আহমদ ছফা আত্মজৈবনিক প্রেমের উপন্যাস “অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী”। দুরদানা আফরাসিয়াব, শামারোখ, সোহিনী নামে তিনজন নারীর বর্ননা উঠে এসেছে বইটায়। প্রথম দিকে প্রেমের দর্শন নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বিশ্লেষণ হয়েছে। এখানে পাঠকের খানিকটা বিরক্তির উদ্রেক ঘটলেও সেটা অযৌক্তিক হবেনা।
তারপর অনেকটা ঝড়ের মতো উঠে আসে দুরদানা আফরাসিয়াবের বর্ননা, আবার চলেও যায়। ষাট-সত্তরের দশকে শার্ট প্যান্ট পরে কোন মেয়ে ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে কিংবা ছুরি বের করে যাকে তাকে হুমকি দিচ্ছে এটা যেমন কল্পনাতীত ঠিক তেমনি এই মেয়েটাই যে সোপার্জিত স্বাধীনতা’র ভাস্কর শামীম শিকদার তা ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করিনি। দুরদানা আফরাসিয়াব তথা শামীম শিকদার’ই ছিলেন আহমদ ছফা’র প্রথম প্রেমিকা।
দুরদানার প্রস্থানের পরে লেখক আহমদ ছফার জীবনে আসেন বাহ্যিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ করার মতো প্রতিভাবান মেয়ে শামারোখ। যদিও ছফা সাহেব শুধুমাত্র তার সৌন্দর্যের সুন্দর বর্ননা ছাড়া বাকি সবক্ষেত্রে স্বভাবের খুঁতটাই তুলে ধরেছেন। যিনি তার রূপে মুগ্ধ করে ছেলেদের যেমন নাকি দড়ি বেঁধে ঘুরাতেন। ঠিক তেমনি অনেক কবি, লেখকের লেখনীর খোরাক হতো শামারোখের সৌন্দর্য। তেমনই একজন কবি ছিলেন শাহরিয়ার। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অনভ্যস্ত হওয়ার কারণে অল্প বয়সেই তিনি প্লুরিসি রোগে আক্রান্ত হয়ে বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
ঠিক তখনই শামারোখের সাথে তার পরিচয় ও প্রনয়ের শুরু। শামারোখের রুপে মুগ্ধ হয়ে তরুণ কবি দারুণ সব কবিতা লিখেছেন ঠিকই কিন্তু ঔষধ সেবনে অনিয়মের কারণে তার অবস্থা পুনরায় সঙ্কটাপন্ন হয় এবং অকালে একজন প্রতিভাবান কবি মৃত্যুবরণ করে। এই শামারোখ হলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সুরাইয়া খানম এবং শাহরিয়ার হলেন বিখ্যাত কবি আবুল হাসান। কবির মৃত্যুর পনেরো দিনের মাথায় শামারোখ এরেক বয়স্ক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন এবং আমেরিকায় থিতু হন।
তবে পুরো উপন্যাসটি লেখক আহমদ ছফা যার কাছে বর্ননা করেছেন সেই সোহিনী চরিত্রের পর্দা উন্মোচন তিনি করেননি। উপন্যাসটি ভালো তবে আহমদ ছফার বইয়ের পাঠকেরা জানেনই তিনি একটু সোজাসাপ্টা লেখায় অভ্যস্ত। সেটুকু একটু হজম করতে হবে।
রিভিউ করেছেন: তামান্না তাবাসসুম তন্বী বিভাগ: ইসলামিক স্টাডিজ সেশন: ২০১৭-২০১৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়