তরঙ্গভঙ্গ নাটক PDF রিভিউ | সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | Taranga Vanga by Waliullah
বইয়ের নাম- তরঙ্গভঙ্গ
জনরা- নাটক
নাট্যকার- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
পৃষ্ঠা-৯৬
মূল্য-১৩০
প্রথম প্রকাশ-১৯৬২
নুসরাত প্রকাশনী
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ আমাদের পাঁচ দশকের এক বিরল, নিরীক্ষাপ্রিয় মৌলিক নাট্যপ্রতিভা। তার দ্বিতীয় নাটক “তরঙ্গভঙ্গ” প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে।
“তরঙ্গভঙ্গ” মূলত আমেনার বিচার উপাখ্যান। নাটকের মূল নারী চরিত্র আমেনার শাস্তি বিধান নিয়েই কাহিনীর পরীধি। কিন্তু নাট্যকার নাটকে আমেনার মুখ থেকে কোন সংলাপ দেন নি। এক ভিখারিণীর মাধ্যমে আমেনা চরিত্রের অতীত বর্তমান জানিয়ে দেন তিনি। নাটকের ধারায় আমেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে দুটি। অভিযোগ দুটি হলো- স্বামী হত্যা এবং সন্তান হত্যা। আমেনার দরিদ্র স্বামী কুতুব , দ্ররিদ্রের কষাঘাতে খেটে খেটে রোগে মরণাপন্ন।
স্বামীকে চিকিৎসা করাবার মতো কোন সামর্থ্য আমেনার ছিলো না। সারাদিন চোখের সামনে মৃতপ্রায় স্বামীকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে দেখে, ধুতরা পাতার রস বানিয়ে কুতুব শেখের কষ্টের অবসান ঘটিয়ে দিলো সে। স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে শান্তি দেওয়াটা তার কর্তব্যের মাঝে পরে।
স্বামী মারা গেলে নিজের আর সন্তানের খাবারের কষ্ট সইতে না পেরে আমেনা কাজে নামে। কিন্তু কোন অবস্থায় কাজ জোটাতে না পেরে, নিজের কোলের শিশুকে গলা টিপে হত্যা করে ।
আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে উপরোক্ত দুই খুনের কারনে আমেনার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করে রুজু।
এইভাবে কাহিনী বেড়ে চলে। এবং নাটকের শেষে নাট্যকার বেশ নাটকীয়ভাবে ইতি টানেন। যা পাঠকের মস্তিষ্কে অবচেতন ভাবেই আটকে থাকে।
আরও পড়ুনঃ চাঁদের অমাবস্যা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ PDF রিভিউ
আধুনিক নাটকের সংলাপ বা বিভিন্ন নাট্যনির্মাণের কাজে বেশ বৈচিত্রতা লক্ষ করা যায়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যকর্ম হিসেবে নাটকে অস্তিত্ববাদী চিন্তা চেতনা যেভাবে এসেছে, তার সৃষ্টির ভেতর বাহিরে আধুনিকতাও তেমনি উপস্থাপিত হয়েছে। হত্যার কাহিনী বা কারণ তো ভিখারীনির দ্বারা ফ্ল্যাশব্যাক থেকে এসেছে, তবে কাহিনীর স্রোতে বর্তমান সংকট বর্ণনায় নাট্যকার বেশ পারিপাট্য দেখিয়েছেন। এই নাটকে মোট চারটি মৃত্যু দেখানো হয়েছে। তবে মৃত্যুভাবনা প্রকাশবাদী নাটকের একটি লক্ষনীয় প্রবণতা হলো, মৃত্যু যেভাবেই আসুক না কেন, মৃত্যুর মধ্যদিয়ে চরিত্রকে পুনর্জন্ম দিয়ে বাঁচিঁয়ে রাখে। আর এই নাটকেও মৃত্যু দৃশ্যগুলো ঠিক পাঠক মনে তেমনি ঘোর পাকাবে।
জগৎসংসারে প্রায়ই অভিযুক্ত ব্যক্তিগুলোর সব সময় ততোটা অন্যায় থাকে না। যতটা শাস্তির বিধান হয়। তবে বাস্তব জীবনে যা কখনো সম্ভব নয়, নাট্যকার সেই রূঢ়, কঠিন সত্য তার নাটকে তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোড়ামিকে বিদ্রুপের জন্য নাট্যকার নাটকে এক স্বপ্নের অবতারনা করেছেন। সব শেষে এটাই বোধগম্য হয় যে, নাট্যকার সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ “তরঙ্গ ভঙ্গ” নাটকে বিশ্বপ্রসারী শিল্প সৃষ্টিতে তিনি সফল। নাটকটির মৌল উপজীব্য হলো দুঃসহ মানবিক পরিস্থিতি অতিক্রম করে একজন ব্যক্তির অস্তিত্ববান হয়ে ওঠার গল্প। অবশ্যই পাঠক একটি ভিন্ন ধারার নাটকের সাথে পরিচিতি হবেন।
লিখেছেনঃ ফেরদৌসি রুমী
বইঃ তরঙ্গভঙ্গ [ Download PDF ]
লেখকঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচনা সমগ্র PDF Download করুন