বই : যখন ছোট ছিলাম
লেখক : সত্যজিৎ রায়
প্রকাশক : আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা
প্রকাশকাল : পয়লা বৈশাখ, ১৩৮৯
ঘরানা : স্মৃতিচারণ/আত্মজৈবনিক
প্রচ্ছদ : সত্যজিৎ রায়
পৃষ্ঠা : ৭৯
মুদ্রিত মূল্য : ১২৫ রুপি
বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের অন্যতম ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে ভাবলে মাথায় প্রথমেই কোন জিনিসটা আসে? গম্ভীর চেহারার সুপুরুষ একজন মানুষ ভারি কণ্ঠস্বরে সাক্ষাতকার দিচ্ছেন, এমনটাই। অন্তত আমার মাথায় তাই আসে। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে বহু গুণের অধিকারী এই মানুষটারও একটা রঙ্গিন শৈশব ছিলো। নানা মজার ঘটনা ছিলো তাঁর শিশু জীবনের। আর সেগুলো নিয়েই তাঁর এই স্মৃতিচারণ মূলক বই ‘যখন ছোট ছিলাম’। এই বইয়ে মি. রায় তাঁর ফেলে আসা শৈশবের নানা ঘটনা অত্যন্ত উপভোগ্য করে পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন।
‘যখন ছোট ছিলাম’ একটা পূর্ণাঙ্গ বই আকারে রূপ নেয়ার আগে জনপ্রিয় মাসিক ‘সন্দেশ’ পত্রিকার দুটো সংখ্যায় পর্ব আকারে বেরিয়েছিলো। এরও বহুদিন বাদে মি. রায় তাঁর শৈশবকে মলাটবন্দি করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন ব্যাপারটা আরো পরিবর্ধিত হয়, আরো অনেকের কথা উঠে আসে সেখানে আর সেই সাথে যোগ হয় মি. রায়ের নিজের আঁকা অনন্য কিছু ছবি।
আরও পড়ুনঃ একেই বলে শুটিং PDF সত্যজিৎ রায়
শুধু তাই না, এই বইয়ে লেখকের শৈশব সম্পর্কিত বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ফটোগ্রাফও যোগ করা হয়েছে। যার মধ্যে একটা দেখে আমি রীতিমতো শিহরিত হয়েছি। সেটা ছোট্ট মি. রায়ের অটোগ্রাফের খাতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বহস্তে লেখা একটা কবিতা। শুধু রবীন্দ্রনাথই নন, মি. রায় ঐ বয়সেই আরো অনেক বিখ্যাত মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। সেটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছুও না। তিনি নিজেই বিখ্যাত পরিবারের সদস্য। রায় পরিবার। সমগ্র বাংলা সাহিত্যে যাঁদের অবদান ঠাকুর পরিবারের মতোই স্বীকার করা হয়।
‘যখন ছোট ছিলাম’ বইয়ে মূলত সত্যজিতের পিতা সুকুমার রায় মারা যাবার পর থেকে তিনি ও তাঁর মা কোন কোন জায়গায় থেকেছেন, কোথায় কোথায় বেড়াতে গেছেন আর তাঁদের আত্মীয়বর্গদের কথাই বলা আছে। দাদু উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর প্রতিষ্ঠা করা গড়পাড়ের বাড়ি ও ভবানীপুরে মামার বাড়িতেই সত্যজিতের শৈশবের অনেকটা কেটেছে। অসামান্য প্রতিভাধর ও সামাজিক প্রতিপত্তিশালী অনেক আত্মীয়র কথাই এই বইয়ে তিনি লিখেছেন। ছোট্ট মি. রায়ের চোখে তাঁদেরকে যেমনটা দেখেছেন, তেমনভাবেই লিখেছেন। তবে সবচেয়ে বেশিবার বলেছেন ছোটকাকা সুবিমল রায়ের কথা। খানিকটা বোহেমিয়ান এই মানুষটাকে কেন যেন আমারো ভালো লেগে গেছে।
আরও পড়ুনঃ দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাস PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এই বইয়ের দ্বিতীয় ভাগে এসে সত্যজিৎ রায় বর্ণনা করেছেন বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে তাঁর ছাত্রজীবনের কথা। এখানকার শিক্ষকদের ও তাঁর সহপাঠীদের সাথের অনেক অম্লমধুর স্মৃতি পাঠকদের তিনি শেয়ার করেছেন নির্দ্বিধায়। তাঁর স্কুল জীবন সম্পর্কে যতো পড়ছিলাম ততোই মজা পাচ্ছিলাম।
ব্যক্তিগত মতামত:
ফেলুদা, প্রোফেসর শঙ্কু আর তারিণীখুড়োর মতো কালজয়ী চরিত্রগুলোর স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়। কিশোর বয়স থেকে এগুলো পড়ে বড় হয়েছি। সিডিতে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘পথের পাঁচালী‘ মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। আজও, এই ২০১৭ সালেও ভূতের রাজার সাথে গুপী-বাঘার কথোপকথন দেখলে বারবার তাঁকে স্যালুট করতে ইচ্ছা হয়। ফেলুদা আর শঙ্কুর পাতায় পাতায় তাঁর আঁকা ছবি এখনো দু চোখ ভরে দেখি।
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের সেরা সাতটি বই রিভিউ
ফেলুদার থীম দীর্ঘদিন ধরে আমার সেলফোনের রিংটোন, যা মি. রায়েরই করা। এত্ত এত্ত গুণ! কিন্তু গুণের আধার একজনই। মি. রায়। সত্যজিৎ রায়। অসামান্য এই মানুষটার ছোটবেলা সম্পর্কে জানতে কার না আগ্রহ থাকবে! আমারো ছিলো। সেটা পূর্ণও করলাম। ভালো লেগেছে। অসম্ভব ভালো লেগেছে।
শ্রদ্ধা জানবেন, মি. রায়!
রেটিং : ৫/৫
লিখেছেনঃ শুভাগত দীপ
বইঃ যখন ছোট ছিলাম [ Download PDF ]
লেখকঃ সত্যজিৎ রায়।
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সত্যজিৎ রায় এর অন্যান্য রচনা সমগ্র