একজন হুমায়ূন ফরিদী ও সংশপ্তক নাটক
হুমায়ূন ফরিদির অভিনয়ক্ষমতা সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা জানেন তিনি কোন মাপের অভিনেতা। সংশপ্তক নাটকে অভিনয়ের করার পূর্বে তিনি বহু মঞ্চ এবং টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। সংশপ্তকে তিনি ভয়ংকর কুটিল এবং ধুরন্ধর এবং একই সাথে কিছুটা কমেডি ধাঁচের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যার নাম গাজী মোহাম্মাদ রমজান, চরিত্রটিকে তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সেটা অতুলনীয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় একটি চরিত্রের কথা মনে পড়লেই সেই “কানকাটা রমজান” এর কথা সামনে আসবে। আজকে বাংলাদেশের সেরা একজন অভিনেতার সংশপ্তক নাটকের স্মৃতিচারণ করতে চাই।
শহীদুল্লাহ কায়সারের দুটো কালজয়ী উপন্যাস সারেং বৌ এবং সংশপ্তক তাকে বাংলা সাহিত্যে ওমর করে রেখেছে। ১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন নির্মাণ করেন “সারেং বৌ” সিনেমা এবং আরও কিছুদিন পর ১৯৮৮ সালের দিকে সংশপ্তক নাটকটিকে টিভি নাটকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
যদিও ১৯৭১ সালে প্রথমবার নাটকটির নির্মানকাজ শুরু হয়েছিল কিন্তু মাত্র চার পর্ব প্রচারের পরপরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং নাটকটিও বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৮৮ সালের দিকে যখন আবার নির্মাণ কাজ শুরু হয় তখন দেশে শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা। তারপর আবারও থমকে যায় নির্মাণকাজ। যাইহোক বন্যা শেষ হলে নাটকটা আবার শুরু হল এবং নাট্যরূপ দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন ইমদাদুল হক মিলন। প্রথমদিকের পর্বগুলো পরিচালনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন এবং আল মনসুর কিন্তু শেষের দিকের পর্বগুলিতে ছিলেন মোহাম্মদ আবু তাহের।
ছোট্ট একটি গ্রাম বাকুলিয়া, গ্রামের এক প্রান্তে মিয়া বাড়ি, আরেক প্রান্তে সৈয়দ বাড়ি। মিয়া বাড়ির প্রধান এ অঞ্চলের জমিদার খলিলুল্লাহ খান (মিয়ার ব্যাটা) আর সৈয়দ বাড়ির প্রধান দিলারা জামান আপন ভাইবোন। দিলারার মেজো ছেলে তারিক আনাম আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, প্রগতিশীল ও আধুনিক শিক্ষিত যুবক। এই বাড়িতে আরও থাকে দিলারার পীরের মেয়ে সুবর্না মুস্তফা (রাবেয়া ওরফে রাবু)। খলিলুল্লাহ খানের নায়েব অত্যন্ত ধুরন্ধর হুমায়ুন ফরিদী (রমজান)। খলিল ট্র্যাডিশনাল বংশগরিমায় অহংকারী বদমেজাজী জমিদার। প্রজাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে তার খুব একটা চিন্তাভাবনাও নাই।
এদের পাশাপাশি গ্রামে আরও আছে খেটে খাওয়া রাইসুল ইসলাম আসাদ (লেকু), তথাকথিত নষ্টা ও সমাজচ্যুত ফেরদৌসী মজুমদার (হুরমতি), আদর্শবাদী স্কুল শিক্ষক মামুনুর রশিদ আর নিম্নবিত্ত পরিবারের সদ্য কিশোর অঞ্জন (মালু)।
মালু ওরফে আব্দুল মালেক চরিত্রে অঞ্জনের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় সবার মন কারে। আরেকজন শিশুশিল্পী যে মালুর খেলার সাথি হিসেবে অভিনয় করেছে সে ছিল তারিন। তারিনের চেয়ে নিসন্দেহে অঞ্জনের অভিনয় শতগুণ ভালো ছিল। একদম বাস্তবিক ছিল তার অভিনয় কিন্তু আফসোস তাকে আমরা আর কাজে লাগাতে পারিনি।
লেকু চরিত্রে অভিনয় করেছে রাইসুল আসাদ যে নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দী। খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত চরিত্রে তার সমকক্ষ কেউ নেই। মামুনুর রশিদ, তারিক আনাম এবং সুবর্না মুস্তফার অভিনয় চমৎকার।
এই নাটকের ইন্ট্রো অংশটা (যেখানে কলাকুশলীদের নাম দেখানো হয়) ছিল তখনকার সময়ের জন্য ব্যাতিক্রম কেননা তখন পুরো নাটকটি ধারণ করে তারপর সেখান থেকে চুম্বক অংশ নিয়ে ইন্ট্রোডাকশন বানানো অসম্ভব হতো কারণ প্রতি পর্ব ধারনের সময় পেতো প্রায় ১৪দিন যেটা পারফেক্ট ইন্ট্রো বানানোর সনি যথেষ্ট নয়। এই নাটকের ইন্ট্রো ভিডিওগুলো আলাদাভাবে ধারণ করা হয়েছিলো যার কারণে মেইন নাটকে সেইম সিন পাওয়া যায়না।
সংশপ্তক নাটকের শেষ পর্ব ধারণ করা হয়েছিলো গাজীপুরে যেখানে হাজারখানেক লোকের সামনে শট নেয়া হয় হেলিকাপ্টারের মাধ্যমে। হেলিকপ্টারের পাখার বাতাসে কয়েকটা ঘর খতিগ্রস্থ হয়েছিলো এবং পরে বিটিভি সেটার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলো।
শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস সংশপ্তক pdf free download করুন
বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে যে কেউ যেকোনো সময় বিনামূল্যে যেকোনো বই ধার করে পড়তে পারে।
বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বই ধার করতে এখানে ক্লিক করুন
বইয়ের ফেরিওয়ালায় আপনার লেখা প্রকাশ করতে চাইলে অথবা কোন বই রিভিউ করতে চাইলে লেখা পাঠান