দার্শনিক ভাষণ | বিষয়: শিক্ষা | চতুর্থ পর্ব | মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
আগে পড়ুনঃ দার্শনিক ভাষণ | বিষয়: শিক্ষা | তৃতীয় পর্ব
শিশুদের বইয়ের কথাই ধরা যাক। এই মুহুর্তে ইশকুল ও মাদ্রাসাগুলোতে, আমাদের শিশুদের যে-বইগুলো পড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কতোখানি বই? বইগুলো তৈরিতে, পর্যাপ্ত যত্ন নেয়া হয়েছে কি না? এ প্রসঙ্গে আমি বাংলাদেশের ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’-এর চেয়ারম্যান জনাব নারায়ণ চন্দ্র সাহার কথা বলতে চাই। তিনি পঞ্চম শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’-এর ‘প্রসঙ্গ কথা’য় লিখেছেন:
“শিশু এক অপার বিস্ময়। তার সেই বিস্ময়ের জগৎ নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই। শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, শিশুবিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানীসহ অসংখ্য বিজ্ঞজন শিশুকে নিয়ে ভেবেছেন, ভাবছেন। তাঁদের সেই ভাবনার আলোকে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ নির্ধারিত হয় শিশু-শিক্ষার মৌল আদর্শ। শিশুর অপার বিস্ময়বোধ, অসীম কৌতূহল, অফুরন্ত আনন্দ ও উদ্যমের মতো মানবিক বৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশ সাধনের সেই মৌল পটভূমিতে পরিমার্জিত হয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম। ২০১১ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পুনঃনির্ধারিত হয় শিশুর সার্বিক বিকাশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে সামনে রেখে।”
লক্ষ করুন, তিনি প্রথম বাক্যে বলেছেন ‘শিশু এক অপার বিস্ময়’, অর্থাৎ শিশুটি নিজেই বিস্ময়, আবার দ্বিতীয় বাক্যে বলেছেন ‘তার সেই বিস্ময়ের জগৎ নিয়ে…’, অর্থাৎ শিশুটি নিজে বিস্ময় নয়, তার আলাদা একটি বিস্ময়ের জগৎ আছে। দ্বিতীয় বাক্যটি আমলে নিলে, প্রথম বাক্যটি নিরর্থক হয়ে যায়, আবার প্রথম বাক্যটিকে আমলে নিলে দ্বিতীয় বাক্যটি নিরর্থক হয়ে যায়। আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক পড়াশোনা জানা মানুষ, কিন্তু আমি নিজেই নারায়ণ চন্দ্র সাহেবের এই দুই বাক্যের অর্থ উদ্ধ্বার করতে পারছি না, আমাদের পঞ্চম শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা কী উদ্ধার করবে? তিনি পরস্পরবিরোধী দুটি বক্তব্য, নিরর্থক ও ব্যর্থভাবে দুটি বাক্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, এবং শিশুদের জন্য তার ভালোবাসার পরিচয় প্রকাশ করেছেন।
চতুর্থ বাক্যে তিনি বলেছেন ‘তাঁদের সেই ভাবনার আলোকে…’। এই ‘তাঁদের’ পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি এর আগের বাক্যে বলেছেন ‘শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, শিশুবিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানীসহ অসংখ্য বিজ্ঞজন…’। নারায়ণ চন্দ্র সাহেব এ বিজ্ঞজনদের নাম প্রকাশ করেন নি, কিন্তু বইটি পড়ে ‘তাঁদের’ উচ্চতা সম্পর্কে আমি কিছুটা ধারণা পেয়েছি। এদেশে যে জনাব নারায়ণ চন্দ্র এতো এতো ডক্টর আর্নোল্ড, মন্টেসোরি, কান্ট, রুশো, রাসেল, ও নিটশা খুঁজে পেয়েছেন, এবং ‘তাঁদের ভাবনার আলোকে’ বই ছাপিয়েছেন, তা জেনে শিশুরা বিস্মিত হয়েছে কি না জানি না, কিন্তু আমি খুব বিস্মিত হয়েছি।
একই বাক্যে তিনি বলেছেন, ‘……জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ নির্ধারিত হয় শিশু-শিক্ষার মৌল আদর্শ’।
শিশুরা কী শিখবে ও কী শিখবে না, তার ‘মৌল আদর্শ’ নির্ধারিত হয়ে গেছে? নারায়ণ চন্দ্র সাহেব আমাদের জানান নি— কী সেই মৌল আদর্শ, আর ওই মৌল আদর্শের মৌল ভিত্তিই বা কী! জনাব নারায়ণ চন্দ্র আমাদের না জানালেও, ওই মৌল আদর্শ যে কী, তা আমি বাংলাদেশের বর্তমান গতিবিধি হিশেব করে অনুমান করতে পারি।
আরও পড়ুনঃ ছাগল ও তার পিএইচডি ডিগ্রি
রাগ প্রশমনের লক্ষ্যে জনাব নারায়ণ চন্দ্রের পঞ্চম বাক্যটি নিয়ে আমি আর আলোচনা করতে চাই না। ওই বাক্যে যে-শব্দগুলি তিনি ব্যবহার করেছেন, তা আলোচনা করতে গেলে, ভদ্রলোককে আমার সম্বোধন করতে হবে তুচ্ছার্থক সর্বনামে। এজন্য আমি চলে যাচ্ছি তার ষষ্ঠ বাক্যটিতে (আমি ইচ্ছে করে ‘তার’-এর উপর সম্মানসূচক চন্দ্রবিন্দু দিই নি)। এ বাক্যে তিনি বলেছেন, ‘২০১১ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পুনঃনির্ধারিত হয় শিশুর সার্বিক বিকাশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে সামনে রেখে’।
২০১১ সালের আগে তাহলে ‘শিশুর সার্বিক বিকাশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে সামনে রেখে’ শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয় নি? আমি যখন ইশকুলে ছিলাম, তখন কি রাষ্ট্র ও এনসিটিবি আমার সার্বিক বিকাশের ব্যাপারে মনযোগী ছিলো না? সার্বিক বিকাশ কী? কী কী করলে ও পড়লে সাধিত হয় একটি শিশুর সার্বিক বিকাশ? সার্বিক বিকাশের জন্য একটি শিশুকে, আর কয়টি দোযখ পাড়ি দিতে হবে, তা স্পষ্ট করা জনাব নারায়ণ চন্দ্রের উচিত ছিলো।
অবশ্য ভদ্রলোকের যে-প্রতিভার পরিচয় আমি ওই ‘প্রসঙ্গ কথা’য় পেয়েছি, তা বেশ নজিরবিহীন। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন:
“বাংলা বাঙালির মাতৃভাষা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে বাংলা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে..… এদিক থেকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষায় শোনা, বলা, পড়া ও লেখার দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য।”
বাংলা ভাষার এতো গুণগান গাওয়া নারায়ণ চন্দ্র, ওই ‘প্রসঙ্গ কথা’য় নিজের নাম লেখার সময় লিখেছেন:
“প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা”!
‘প্রফেসর’ বুঝি খুব বাংলা শব্দ!
আরও পড়ুনঃ জিপিএ ফাইভ পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছিলো জুতোর ফ্যাক্টোরিতে
অবাক করা বিষয় হলো, জনাব নারায়ণ চন্দ্র, একই প্রসঙ্গ কথা, হুবহু এক রেখে, প্রথম শ্রেণীর বাংলা বইয়েও লিখেছেন! যে-কথা তিনি পঞ্চম শ্রেণীর শিশুদের বলছেন, সে একই কথা, একটি শব্দও না পাল্টিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীর শিশুদেরও বলছেন! এ কী করে সম্ভব? আরও অবাক করা ব্যাপার— বাংলা বইয়ের ‘প্রসঙ্গ কথা’, আর গণিত বইয়ের ‘প্রসঙ্গ কথা’-ও এক, শুধু মাঝখানের কয়েকটি বাক্য পরিবর্তন করে দিয়েছেন! এখানেই শেষ নয়, একই ‘প্রসঙ্গ কথা’ তিনি মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শ্রেণির বইয়েও বসিয়ে দিয়েছেন (হুবহু)! সম্ভবত নারায়ণ চন্দ্র, শিশুদের জন্য একটি কুমিরের রচনা লিখে রেখেছিলেন, এবং সুযোগ পেয়ে, এটি সব বইয়েই ঢুকিয়ে দিয়েছেন (কুমিরের রচনাও এর চেয়ে উৎকৃষ্ট হয়)। এটি প্রমাণ করে, আমরা আমাদের শিশুদের দায়িত্ব কাদের কাঁধে দিয়ে রেখেছি। একটি শিশুকে একটি ভালো মানের ‘প্রসঙ্গ কথা’ উপহার দেয়ার সামর্থ্যও তাদের নেই। বাংলা বইয়ের ‘প্রসঙ্গ কথা’ যে বিজ্ঞানের বইয়ে প্রাসঙ্গিক নয়, এ সাধারণ বোধটুকোও তাদের নেই। তাদের উদ্দেশ্য কেবল বই ছাপানো। কারণ এতে ব্যবসা আছে।
জনাব নারায়ণচন্দ্রের ব্যাপারটি আমি উল্লেখ করেছি কেবল ভাতের হাড়ির একটি ভাতে টিপ দেয়ার জন্য। আমার দুর্ভাগ্য কি না জানি না, প্রথম ভাতটিই ভালো পড়ে নি। এ ভাত আমি আমাদের শিশুদের খাওয়াতে রাজি নই। বাংলাদেশ যদি তার শিশুদের নিয়ে সামান্যও উদ্বিগ্ন থাকতো, তাহলে এ অভক্ষণযোগ্য ভাত শিশুদের সামনে পড়তো না, আর আমাকেও এ লেখাটি লিখতে হতো না। শিশুদের তারা কতোটা অবহেলা করেছে, সে-প্রমাণ তারা বইগুলোর প্রচ্ছদেও রেখেছে। বইগুলির প্রচ্ছদ তৈরিতে তারা কোনো শিল্পীকে ব্যবহার করে নি, করেছে কোনো টঙ দোকানের ভিজিটিং কার্ড শিল্পীকে। প্রথম শ্রেণী (বইগুলোতে তারা শ্রেনী বানানে হ্রস্ব-ই-কার ব্যবহার করেছে, আমি এখানে ব্যবহার করছি দীর্ঘ-ই-কার) ও পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ প্রায় হুবহু এক! শুধু মাঝখানের ছবিটি ভিন্ন! বাংলাবাজারে যারা প্রচ্ছদ তৈরি করেন, তারা এডোব ইলাস্ট্রেটর সফটওয়ারে এরকম কিছু টেমপ্লেট তৈরি করে রাখেন, যা দিয়ে, কিছু ছবি ও লেখা একটু এদিক সেদিক করে, বিনা পরিশ্রমে, বাণিজ্যিক নোট-গাইডের প্রচ্ছদ তৈরি করেন। আমি নিজেও নানা কাজে এরকম টেমপ্লেট ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু যে-শিশুদের পেছনে জনগণ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, রাষ্ট্র তাদের বইয়ের জন্য একটি শিল্পসম্মত প্রচ্ছদও তৈরি করতে পারলো না? আপনাদের বুঝতে একটু অসুবিধা হতে পারে, আমি একটু তুলনা করে দিচ্ছি—
প্রথম শ্রেণীর বই: শিরোনাম ‘আমার বাংলা বই’।
পঞ্চম শ্রেণীর বই: শিরোনাম ‘আমার বাংলা বই’।
প্রথম শ্রেণীর বই: ডান পাশে একটি বৃত্ত, বৃত্তের ভেতর লেখা ‘প্রথম শ্রেণি’।
পঞ্চম শ্রেণীর বই: ডান পাশে একটি বৃত্ত, বৃত্তের ভেতর লেখা ‘প্রথম শ্রেণি’।
প্রথম শ্রেণীর বই: উপরের দিকে একটি পর্বতাকার ঢেউয়ের রেখা।
পঞ্চম শ্রেণীর বই: উপরের দিকে একটি পর্বতাকার ঢেউয়ের রেখা।
(যারা গণিত জানেন, তারা সাইন-কোসাইন গ্রাফ আঁকার সময় এ ধরণের কার্ভ বা ঢেউ দেখে থাকবেন)
আরও পড়ুনঃ বিশ্বসাহিত্য ভাষণ : লিও তলস্তয় | প্রথম পর্ব
প্রচ্ছদে আরও একটি বিষয় নজরে পড়েছে, যা এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয়।
কেন, দুইটি আলাদা শ্রেণীর বাংলা বইয়ের নাম কি ভিন্ন ভিন্ন রাখা যেতো না? যে-নাম তারা প্রথম শ্রেণীতে পড়ে এসেছে, সে একই নাম পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তে কি একঘেয়ে লাগবে না? আমি হলে প্রথম শ্রেণীর বইটির নাম রাখতাম ‘আমাদের বাংলা ঘর’, আর পঞ্চম শ্রেণীর বইটির নাম রাখতাম ‘সাহিত্যের চশমা’। ‘ঘর’ শব্দটি পড়ে শিশুটি ভাবতো, হায় হায় বই কীভাবে ঘর হয়? বাংলা ঘর তো আমাদের বাড়িতে থাকে, বইয়ে তো থাকার কথা নয়। শিশুটি তখন কৌতূহলী হয়ে উঠতো, এবং বইটি পড়ে একদিন বুঝতো— ঘর মানে শুধু ঘরবাড়ি নয়, ঘর মানে জগৎ। তখন ‘আমাদের বাংলা ঘর’, এর অর্থ সে করতো— ‘আমাদের বাংলা ভাষার জগৎ’। আর ‘সাহিত্যের চশমা’ নামটি পড়েও শিশুরা ধাক্কা খেতো। শিক্ষায় এই ধাক্কাটা গুরুত্বপূর্ণ। যে-শিক্ষা চিন্তাকে ধাক্কা দিতে পারে না, সে-শিক্ষা ব্যর্থ শিক্ষা। সে-শিক্ষা আর গরুর জাবর কাটার মধ্যে কোনো পার্থক্য আমি দেখি না। শিশুটি বইটি পেয়েই চশমার খোঁজে পাতার পর পাতা উল্টাতে থাকতো, এবং কিছুদিন পর বুঝতো, কীভাবে তার চারপাশের পৃথিবীকে, সাহিত্যের চশমা দিয়ে দেখতে হয়।
আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন, প্রচ্ছদ কি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু? হ্যাঁ, শিশুদের বইয়ের প্রচ্ছদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এটিকে সাংসদ ও ছাত্রলীগের ধান কাটার ঘটনার মতো সরল করে ভাবলে হবে না। শিশুদের বইয়ের প্রচ্ছদ এমনভাবে আঁকতে হবে, যেন কোনো শিশু বইটি হাতে নিয়েই চঞ্চল হয়ে ওঠে। এ চঞ্চলতা বইয়ের ভেতরটিকে ঘুরে দেখার চঞ্চলতা। বইটির বিষয়বস্তু কী, বইটি পড়া কেন জরুরী, তার একটি বিমূর্ত হাতছানি বইয়ের প্রচ্ছদে থাকতে হবে। বইটি হাতে নিয়েই যেন কোনো শিশু বিরক্ত না হয়, একঘেয়েমীর মেদ যেন তার মনে না জমে, সে-ব্যাপারটি প্রচ্ছদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ, এ কাজে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
কোনো শিশুর পক্ষে এ বইগুলো হাতে নিয়ে খুশি হওয়া সম্ভব নয়। পঞ্চম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ে তারা ইন্টারনেট ঘেঁটে, তিনটি ছবি ডাউনলোড করে প্রচ্ছদে বসিয়ে দিয়েছে! এসব ছবি শিশুরা, বাজার ও টেলিভিশনের নানা বিজ্ঞাপনে হরহামেশা দেখে থাকে। প্রচ্ছদটি দেখে বুঝার উপায় নেই, বইটি শিশুদের জন্য রচিত কোনো বিজ্ঞানের বই (যদি নামটি না দেখি)।
তারপর পড়ুনঃ দার্শনিক ভাষণ | বিষয়: শিক্ষা | পঞ্চম পর্ব
লিখেছেনঃ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশের সেরা ত্রিশ ধারাবাহিক নাটক