গল্প: প্রাগৈতিহাসিক
লেখক: মানিক বন্দোপাধ্যায়
প্রকাশঃ ১৯৩৭
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
গল্পের প্রধান চরিত্র ভিখু। খুন, ডাকাতি, রাহাজানি এমন কোনো নিকৃষ্ট কাজ নেই যা সে করেনি। সে কাউকেই ভয় করে না। আষাঢ়ের প্রথম দিকে বসন্তপুরে বৈকুন্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করতে গিয়ে সবাই যেখানে ধরা পড়লো, সেখানে কেবল ভিখু ডান কাঁধে বর্শার বেশ ভালোরকম আঘাত পেয়েও পালিয়ে গিয়েছিলো। নয় ক্রোশ দূরে এসে সে পেহ্লাদের বাড়ি আশ্রয় নিতে আসে। পেহ্লাদ তাকে বাড়ি আশ্রয় দেয়নি। দূরে বনের ধারে কুড়ে ঘর করে তাকে থাকতে দিয়েছিলো। তার গায়ের রক্ত খেয়ে বুনো জোঁকেরা স্বাস্থ্যবান হয়েছে ঠিকই কিন্তু অনাহারে অযত্নে থেকেও মুমূর্ষু ভিখু মরেনি।
মরণাপন্ন অবস্থা দেখে একদিন পেহ্লাদ তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। প্রায় একমাস বেশ ভুগে ভিখু মৃত্যুর দুয়ারর থেকে ফিরে আসে। ফলাফল যা হলো, সে তার ডান হাতটি হারিয়েছে। সেটি অকেজো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কি হবে! লোভী এবং দুশ্চরিত্র ভিখু পেহ্লাদের স্ত্রীর দিকে হাত বাড়ায়। এ ঘটনা পেহ্লাদ জানতে পেরে ভিখুকে মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। অকৃতজ্ঞ ভিখু প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকে আর সেই আগুন পেহ্লাদের বাড়ি ছারখার করে দেয়।
ভিখু এরপর শহরে এসে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেয়। ভালোই রোজগার হয় তার। খেয়েদেয়ে সে যেনো আবার স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে। হাতটি অকেজো বলে দুঃখ হলেও তার সেই পুরোনো তেজ, শক্তি, উন্মাদনা যেন আবার ফিরে আসছে। বেপরোয়া এবং উদ্ধত ভিখুর নারী সঙ্গহীন নিরুৎসব জীবন আর ভালো লাগছে না।।
গল্পে ভিখুকে বর্ণনা করতে লেখক বলেছেন,
“পৃথিবীর যত খাদ্য ও যত নারী আছে একা সব দখল করিতে না পারিলে তাহার তৃপ্তি হইবে না”
আরও পড়ুনঃ মা উপন্যাস ম্যাক্সিম গোর্কি PDF রিভিউ
ভিখু তার পাশেই পাঁচি নামের একজনকে পছন্দ করে। সেও তার মতই ভিক্ষা করে। তার ভিক্ষার অবলম্বন হলো একটি পা জুড়ে দগদগে ঘা। অষুধ দিলেই সেরে যায় কিন্তু ভিক্ষা করতে হলে তো পা সারালে চলে না!
ভিখু তার সাথে ভাব জমাতে চেষ্টা করে কিন্তু পাঁচি যে বসির নামের একজনের ঘরনি।।
ওদিকে ভিখু চিরকাল যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। যে করেই হোক ছিনিয়ে নিয়েছে।
অতঃপর একরাতে লোহার শিক দিয়ে হিংস্র ভিখু একহাতেই বসিরকে নির্মমভাবে খুন করে। পাঁচিকে জোড়পূর্বক নিয়ে চলে যায়। জঙ্গলের পথে পায়ে ঘা নিয়ে পাঁচি হাটতে পারে না তাই ভিখু তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে বিজয়ীর মত উল্লাস করে।।।
আরও পড়ুনঃ হাসান আজিজুল হক ছোটগল্প PDF রিভিউ
নিজের চাহিদা পূরনে মানুষ কতটা নিচ হতে পারে তা এ গল্পে ভিখু চরিত্রের মাধ্যমে উঠে এসেছে। পাঠক ভিখুকে তার চরিত্রের জন্যে মনে রাখবে। রোমাঞ্চিত হবে। ঘৃনা করবে। মানিক বন্দোপাধ্যায় গল্পের ইতি টেনেছেন এই বলে যে,
“যে ধারাবাহিক অন্ধকার মাতৃগর্ভ হইতে সংগ্রহ করিয়া দেহের অভ্যন্তরে লুকাইয়া ভিখু ও পাঁচি পৃথিবীতে আসিয়াছিল এবং সে অন্ধকার তাহারা সন্তানের মাংসল আবেষ্টনীর মধ্যে গোপন রাখিয়া যাইবে তাহা প্রাগৈতিহাসিক। পৃথিবীর আলো আজ পর্যন্ত তাহার নাগাল পায় নাই, কোনদিন পাইবেও না।”
অর্থাৎ যে জৈবিক তাড়না, লোভ লালসা পাঁচি ও ভিখুর তথাপি সমাজের কিছু মানুষের জন্মগত ভাবে রয়েছে তা তাদের পরবর্তি প্রজন্মেও সঞ্চারিত হয়ে থাকবে। এতো প্রাগৈতিহাসিক কাল ধরে চলে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে…।
লেখা অনেক বড় হয়ে গেলো। প্রাগৈতিহাসিক গল্পটি পড়তে পারেন ভালো লাগবে।
লিখেছেনঃ Bornaly Fatema
বইঃ প্রাগৈতিহাসিক [ Download PDF ]
লেখকঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর ছোট গল্প সমগ্র pdf download করুন