কাজল

কাজল তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় PDF রিভিউ | Kajal by Taradas Bandyopadhyay

Redirect Ads

বইয়ের নামঃ কাজল (পথের পাঁচালী এর ৩য় খন্ড) [ ২য় খণ্ড অপরাজিত ]
লেখকঃ তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১১৪
প্রকাশনাঃ মিত্র ও ঘোষ

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ জন্মদিনে তাঁর বন্ধুবান্ধবেরা মিলে একটি বাঁধানো দারুণ খাতা উপহার দেয় তাঁকে। উপরে মলাটে লেখা “কাজল“। এখানেই লেখা হবে অপরাজিতের পরের উপন্যাস। তা প্রথমে প্রকাশিত হবে পত্রিকায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেই লেখা শুরু করার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ। কিন্তু লেখা শুরুর আগেই তিনি মারা যান।

Download

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দুই উপন্যাস পথের পাঁচালীঅপরাজিত এর পর সেই কাহিনী মিলিয়ে তাঁর ছেলে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন “কাজল“। অপুর ছেলে। যেই চরিত্র সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার চলচ্চিত্রেও পাওয়া যায়। কেবল তাই নয় অপুর নাতিকে নিয়েও তিনি লিখেছেন “তৃতীয় পুরুষ“।

কাজল বইটির ভূমিকা লিখেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী এবং তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাতা রমা বন্দ্যোপাধ্যায়। চার-পাঁচ পৃষ্ঠার এই ভূমিকাতে তিনি পাঠককে জানিয়েছেন লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লেখালিখি ছিল আরাধনা।

তিনি কাজল লেখার ব্যাপারে খুব উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন। এছাড়াও তিনি ইছামতীর দ্বিতীয় ভাগ লিখতে চেয়েছিলেন, লিখতে চেয়েছিলেন অথৈ জলেরও দ্বিতীয় খন্ড। কিন্তু হলো না। কিন্তু কাজল শুরু করার ঠিক আগ মূহুর্তে এই অমিত শক্তির অধিকারী লেখক বিদায় নেন। তারপর উনার সুযোগ্য পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বাবার অপূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন।

আরও পড়ুনঃ পথের পাঁচালীর দিনগুলি

Download

প্রেক্ষাপটঃ

কাজল খুব ছোট একটা বই। পড়তে গেলেই ফুরিয়ে গেল। তাই সেখানে প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত লেখার সুযোগও তেমন নেই।

অপরাজিত বইটিতে অপু কাজলকে নিশ্চিন্দপুর গ্রামে রাণুদির কাছে রেখে চলে যায় ফিজিতে। সেই নিশ্চিন্দপুর গ্রামে যেন আবার নতুন করে নতুন রূপে ফিরে আসে শৈশবের অপু। কিন্তু তারপর? বিভূতিভূষণ বেঁচে থাকলে হয়তো লেখাটা অন্যরকম হতো কিন্তু উনার পুত্রের হাতে লেখাটি পেয়েছে আলাদা স্বতন্ত্রটা।

পড়তে গিয়ে কোথায় যেন মনে হয়েছে অপুর মাঝে যেন স্বয়ং পিতাকে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন লেখক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে অপুর মৃত্যুর মাঝে পিতার মৃত্যুকে যেন অংকন করেছেন লেখক।

আরও পড়ুনঃ অপরাজিত উপন্যাস PDF রিভিউ বিভূতিভূষণ

Download

রাণুপিসির কাছে বেশ কাটছিলো কাজলের। একদিন অপু ফিরে আসে কাজলের কাছে। রক্তের টান অস্বীকার করা যায় না। পালিয়ে বাঁচা যায় না। ফিরতে হয়। তারপর নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে অপু কাজলের জন্য। উত্তারিকার সূত্রে মানুষ কি পায়? অর্থ, সম্পদ খুব বেশি হলে কিছু মূল্যবোধ। কিন্তু বাবার কাছ থেকে কাজল পেয়েছে আলাদা একটা স্বত্ত্বা, যার অনুভূতির ক্ষমতা পার্থিবের মাঝেও অপার্থিব, এই পৃথিবী থেকে বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের শেষ গ্রহটি পর্যন্ত বিস্তৃত, সীমাহীন।

সুখ-দুঃখ, চাওয়া পাওয়া, না পাওয়ার হিসাব করতে করতেই মানুষের জীবন কেটে যায়। হিসাবের অংক মেলে না। শেষ খাতায় পরে থাকে মৃত্যু নামের একটি শূণ্য। কাজল আক্ষেপ করে ভেবেছে একটু ভাল ব্যবহার একটু ভালোবাসার জন্য সারাটা জীবন আক্ষেপ করতে করতে কত মানুষ চলে গেছে এই পৃথিবী ছেড়ে। খুব কম মানুষই আসছে যারা সুখ আর দুঃখকে জীবন নামের দাড়িপাল্লায় ভারসাম্য করে সত্যিটা জানতে পেরেছে। জেনেছে জীবনের পিছনে ছুটে লাভ নেই, মৃত্যুর জন্য আয়োজন করে লাভ নেই। জীবন আর মৃত্যু, আলো আর অন্ধকার আলাদা নয় শুধু একের প্রকাশে অন্যের অনুপস্থিতি মাত্র। সেই টুকরো টুকরো চিন্তাগুলো যেন লেখক এবং দার্শনিক Khalil Gibran বলেছেন এই দুটি লাইনে,

“For life and death are one,
even as the sea and the river
are one.”

আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় ও সেরা কিছু বই PDF রিভিউ | যে বই গুলো সবার পড়া দরকার

ব্যক্তিমত মতামতঃ

আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে বইটি পড়ার সময় কোন পাঠক যদি লেখক পিতা পুত্রের প্রতিভার তুলনা করতে যান সেটা হবে অনেক বড় মাপের ভুল। প্রতিটি মানুষ তার স্বাতন্ত্র শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে আসে।

Download

অপরাজিতের কিশোর অপু ছিল অনেকটা জীবনের বাস্তবতার কাছে অপরাজিত আবার কাজলের বাবা অপুকে আমরা পেয়েছি অনেকটা সংযত। তবুও দুই লেখকের দুই অপুকেই ভাল লেগেছে কারণ তাঁদের ব্যক্তিত্বের পার্থক্য থাকলেও দর্শনের স্বাতন্ত্রতা ছিল অনেক কম। আর এখানেই লেখক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার সফল মনে হয়েছে। উনি পিতার ছায়ার বাইরে এসে লিখেও পিতার সৃষ্ট চরিত্রকে তিনি পুনরায় জীবনদান দিয়েছেন।

লিখেছেনঃ মিঠুন সরকার

বইঃ কাজল [ Download PDF ]
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়

ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যান্য রচনা সমূহ PDF + রিভিউ

Facebook Comments

Similar Posts