তৃতীয় লাইনের ছন্দেও কিন্তু দুটি সিলেবল আছে। একটি ‘নাম’, আরেকটি ‘বার্স’। প্রত্যেক সিলেবলের প্রথম কনসোন্যান্ট বা ব্যঞ্জনবর্ণ বাদ দিলে পাবো— ‘আম’ এবং ‘আর্স’, যা হুবহু প্রথম লাইনের ছন্দের সমান। সুতরাং তৃতীয় লাইনের ছন্দরূপটিকেও আমি প্রকাশ করবো AB দ্বারা, যেহেতু প্রথম লাইনের ছন্দের সাথে এটি পুরোপুরি মিলে গেছে।
কবিতাটির চতুর্থ লাইনের ছন্দ: সিম বা ইম
যা দ্বিতীয় লাইনের ছন্দের সাথে মিলে গেছে। সুতরাং এটিকে আমি প্রকাশ করবো C দ্বারা।
ফলে কবিতাটির প্রথম স্ট্যানজার ছন্দরূপ পাওয়া গেলো—
AB-c-AB-c
এখানে AB বড় হাতের অক্ষরে, আর c ছোট হাতের অক্ষরে লিখলাম কেন? কারণ c হলো পুরুষছন্দ, এবং AB হলো নারীছন্দ।
কোনো ছন্দে দুইটি সিলেবল থাকলে, সাধারণত সর্বশেষ সিলেবলটি স্ট্রেসলেস সিলেবল হয়, এবং এজন্য এগুলোকে নারীছন্দ বলা হয়। উপরে আমি দেখিয়েছি যে কীভাবে ‘Numbers’ এবং ‘Slumbers’-এ দুটি করে সিলেবল আছে। স্ট্রেসলেস সিলেবলের ছন্দ পেলেই এটিকে নারীছন্দ ধরে নেবেন। স্ট্রেসলেস সিলেবলের বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো উচ্চারণ করতে কোনো ধ্বনির উপর জোর খাটাতে হয় না, এবং উচ্চারণটি লম্বা হয় না। যেমন Num এবং bers দুটোই সংক্ষিপ্ত উচ্চারণের সিলবেল।
আর, কোনো ছন্দের সর্বশেষ সিলেবলটি স্ট্রেসড সিলেবল হলে, সেগুলোকে পুরুষছন্দ বলা হয়। স্ট্রেসড সিলবলের বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো উচ্চারণ করতে কোনো একটি ধ্বনির উপর জোর খাটাতে হয়, এবং উচ্চারণটি লম্বা হয়। যেমন Dream এবং Seem এর উচ্চারণ ড্রি-ই-ইম, এবং সি-ই-ইম।
এবার পুশকিনের ‘ইউজিন ওয়ানিয়াগিন’ থেকে আমি একটি স্ট্যানজা নিতে চাই, এবং এর ছন্দরূপ বিশ্লেষণ করতে চাই। যেমন (আমি ইংরেজি অনুবাদ ব্যবহার করছি):
Thus mused a madcap young, who drove
Through clouds of dust at postal pace,
By the decree of Mighty Jove,
Inheritor of all his race.
Friends of Liudmila and Ruslan,
Let me present ye to the man,
Who without more prevarication
The hero is of my narration!
Oneguine, O my gentle readers,
Was born beside the Neva, where
It may be ye were born, or there
Have shone as one of fashion’s leaders.
I also wandered there of old,
But cannot stand the northern cold.
স্ট্যানজাটির ১৪-টি পংক্তির ১৪-টি শেষ শব্দ এরকম—
Drove – pace – jove – race – ruslan – man – prevarication – narration – readers – where – there – leaders – old – cold
শব্দগুলোর সিলেবল হিশেব করে ছন্দরূপ পাই—
ঔব (A) – এইস (b) – ঔব (A) – এইস (b) – অ্যান (C) – অ্যান (C) – শন (d) – শন (d) – আর্স (E) – য়্যার (f) – য়্যার (f) – আর্স (E) – ঔল্ড (g) – ঔল্ড (g)
সুতরাং পুরো স্ট্যানজাটির ছন্দরূপ দাঁড়ালো:
AbAbCCddEffEgg
পুশকিন পুরো কবিতাটিতেই, প্রতি স্ট্যানজায় এ ছন্দরূপ বজায় রেখেছেন। এটি বেশ পরিশ্রমের কাজ। এ স্ট্যানজাগুলোর প্রতিটিই সনেট। পুশকিন এ ক্ষেত্রে সরসরি শেক্সপিয়ারকে অনুকরণ করেছেন। কিন্তু রুশ সাহিত্যে এ ধরণের সনেট এর আগে কখনো ছিলো না। এজন্য এ সনেটগুলোকে, রাশিয়াতে ‘পুশকিন সনেট’ বা ‘ওয়ানিয়াগিন স্ট্যানজা’ নামে ডাকা হয়।
আরও পড়ুনঃ
আমাদের মাইকেল মধুসূদন দত্ত কিছু সনেট রচনা করেছিলেন, কিন্তু তা আমার কাছে উপভোগ্য কিছু মনে হয় নি। কবিতার উপভোগ্যতা থাকতে হয়। কবিতা পড়ে যদি মনে হয় শুকনো কুঁড়া চিবোচ্ছি, তাহলে ওই কবিতা মৃত কবিতা। এর দেহ থাকলেও, প্রাণ আছে, এমন দাবি করা যাবে না।
কোনো বিদেশী কবিতা অনুবাদ করার সময়ও এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। মূল কবিতার ভার্স-ফর্ম বা স্ট্যানজা-ফর্ম কেমন, তা আমলে নিতে হবে। ছন্দোবদ্ধ কবিতা বা ছড়ার অনুবাদ, ফ্রি-ভার্স স্টাইলে করলে ভালো দেখাবে না। আবার ফ্রি-ভার্স কবিতার ছন্দোবদ্ধ অনুবাদ করলে, সেটিও ভালো দেখাবে না।
এখানে অনেকে, ফ্রি-ভার্স কবিতা কী তা জানতে চাইতে পারেন। ফ্রি-ভার্স হলো এমন কবিতা, যেগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট ছন্দরূপ নেই। শুধু ভাব আছে। এ ভাবকে শক্তিশালী হতে হয়। অন্যথায় কবিতাটি পরিণত হতে পারে ব্যর্থ গদ্যে।
উদাহরণস্বরূপ এলিয়টের ‘The Love Song of J. Alfred Prufrock’ কবিতাটির কথা বলা যায়। এটি ফ্রি-ভার্সে লেখা কবিতা। কয়েকটি লাইন তুলে দিচ্ছি:
“The yellow fog that rubs its back upon the window-panes,
The yellow smoke that rubs its muzzle on the window-panes,
Licked its tongue into the corners of the evening,
Lingered upon the pools that stand in drains,
Let fall upon its back the soot that falls from chimneys,
Slipped by the terrace, made a sudden leap,
And seeing that it was a soft October night,
Curled once about the house, and fell asleep.”
বাংলা ভাষায় বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, আবদুল গণি হাজারী, হুমায়ুন আজাদ, শামসুর রাহমান, মহাদেব সাহা, হাসান হাফিজুর রহমান, শহীদ কাদরী, রফিক আজাদ, হেলাল হাফিজ, আল-মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, ফরহাদ মজহার, নির্মলেন্দু গুণ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁরা ফ্রি-ভার্সে কবিতা লিখেছেন। আমি নিজেও ফ্রি-ভার্সে কবিতা লিখেছি। আবার ছন্দোবদ্ধ বা আধাছন্দোবদ্ধভাবে, ভালো কবিতা লিখেছেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, প্রমুখ। সুধীন্দ্রনাথ ছন্দে ছন্দে লিখেছেন:
“ক্ষমা? ক্ষমা? কেন চাও ক্ষমা?
নিরুপমা,
আমি তো তোমার ‘পরে করিনি নির্মাণ
অভ্রভেদী স্বর্গের সোপান…”
এখানে উল্লেখ্য যে, কবিতার ছন্দ আর ছড়ার ছন্দ এক জিনিস নয়। ওই দেখা যায় তালগাছের সাথে কবিতার বড় ধরণের পার্থক্য আছে। শামসুল হকের ‘আমি একটুখানি দাঁড়াবো’ আর সুফিয়া কামালের ‘তুলি দুই হাত করি মোনাজাত’ এক প্রাণী নয়।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বসাহিত্য ভাষণ : লিও টলস্টয় | শেষ পর্ব | Leo Tolstoy in Bengali
ফ্রি-ভার্সে লেখা আমাদের কিছু ভালো অনুবাদ কবিতাও আছে। যেমন সুভাষ মুখোপাধ্যায়, তুরস্কের নাজিম হিকমতের একটি কবিতাকে, ফ্রি-ভার্সে চমৎকার অনুবাদ করেছিলেন। কবিতাটি একটু শোনাতে চাই (যদিও অনেকেই শুনেছেন):
জেলে এলাম সেই কবে
তারপর দশবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী
পৃথিবীকে যদি বলো, সে বলবে—
“কিছুই নয়,
অণুমাত্র কাল।”
আমি ব’লব—
“আমার জীবনের দশটা বছর।”
যে বছর জেলে এলাম
একটা পেন্সিল ছিল
লিখে লিখে ক্ষইয়ে ফেলাতে এল হপ্তাও লাগেনি।
পেন্সিলকে জিজ্ঞেস করলে সে বলবে:
“একটা গোটা জীবন।”
আমি বলব:
“এমন আর কী, একটা মাত্র সপ্তাহ।”
যখন জেলে গেলাম
খুনের আসামী ওসমান
কিছুকাল ছাড়া পেল
তারপর চোরাই চালানের দায়ে
ঘুরে এসে ছ’মাস কয়েদ খেটে আবার খালাস হ’ল
কাল তার চিঠি পেলাম বিয়ে হয়েছে তার
আগামী বসন্তে ছেলের মুখ দেখবে।
আমি জেলে আসবার সময়
যে সন্তানেরা জননীর গর্ভে ছিল
আজ তারা দশ বছরের বালক।
সেদিনকার রোগা ঠ্যাং-লম্বা ঘোড়ার বাচ্চাগুলো
বেশ কিছুদিন হ’ল রীতিমত নিতম্বিনী ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে।
কিন্তু জলপাইয়ের জঙ্গল আজও সেই জঙ্গল
আজও তার তেমনি শিশু।
আমি জেলে যাবার পর
দূরবর্তী আমার শহরে জেগেছে নতুন নতুন পার্ক
আর আমার বাড়ির লোকগুলো
এখন উঠে গেছে অচেনা রাস্তায়
যে বাড়ি আমি কখনো চোখেও দেখি নি।
যে বছর আমি জেলে এসেছিলাম
রুটি ছিল তুলোর মত শাদা
তারপর এই রেশনের যুগ
এখানে এই জেলখানায়
লোকগুলো মুঠিভর রুটির জন্যে হন্যে হ’ল
আজ আবার অবাধে কিনতে পারো
কিন্তু কালো বিস্বাদ সেই রুটি।
যে বছর আমি জেলে এলাম
দ্বিতীয় যুদ্ধের সবে শুরু
দাচাউ-এর শ্মশান-চুল্লী তখন জ্বলে নি
তখনও এটম বোমা পড়ে নি হিরোশিমায়।
টুটি-টেপা শিশুর রক্তের মত সময় বয়ে গেল
তারপর সমাপ্ত সেই অধ্যায়
আজ মার্কিন ডলারে শোনো তৃতীয় মহাযুদ্ধের বোল।
কিন্তু আমি জেলে যাবার পর
আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে দিন।
আর অন্ধকারের কিনার থেকে
ফুটপাথে তাদের ভারী হাতের ভর দিয়ে
তারা অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়েছে।
আমি জেলে যাবার পর
সূর্যকে দশবার প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী
আর আমি বারম্বার সেই একই কথা বলছি
জেলখানায় কাটানো দশটা বছরে
যা লিখেছি সব তাদেরই জন্যে
তাদেরই জন্যে, যারা মাটির পিঁপড়ের মত
সমুদ্রের মাছের মত, আকাশের পাখির মত অগণিত,
যারা ভীরু, যারা বীর
যাঁরা নিরক্ষর, যারা শিক্ষিত
যারা শিশুর মত সরল
যারা ধ্বংশ করে
যারা সৃষ্টি করে
কেবল তাদেরই জীবনবৃত্তান্ত মুখর আমার গানে।
আর যা কিছু
ধরো, আমার জেলে দশটা বছর-
শুধুমাত্র কথার কথা ।।
কবিতাটি পুরোটা তুলে দেয়ার কারণ হলো, কিছু বদমাশ সুভাষের এই অসাধারণ অনুবাদটিকে সংক্ষিপ্ত ও বিকৃত করে অনলাইনে ছেড়ে দিয়েছে। গুগলবাজ কবিতাপ্রেমীদের হাত থেকে কবিতাটিকে রক্ষা করার জন্যই মূল বই থেকে এখানে টাইপ করে দিলাম। আশা করি এর প্রকৃত স্বাদ বা বেদনা আপনারা উপভোগ করতে পারবেন।
‘ইউজিন ওয়ানিয়াগিন’-এর আগের পুশকিন আর পরের পুশকিন এক মানুষ নয়। কবিতাটির ৩৮৯-টি সনেট, পুশকিনকে আক্ষরিক অর্থেই রুশ কবিতার মোষে পরিণত করেছিলো। একেকটি স্ট্যানজায়, পুশকিন মানুষের জীবনের নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতাকে যেভাবে কাব্যরূপ দিয়েছেন, তা যে-কারও কাছে অত্যন্ত শৈল্পিক ও অসাধারণ মনে হবে। তাঁর এ কাব্যরূপ, রুশ সাহিত্যে এখনো কবিতার মানদন্ড হিশেবে বিবেচিত হয়।
লিখেছেনঃ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার