বইয়ের নাম: আম আঁটির ভেঁপু
লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ভাষা: বাংলা
ধরন: শিশু কিশোর উপন্যাস
প্রকাশন: বর্ণায়ন
পটভূমিঃ
বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়ের নাম যারা শুনেছেন, তারা নিশ্চয়ই পথের পাঁচালী র নামও শুনেছেন। তাঁর এই উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা বানিয়ে দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ভারতরত্ন উপাধি। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন আজাদের মন্তব্য, সত্যজিৎ যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষণ বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পথের পাঁচালী উপন্যাসের শিশু কিশোর পাঠ সংস্করণের নামই আম আঁটির ভেঁপু। মানুষের বেড়ে উঠার সময়কালকে ধারণ করে চিরায়িত শৈশবের গল্পগাঁথা নিয়ে রচিত হয়েছে এই উপন্যাস। উপন্যাসটি পড়েছিলাম আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে। কিন্তু মন থেকে এর রেশ এখনো শেষ হয়নি। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র অপু আর দূর্গা। কঠিন বাস্তবতার সাথে ভাই বোনের অপূর্ব ভালোবাসার চিত্র এঁকেছেন লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
গল্পঃ
এই উপন্যাসের মূল চরিত্র অপু নামের এক গ্রাম্য বালক। শহর ছাড়িয়ে বহুদূরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম নিশ্চিন্দিপুর। বাংলাদেশের আর দশটি গ্রামের মতোই তাদের নিশ্চিন্দিপুর। অপুর দিদি দুর্গা তার খেলার সাথি। গ্রামের সহজ-সরল পরিবেশে আর অতি দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠতে থাকে দুই ভাইবোন। অজানাকে জানার সহজাত নেশা তাদের। তাই মায়ের শাসন-বারণ উপেক্ষা করেও দুরন্ত দুর্গার হাত ধরে সে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে থাকে।
আরও পড়ুনঃ আরণ্যক উপন্যাস PDF রিভিউ
অপু, দূর্গা তাদের মায়ের হতে লুকিয়ে আমের কুসি জড়ানো, কালবৈশাখীর ঝড়ে আম কুড়ানো, মাঝে মাঝে তাদের দুষ্টুমি মারামারি, গাঁয়ের মেঠোপথে দৌড়ানো, বৃষ্টির মাঝে ভিজে জ্বর আসা। গুরু মহাশয়ের কাছে গল্প শুনে অপুর কল্পনা বিলাস। শকুনি মামার ডিম নিয়ে অপুর আকাশে উড়ার ইচ্ছা। কাশবনের ভিতর দিয়ে ছুটে চলা রেলগাড়িকে দেখার তীব্র আক্ঙাঙ্খা। দূর্গার চুরি করা এবং ভয়ে বাড়ি না ফেরা। এ যেন শৈশবের প্রতিচ্ছবি বহন করে!
এ রকম নানা অ্যাডভেঞ্চারের তার একমাত্র সাথি দিদি দুর্গা। চারপাশের ক্রমাগত বিস্ময়বোধ নিয়ে বড় হতে থাকে অপু। চরম দারিদ্র্য আর পাওয়া না-পাওয়ার বেদনার মধ্যেই তাদের জীবনে ঘটতে থাকে নানা অম্লমধুর ঘটনা। কিন্তু তার কাছের মানুষ এই দিদিই একদিন হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে। সেই কষ্টের স্মৃতি মুছতে না মুছতেই আরও পরিবর্তন আসে তার জীবনে। দারিদ্রে্যর কারণেই একসময় গ্রামের পাট চুকিয়ে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে তাদের চলে যেতে হয় কাশীতে।
আজও যখন মনে পড়ে তাদের নোনা পাতার পানের কথা, দোকান দোকান খেলার কথা, তখন মনের অজান্তে ধ্রুবতারার মতো ভেসে উঠে দূরন্ত শৈশবের রঙিন স্মৃতিগুলো।
আরও পড়ুনঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাম্পত্য জীবন
কিছু কথাঃ
আম আঁটির ভেঁপু উপন্যাস -এ সহজ-সরল ভাষায় বাংলাদেশের গ্রামের চিরায়ত গল্প শুনিয়েছেন বিভুতিভূষণ। তাঁর বলার ঢঙে কোনো অতিরঞ্জন নেই, নেই অতিকথনও। তাই সমাজের বাস্তব ও জীবন্ত ছবির সহজ-স্বাভাবিক প্রতিফলন ঘটেছে এই উপন্যাসে। অপুর বেড়ে ওঠার পাশাপাশি দরিদ্র এক পরিবারের টিকে থাকার সংগ্রাম উঠে এসেছে এতে। তাই একই সঙ্গে এই গল্প আনন্দের, এই গল্প দুঃখের আর কৈশোরের দুরন্ত নিষিদ্ধ অ্যাডভেঞ্জারের। এই গল্প পাওয়ার এবং একই সঙ্গে হারানোর। এই গল্প সোনালি শৈশবের। অপুর অবাক বিস্ময়ে বেড়ে ওঠার এই গল্প বাংলাদেশের সব গ্রাম্য বালকের।
আম আঁটির ভেঁপু পড়ে কখনও কখনও অপুর মতো স্বপ্নময়ী হতে ইচ্ছে করে, কখনওবা দূর্গার মতো দূরন্ত শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। বইটি পড়ার পর মনের মাঝে বার বার একটা কথায় ভেসে ওঠে যদি আবার ফিরে যেতে পারতাম শৈশবের দিনগুলোতে!!!
আমি আশা করি পাঠক হৃদয়ে অপু আর দর্গা বেঁচে থাকবে আজীবন।।
লিখেছেনঃ তানিম আল তাহসান
বইঃ আম আঁটির ভেঁপু [ Download PDF ]
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দুই উপন্যাস পথের পাঁচালী ও অপরাজিত এর পর সেই কাহিনী মিলিয়ে তাঁর ছেলে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন “কাজল“। অপুর ছেলে। যেই চরিত্র সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার চলচ্চিত্রেও পাওয়া যায়। কেবল তাই নয় অপুর নাতিকে নিয়েও তিনি লিখেছেন “তৃতীয় পুরুষ“।
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যান্য রচনা সমূহ PDF + রিভিউ