সৈয়দ মুজতবা আলী | রম্য রচনা ও ভ্রমণ কাহিনী | Syed Mujtaba Ali
সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রথম প্রকাশকের সঙ্গে ঝামেলা। তা নিয়ে মামলা হলো। আদালতে মামলায় লড়ার জন্য উকিল দরকার পড়লো তাঁর । তিনি যান ব্যারিস্টার তাপসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। মুজতবা আলী তাঁকে দেখে বললেন, ‘ভাই, আমি এমন একজন কৌশুলী চাই, যে আমার এই মামলাটায় আমায় হারিয়ে দেবে।’
তাপসকুমার রসটা ধরতে পেরে বললেন, ‘আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আমি এখনও পর্যন্ত একটা মামলাতেও জিতিনি।’
সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত সৈয়দ মুজতবা আলী স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন,
‘শান্তিনিকেতনের কালোর চায়ের দোকানে সৈয়দ মুজতবা আলী চা খাচ্ছেন। সেখানে হঠাৎই উপস্থিত এক ছাত্রী। তিনি জার্মান ভাষা নিয়ে সদ্য পাশ করেছেন বিশ্বভারতী থেকে। সৈয়দ মুজতবা আলী তখন জার্মান পড়াতেন। বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপক তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মেয়েটির সঙ্গে। শুনেই সৈয়দ মুজতবা আলী বললেন, ‘ইস, আমি জার্মান পড়াতে এলুম আর সুন্দরী তুমি বেরিয়ে গেলে। আচ্ছা দেখি কী রকম জার্মান শিখেছ। একটা খিস্তি করো তো জার্মান ভাষায়। ভয় নেই, কেউ এখানে বুঝবে না।’
শান্তিনিকেতনের অন্যান্য দর্শন বস্তুর সঙ্গে দর্শনীয় হয়ে উঠেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলীও।’
আরও পড়ুনঃ দেশে বিদেশে ভ্রমণ কাহিনী মুজতবা আলী PDF রিভিউ
একবার একটি দল তাঁকে দেখতে আসায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘শান্তিনিকেতনে এসেছ কী কী দেখতে? ক্ষিতিমোহনবাবুকে দেখেছ? ওরা বললে, দেখেছি। নন্দলাল বসুকে? হ্যাঁ, দেখেছি। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে? তাঁকেও দেখেছি।’ তার পরেই তাঁর উক্তি, ‘ওঃ বাঘ সিংহ সব দেখে, এখন বুঝি খট্টাশটাকে দেখতে এসেছ।’
ভরা মজলিস জমাতে মুজতবা আলীর জুড়ি ছিলোনা। যথারীতি এক বিয়েবাড়িতে তাঁকে ঘিরে আসর জমে উঠেছে। নতুন আত্মীয়স্বজন জামাইয়ের সঙ্গে শাশুড়ির পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। শ্যালক-শ্যালিকারা নতুন জামাইয়ের সঙ্গে মশকরা করছে। হঠাৎ সৈয়দ মুজতবা আলী শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে বসল, ‘আপনি কিছুক্ষণ আগে জলে পড়ার কোনও শব্দ শুনতে পেয়েছেন কি?’ শাশুড়ি কিছু বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলেন।
‘অগ্নিসাক্ষী করে এই যে আপনি আপনার মেয়েকে জলে ফেলে দিলেন, তার কি কোনও আওয়াজ শুনতে পাননি?’ খোলসা করলেন মুজতবা আলী।
সৈয়দ মুজতবা আলীর “শ্রেষ্ঠ রম্যরচনা” গ্রন্থ প্রকাশিত হবে। প্রকাশক হলেন সবিতেন্দ্রনাথ। তো বইয়ের জন্য চুক্তি হল।
সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা মতো চুক্তির কিছু দিন পরে প্রকাশক দল বেঁধে গেলেন শান্তিনিকেতনে সৈয়দ মুজতবা আলীর ডেরায়। মুজতবা আলী ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন এরপর স্ত্রীকে ডাকতে শুরু করলেন এই বলে, ‘ও বৌ, এসে দ্যাখো, আমার কলকাতার পাবলিশাররা এসেছে।’ তাঁর স্ত্রী তো এমন সম্বোধনে অতিথিদের সামনে সংকুচিত। একটু কুণ্ঠিত ভাবে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না, উনি বৌ বৌ করে এমন ডাকেন, যাঁরা আসেন তাঁরা এবং আমি সবাই লজ্জায় পড়ি।’
বেশী বয়সে বিয়ে করেছিলেন বলে সবসময়ই আক্ষেপ করতেন মুজতবা আলী। বলতেন, বেশী বয়সে যে পতিরা বিয়ে করে তারা ভীষণ বউ প্রেমী হয়। আমার অবস্থা হয়েছে তেমনই।
এক সময়ে অ্যালসেশিয়ান জাতের কুকুর পুষছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। । পোষা কুকুরটাকে ডাকতেন ‘মাস্টার’ বলে।
কারণ সৈয়দ মুজতবা আলী একটু বেশী খেতে আরম্ভ করলেই কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করতে শুরু করত। মানে মনিবের উপরে মাস্টারি করত। মুজতবা আলী কুকুরটাকে নিয়ে এক লেখায় লিখেছিলেন, ‘গত জন্মে এ ব্যাটা নিশ্চয় আমার চাচা ছিল।’
‘হাঁড়িতে ভাত থাকলে সাঁওতাল কাজে যায় না। আর আমার ড্রয়ারে টাকা থাকলে আমি লিখি না!’ নিজের লেখালেখি সম্পর্কে এক লেখায় লিখেছিলেন তিনি।
সূত্র-কলেজ স্ট্রীটে সত্তর বছর / সবিতেন্দ্রনাথ
জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাই কিংবদন্তি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রতি।
লিখেছেনঃ আহমেদ ইশতিয়াক
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত