বাদশাহ নামদার রিভিউ PDF হুমায়ূন আহমেদ | Badshah Namdar Humayun
বইঃ বাদশাহ নামদার
লেখকঃ হুমায়ূনআহমেদ
প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৩৩টি
বইটি উৎসর্গ করেছেন ছোট ছেলে নিনিত হুমায়ূনকে, যেখানে হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন-
“আমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে।…… এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।”
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
তাহলে একটু ঘুরে আসি বইটির ভেতরে………
মোগল সাম্রাজ্যের অধিপতি সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ূনের জীবনকাহিনী উঠে এসেছে বাদশাহ নামদার বইটিতে।
হুমায়ূনের জন্য বাবরের জীবনদান।
হুমায়ূনের সিংহাসন গ্রহণ। তার দিনভিত্তিক পোশাক (শনিবার একরঙের, রবিবার সবাই অন্য আরেক রঙ….)
এমন অনেককিছুই লেখক উপন্যাসে তুলে এনেছেন।
যা উপন্যাস হিসেবে পড়লেও মোগল ইতিহাসের সত্যি কাহিনী।
বাদশাহ নামদার ইতিহাসভিত্তিক বই হলেও একজন পাঠকের এই বইটি পড়তে পড়তে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হবে না যে এটি সিলেবাস ভিত্তিক চিরাচরিত কোন ইতিহাসের বই।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সম্রাট হুমায়ূন চরিত্রটি লেখক হুমায়ূনের অন্যান্য চরিত্রের সাথে এতোই সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলেছেন যে পাঠক হিসেবে ভুলেই যেতে হয়, এ কোন সম্রাটের জীবনী। যে একজন সম্রাট হয়েও খেয়ালের বশে রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে।তিনি এমনই এক প্রেমিক যিনি সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের হামিদা বানুর মত চপল মেয়ের প্রেমে পড়েন। হামিদা বানু রাজি না হলে তাকে বিবাহে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন!!
আরও পড়ুনঃ দেয়াল উপন্যাস হুমায়ুন আহমেদ PDF রিভিউ
বলা বাহুল্য এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আকবর দ্যা গ্রেট।
সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালীপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না। এমনকি মোঘল চিত্রকলার শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরেই। সম্রাট হুমায়ূনের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা ছিল মানুষকে ভালবাসার এবং তাদের আকৃষ্ট করার জাদুকরী ক্ষমতা। আর এই জাদুকরী ক্ষমতার কারনেই হুমায়ূনের মতো মানুষরা যা কিছু হারায় সবই ফিরে পায়। তাই বার বার হেরে গিয়েও সম্রাট ফিরে পেয়েছিলেন তার হারানো সাম্রাজ্য এবং বজায় রেখেছিলেন মোঘল ঐতিহ্যও।
হাজারো উত্থান- পতন, দেনা- পাওনা, হারানো- ফিরে পাওয়ার মাঝেও , হুমায়ূনের ছোট মেয়ে আকিকা বেগমের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। তার প্রতি সম্রাটের প্রগাড় ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। অবশ্য তাকেও শেষ পর্যন্ত মেরেছিলেন আকবর।
শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন।
বইটা পড়বার মাঝে মাঝে আমার মনে একটি রহস্য কাজ করেছে। সম্রাট হুমায়ুনের ঘটনাগুলো কি আসলেই এতো রহস্যময়?? নাকি লেখক হুমায়ূন তার নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্টের সাথে সম্রাট হুমায়ূনের মিল পেয়েছেন বলেই মনের মাধুর্য মিশিয়ে বইটি লিখেছেন?? যেহেতু লেখক একবার বলেছিলেন- “রহস্যের মাঝেও থাকে রহস্য” অথবা সম্রাট হুমায়ুনের জীবনের বিভিন্ন চালচলন থেকে সেগুলোই তুলে নিলেন যা লেখক তার নিজের মধ্যে খোঁজে পান?? সম্পুর্ণ রহস্যটি বুঝতে হলে অবশ্যই বইটি পড়ার বিকল্প নেই।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ত্রিশ ধারাবাহিক নাটক
আমার নোটলাইনঃ
আমি যেকোনো বই পড়লে সেই বই থেকে আমার পছন্দের নোটলাইন খোঁজা এটি একটি অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এগুলো আবার কিছু বিভিন্ন সময় কথা বলার সময় রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগে। তাই বাদশাহ নামদার উপন্যাসটিতেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি।
(পৃষ্টা উল্লেখ্য বাম পার্শে)
১২-পিতার প্রতি পুত্রের উপহার কখনো সামান্য হয়না।
১৭-ভাগ্য বিচিত্র মানুষ নিয়ে খেলতে পছন্দ করে।
২১- সঠিক সিদ্ধান্তের ক্ষমতা আছে শুধুই আল্লাহপাকের। মানুষকে মাঝে মাঝে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রমাণ করতে হয় সে মানুষ।
৫৬-সম্রাটদের ভাতৃস্নেহ থাকে না। ভাতৃভীতি থাকে।
৬৫-মানুষের পরিচয় লেখা থাকে ঠোঁটে। ঠোঁট ঢাকা মানুষ হলো পরিচয়হীন মানুষ।
৭৭- চিকিৎসক এবং সম্রাটের কাছে সবসময় সত্যি বলতে হয়।
৮২-বড় মঙলের স্বার্থে ক্ষুদ্র অমঙল গ্রহণ করতে হয়।
৯০-শিশুদের সব কাজ গুরুত্বের সাথে দেখতে নেই।যথাসময়ে সে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
৯৫-সেই ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান যে বুদ্ধিতে নিজ পুত্র-কন্যার কাছে পরাস্ত হয়।
৯৬-আনন্দেরও এক ধরনের ক্লান্তি আছে।
১০১-পায়ে সামান্য কাঁটা ফুটলেও হাতির মতো প্রাণী অচল হয়ে যায়।
১০৯- প্রচন্ড মানসিক চাপে মানুষের মাথা এলোমেলো হয়ে যায়, তখন সে নানান ধরনের ভ্রান্তির মধ্যে পড়ে
১১২-পৃথিবীর পবিত্রতম বস্তু হলো গভীর দুঃখ থেকে নিঃসৃত অশ্রুধারা।
১১৩-মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করার প্রধান সমস্যা হলো, মাঝে মাঝে ভুল-ভ্রান্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করা।
১১৬-অনেক কথা আছে যা আল্লাহ শুনলে ক্ষতি নেই,অন্য কেও শুনলে ক্ষতি আছে।
১২৩-যে কথা কইতে ভয় পায়, তার বিদ্যা নিষ্ফল হয়।
*১২৪- জ্ঞানীদের সামনে কথা বলার অর্থ নিজের মুর্খতা ঢোল পিটিয়ে প্রচার করা।
১৪০-শাহ আব্বাস সারা জীবন প্রশংসনীয় সব কাজ কাজকর্ম করে গেছেন।সেখান থেকেই শাবাশ শব্দটি এসেছে।
১৪৯-দুঃসময়ে কোনো অপমান গায়ে মাখতে হয়না।
১৬৬-শুধুমাত্র নদী জানে সে কোনদিকে যাচ্ছে। তার যাত্রা সমুদ্রের দিকে। মানুষ নদী না বলেই সে কোনদিকে যাচ্ছে তা জানে না।
১৮৫-সবাইকে দিয়ে সবকিছু হয় না বলেই কেউ সম্রাট, কেও পথের ভিক্ষুক।
২০৯-যুদ্ধ এবং প্রেম কোনকিছুই পরিকল্পনামতো হয় না।
২১১- বিশ্বের বিপুর রহস্যের আমরা যেটুকু জানি তাও রহস্যে ঢাকা।
২২৯- রাজা যায় রাজা আসে। প্রজাও যায়, নতুন প্রজা আসে। কিছুই টিকে থাকেনা। ক্ষুদার্থ সময় সবকিছু গিলে ফেলে, তবে ‘গল্প’ গিলতে পারব না। গল্প থেকে যায়।
১৩০_প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার।
বলা বাহুল্য হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বইয়ের অনেক প্রিয় পাঠকের মতে এটি তার শ্রেষ্ঠ বই। আমার নিজেরও এমনটাই মনে হয়েছে। তবে ভিন্ন পাঠক ভিন্ন মত থাকবেই।
লিখেছেনঃ Nayeems Rah’man
বইঃ বাদশাহ নামদার [ Download PDF ]
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র PDF Download করুন