অধ্যাপক ডঃ নেহাল করিম
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
চার বছরের একদম শেষে এসে শ্রদ্ধেয় স্যারের ক্লাস পাই। আমাদেরকে পড়িয়েছেন- “Understanding Social Change in Bangladesh”. কি পড়িয়েছেন, কেমন পড়িয়েছেন এগুলো নিয়ে কোন কথা বলার দুঃসাহস করছি না। তবে আমি এই ইউনিভার্সিটি লাইফে সব থেকে বেশি মোটিভেটেড হয়েছি, সব থেকে বেশি শিক্ষা অর্জন করেছি স্যার এর ক্লাস থেকে। পেয়েছি অনেক লাইফ চেঞ্জিং উপদেশ, জীবন দর্শন সম্পকিত কিছু কথা যেগুলোকে আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন বা জ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি নিঃসন্দেহে।
এমনিতে সবসময় ক্লাসে মাঝেরদিকে বসলেও স্যার এর ক্লাসে চেস্টা করেছি একটু আগে গিয়ে সামনের দিকে বসতে। স্যারের মহামূল্যবান কথা গুলো আমি চেস্টা করেছি লেকচারের মাঝে ছোট ছোট বক্স করে টুকে রাখার। তবে অনেক কথার মাঝেও যেগুলো আমাকে বেশি প্রভাবিত করেছে এবং একটা পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি গড়তে সাহায্য করেছে সেগুলোই উল্লেখ করছি—
“সমাজবিজ্ঞান পড়ার মূল উদ্দেশ্যে হলো সংস্কার মুক্ত হওয়া। কিন্তু তোমাদেরকে চেক করলে অনেকের মাঝেই তাবিজ পাওয়া যাবে, কি সমাজবিজ্ঞান শিখবা তোমরা?”
“কিছু মানুষ চেয়ার (পদ) কে মহিমান্বিত করে, আবার স্বয়ং চেয়ার বা পদ ই কিছু কিছুু মানুষকে মহিমান্বিত করে।”
“যার যার বেড়ে ওঠার উপর তার আচার আচরন প্রতিফলিত হবে।”
“যেখানেই তুমি যাবে, ভেবে নাও তোমার উপস্থিতি সেখানে আনন্দ দিবে কিনা। যদি না দেয়, যেও না।”
আরও পড়ুনঃ দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম এর কিছু উক্তি
“ফার্স্ট জেনারেশন শিক্ষিত হয়ে বিদ্যা অর্জন করা যায়। কিন্তু সভ্য হওয়া যায় না। সভ্যতা লাভ করতে হলে কমপক্ষে চার পুরুষ শিক্ষিত হতে হবে।”
“জীবনে যা কিছু করো, তার একটা উপযোগিতা থাকতে হবে, আন্তরিকতার সাথে করতে হবে।”
“যার যা স্বার্থ যে যে মাধ্যম দ্বারা পরিচালিত, সেটাই তার আদর্শ।”
“শর্টকাট কোন রাস্তা নাই, শর্টকাট রাস্তা দিয়ে গেলে বিপদে পড়তে হয়।“
“ঘড়ি ধরে চলবে, কোনদিন ঠকবেনা।”
“হারিয়ে গেলে না পাওয়ার আশায় থেকে যদি পেয়ে যাই তাতে আনন্দ বেশি।”
“বর্তমানে যে যে অবস্থানে আছ সেখানে থেকেই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।”
“যুক্তি দ্বারা চালিত হও, আবেগ দ্বারা তাড়িত হইওনা”
“মতলবের সাথে আর যাইহোক শ্রদ্ধা থাকেনা।”
“১২ টি মা একটি সন্তানকে লালনপালন করতে পারে, কিন্তু ১২ টি সন্তান একটি মাকে লালনপালন করতে পারেনা। সন্তানরা অক্ষম।”
“দুর্নীতিবাজদের আত্মসম্মানবোধ থাকে না।”
আরও পড়ুনঃ সরদার ফজলুল করিম : আমাদের কালের বাতিঘর
“সূর্য যেদিক থেকেই উঠুক, মানুষ তাকাবেই। প্রশ্ন সেটি না, প্রশ্ন হল কেন দক্ষিণ দিক থেকে সূর্য উঠলনা?”
“যে কিনা লন্ডন শহর ঘুরে এসেছে সেতো ঢাকা শহর দেখে চমকাবেনা।“
“কার কেমন বিয়ের প্রস্তাব আসে তার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে তার ওজন।”
“কেউ যদি পাঁচজন জাতীয় অধ্যাপকের নাম বলতে পারো তাহলে তাকে আমি চাইনিজ খাওয়াব!“
“বাগানে একটি গাছে ফুল ধরলেই তাকে ফুলের বাগান বলা যায়না।”
“সবার চিন্তা কত দ্রুত ধনী হওয়া যায়, বাড়ি-গাড়ি পাওয়া যায়। উন্নয়নের কোন চিন্তা নাই।”
“ছোটবেলায় ডাংগুলি খেলে বড় হয়ে এখন গল্ফ খেলে। কি পরিবর্তন!”
“ঢাকা শরের কোন বাসে পিছনের হেডলাইট জ্বলেনা। যেদিন দেখাতে পারবা একটা বাস রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে প্যাসেঞ্জার উঠায়, সেদিন আমি তোমাদের চায়নিজ খাওয়াবো “
“যার যার বেড়ে ওঠার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে তার মূল্যবোধ।”
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত
“3 words that can define Bangladesh – তদন্তনাধীন, প্রক্রিয়াধীন, বিচারাধীন। “
“আমি Guarantee দিয়ে বলবো- আন্তর্জাতিক (……………..) দিবস শুধু এদেশে পালিত হয়, বাকিরা এগুলোর খবরও রাখে না।”
“বাংলাদেশের কোন সিস্টেম কাজ করেনা, তুমি একটা সিস্টেম আমাকে দেখাও যেটা সঠিকভাবে কাজ করতেছে তাহলে তোমাকে আমি চাইনিজ খাওয়াবো “
“বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বানাইয়া প্রান্তিক জনগনের কি উন্নতি হইছে?যতদিন না দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত উন্নয়নটা পৌঁছায়, সেটা কোন উন্নয়নই না”
“আমাদের প্রধান সমস্যাগুলো হলোঃ
-আত্মমর্যাদার অভার
-নৈতিকতাবোধের অভার
-মানবিকগুনাবলির অভার
-মার্জিতবোধের অভার।”
শ্রদ্ধেয় স্যার এর প্রত্যেকটা কথাই আমি চেস্টা করব আজীবন মনে রাখতে, মেনে চলতে। আসলে এই সমাজবিজ্ঞান বিভাগ আমাকে একটা “ডিফরেন্ট ওয়ে অফ লাইফ” উপহার দিয়েছে। একটি চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি শিখিয়েছে। যার জন্য আমি এই বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞ আমার সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের প্রতি। আমি কৃতজ্ঞ।
শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা আামার সকল #শিক্ষকদের প্রতি।
ভালোবাসার #সমাজবিজ্ঞান
লিখেছেনঃ মারিয়া আফরোজ (সংকলিত ও পরিমার্জিত)
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বইয়ের ফেরিওয়ালায় আপনার লেখা প্রকাশ করতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন।
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
জনপ্রিয় ও সেরা কিছু বই রিভিউ ও PDF Download করুন