দেশে বিদেশে ভ্রমণ কাহিনী মুজতবা আলী PDF রিভিউ | Deshe Bideshe PDF
বইয়ের নাম: দেশে বিদেশে
লেখকের নাম: সৈয়দ মুজতবা আলী
বইয়ের ধরণ: ভ্রমণ কাহিনী
প্রথম প্রকাশ: ১৯৪৮
চিত্রের বইয়ের প্রকাশকাল: একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২
প্রকাশক: স্টুডেন্ট ওয়েজ
লেখক পরিচিতি:
“বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না” এই রকম একটি বিতর্কিত উক্তির জেড়ে যে ব্যক্তি বিতর্কের উর্ধ্বে রয়েছেন তিনি বিখ্যাত রম্য এবং ভ্রমণ সাহিত্যলেখক সৈয়দ মুজতবা আলী।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ এবং পাকিস্তান আমলের বাংলার মুসলিম সাহিত্য সমাজের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি একাধারে একজন সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং ভাষাবিদ। ১৯০৪ সালের ১৩ ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সৈয়দ মুজতবা আলী পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের কাজের সুবাদে তিনি কাবুলে অধ্যাপনার কাজ করেছেন। শবনম, দেশে বিদেশে, চাচা কাহিনী ইত্যাদি অসংখ্য জনপ্রিয় গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। প্রায় ২২টি ভাষায় পাণ্ডিত্য ছিল সৈয়দ মুজতবা আলীর। ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার
কাহিনী সংক্ষেপ:
গল্পের শুরুটা হয়েছিল সোজাসাপ্টা ভাবেই।
হাওড়া স্টেশন, পশ্চিমবঙ্গ। ভারতবর্ষে তখন ব্রিটিশ রাজ। গল্পের ট্রেনটি যাবে পেশোয়ার। সেই ট্রেনের এক কামরায় চড়ে বসেছেন এক প্রাণবন্ত ফিরিঙ্গি, তার সাথে আরো কয়েকজন পাঞ্জাবি সর্দারজি। এই কামরাতেই রয়েছের গল্পের লেখক। একজন অমীত প্রতিভাবান বাঙালি তরুণ লেখক। সেই তরুণ লেখক বিশ্বভারতী থেকে স্নাতক শেষে যাচ্ছেন আফগান মুলুকের শহর কাবুলে। উদ্দেশ্য; কাবুলের স্কুল, কলেজ, মক্তব ও মাদ্রাসাগুলোতে ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার শিক্ষা দেয়া।
গল্পে যেই পাঞ্চগুলো থাকা দরকার সেটার জন্য অবশ্য পাঠককে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, অবশ্য সে অপেক্ষায় মধূরেন সমাপয়েৎ যে হবে সে আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি। নামডাকহীন এক তরুণ লেখকের এ গল্পটাই কিন্তু একটা সময়ে হয়ে উঠেছে বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তি ভ্রমণকাহিনী।
আরও পড়ুনঃ কমলাকান্তের দপ্তর PDF বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
হাওরা থেকে পেশোয়ার অবধি অনেক গল্প, সুরেলা স্মৃতি বেরিয়েছে লেখকের কলম থেকে। নদী সবুজের শ্যামলিমা বাংলা থেকে পাথর, পাহাড় আর বরফের দেশ পাঠান মুলুকে যাওয়া দৃশ্যকল্পগুলো লেখক সাজিয়েছেনের অত্যন্ত নিপুণ হাতে। হাওড়ার ট্রেন থেকে পাঞ্জাবি সর্দারজির মুড়ির টিন বাস কিংবা পাঠান, আফ্রিদি বা শিনওয়ারীর মতো বৃহৎ বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের সংস্কৃতি, লোকায়েত, ঐতিহ্য বা আতিথেয়তা লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন দুর্দান্ত মুন্সিয়ানায়।
জালালাবাদে সরাইখানার বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখক আবার কাবুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। সেদিন সন্ধ্যে নাগাদ কাবুল পৌঁছে লেখক দেখা পেলেন এই প্রবাস যাত্রার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চরিত্রটির। ‘আব্দুর রহমান’; কাবুলের প্রথম দিনটি থেকে শুরু করে শেষ অবধি যিনি ছিলেন লেখকের ছায়া সঙ্গী। লেখকের ভৃত্য থেকে যিনি হয়ে উঠেছিল পরম বন্ধু, আত্মার আত্মীয়, আবার কখনো অভিভাবক। আতিথেয়তায়, উদারতায়, অনুগ্রহে, বিশ্বস্ততায় আবদুর রহমানের তুলনা কেবলই আব্দুর রহমানই।
এই ভ্রমণ কাহিনীর পুরোটা জুড়ে ছিল আবদুল রহমানের অদ্ভুত সব কার্যকলাপ, বাচ্চামো আর প্রতিটি কাজের বিপরীতে নিতান্ত সরল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। আবদুর রহমানের চরিত্রটি পড়ে আসলে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায়না। গল্পের শেষ অংশে লেখক লিখেছেন, ‘বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ি ময়লা, কিন্তু আমার মনে হলো চতুর্দিকের বরফের চেয়েও শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ি, আর শুভ্রতম আবদুর রহমানের হৃদয়।’
আরও পড়ুনঃ ইউরোপ প্রবাসীর পত্র PDF রিভিউ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভ্রমণকাহিনীর গল্প যুগপৎভাবে এগিয়েছে আফগান নৃ-গোষ্ঠীর পারষ্পরিক বিরোধ, শিনওয়ারিদের বিদ্রোহ, মোল্লাদের ফতোয়া, বাদশার সংস্কার কর্মকান্ড এবং বাচ্চা সকাওয়ের মসনদ দখলের মতো ঐতিহাসিক সত্য ঘটনাগুলোকে উপজীব্য করে। পাঠকেরা এখানে জানতে পারবেন পাঠান ও আফ্রিদিদের নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও ইতিহাস, আফগান রাজতন্ত্রের ইতিহাস, পাশাপাশি জানতে পারবেন কাবুল উপত্যকার জীব বৈচিত্র, নদ-নদী, খাদ্যাভাস, উৎসব-উদযাপন, শিল্প ও সংস্কৃতি সম্পর্কে।
বইটিতে রয়েছে ৪২টি অধ্যায়, যার প্রত্যেকটি আপনাকে নিয়ে যাবে ১৯২৭ সালের বরফে ঢাকা আফগান মুলুকের রাজধানী কাবুল নগরীতে। এই বইটিকে শুধু একটি ভ্রমণকাহিনী বললে অনেক কম বলা হবে। এই গ্রন্থে লেখক তুলে ধরেছেন অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা, নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, বাদশা বাবুর থেকে অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তির না জানা অনেক তথ্য উপাত্ত, আর মানব মনের আশ্চর্য সব মনস্তত্ত্ব। এখানে লেখক মাওলানা আলী আসলমের বিদগ্ধ জ্ঞানের আর দর্শনের সাথে পরিচয় করিয়েছেন তাঁর পাঠকদের, জানিয়েছেন বেনওয়া বা দেমিদফের মতো ভিন্ন সংস্কৃতির ফরাসি কুশীলবদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস। গল্পে দীর্ঘদেহী রাশান যোদ্ধা বলশফের আফগান বাদশার জন্য অকৃত্রিম আনুগত্য চোখ ভিজিয়েছে অনেক পাঠককের। বাদশা আমানুল্লাহ’র রাজত্ব ও আফগান মোল্লাদের চক্রান্তের কোন খুঁটিনাটি বাদ যায় নি এই ভ্রমণকাহিনীতে। পুরো ভ্রমণকাহিনী জুড়ে বিভিন্ন চরিত্রের ধারাবাহিক উপস্থাপন, এবং তাদের ঐতিহাসিক সত্য প্রকাশে অসম্ভব মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন লেখক। আর সবগুলো অধ্যায় জুড়ে লেখকের ফারসী, আরবী, পশতুন, হিন্দি, জার্মান, রাশান ও ফরাসি ভাষার সে কি অনির্বচনীয় উপস্থাপনা!
আরও পড়ুনঃ আয়না আবুল মনসুর আহমদ PDF রিভিউ
পর্যালোচনা ও ব্যক্তিগত মতামত:
বাংলা ভাষার অন্যতম উৎকৃষ্ট একটি ভ্রমণ কাহিনী সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে। ভ্রমণকাহিনীর প্রতিটি অংশ খুব যত্ন সহকারে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। যাতায়াত ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পাঠানদের এবং আফগানদের সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় এই বইয়ে। খাদ্য রসিক পাঠান ও আফগান জাতির রসনা বিলাস এর যে পরিচয় সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর এই বইয়ে দিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত লোভনীয়। এছাড়াও আফগান মুলুকের তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক অবস্থার মোটামুটি ভালো ধারণা পাওয়া যায় এই বই থেকে।
দেশে বিদেশে বইয়ে ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত চমৎকার। শুধুমাত্র বাংলা নয়, ভ্রমণকাহিনীটিকে আরও প্রাণবন্ত করার জন্য উর্দু, ফার্সি, আফগান, পশতু ইত্যাদি ভাষার কিছু শব্দ এবং উক্তি লেখক ব্যবহার করেছেন এই বইয়ে। আবার একই সাথে বাংলা ভাষায় সেই শব্দ বা উক্তির অনুবাদ করে দিয়েছেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে এমন আরেকটি ভ্রমণকাহিনীর জুড়ি মেলা ভার।
লিখেছেনঃ Tahsina Inam Trisha
বইঃ দেশে বিদেশে [ Download PDF ]
লেখকঃ সৈয়দ মুজতবা আলী
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সৈয়দ মুজতবা আলী রচনা সমগ্র PDF Download করুন