আদর্শ হিন্দু হোটেল

আদর্শ হিন্দু হোটেল – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

Redirect Ads

আদর্শ হিন্দু হোটেলের গল্পটা একটা রাধুনী বামুনকে নিয়ে, হাজারী দেবশর্মা নাম তার।গল্পের শুরুতে তাকে দেখা যাবে রানাঘাটের রেল-বাজারে একটা হোটেলের পাচক হিসেবে কাজ করতে, তখনকার সময়ে যাকে বলা হতো ঠাকুর। হাজারী নির্বিবাদী মানুষ, কারো সাতেপাঁচে থাকতে চায়না সে। তার এই ভালোমানুষির সু্যোগ নিয়ে তার সাথে যথেষ্ট অন্যায় অনাচারও করে উপন্যাসের অন্যতম দুই চরিত্র পদ্মঝি আর বেচু চকোত্তি, যারা যথাক্রমে এই হোটেলের ঝি আর মালিক।হাজারিকে আমরা বরাবরই দেখি নির্বিবাদে সব কিছি মেনে নিতে,মূলত এর মাধ্যমে উঠে আসে নিম্নবিত্তের অস্তিত্ব সংকট ।

বিভূতিভূষণ বরাবরের মতোই তাঁর নিখুঁত বর্ণ্নায় জীবনের ছোটখাটো বিষয়কেও অসাধারণ করে তুলেছেন। উপন্যাসের খানিকটা গেলেই পাঠক হয়ে উঠবেন হাজারি নামক কালো একহারা বামুনটির সাত টাকার চাকরি, যার বেতন গত সাত বছরে একবারও বাড়েনি, কাজের বিরতিতে তার চুর্ণী নদীর তীরে বসে থাকা, কোন এক সময়ে তার নিজের একটা হোটেলের মালিক হয়ে ওঠার স্বপ্ন-এইসব কিছুর অংশ। এখানেই লেখকের সার্থকতা, একজন সাধারণ রাধুনি, যে ষ্টেশনের পাশের একটা সস্তা রেলের হোটেলে রাঁধে, তার ছোট খাটো সুখ দুঃখে পাঠককে অভিভূত করে ফেলতে পেরেছেন।

Download

আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

হোটেলের মালিকের অপমান সহ্য করে হাজারি তবু টিকে থাকতে চেয়েছে পুরনো ঠিকানায়, অবিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়ে পাশের হোটেলের বেশি টাকার চাকরিতে যায়নি। সে বরাবর আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছে তার মুল্যবোধ, সেটাকে বিসর্জন দিয়ে সে নিজের কাছে ছোট হয়ে থাকতে চায়নি।

তবু একসময় সে সেই পুরনো ঠিকানা ছাড়তে বাধ্য হয় মিথ্যা চুরির দায় কাঁধে নিয়ে। এই আঘাত তাকে তাড়িত করে তার জীবনের সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্তটি নিতে, তার বহু সাধের নিজের হোটেলের স্বপ্ন। যে হোটেলের সামনে বড় করে তার নিজের নাম লেখা থাকবে, যেখানে পথচলতি মানুষদের ঠকিয়ে দু নম্বর জিনিস খাওয়ানো হবে না। তার মতো সাত টাকার চাকরির বামুনের পক্ষে হয়তো মূলধন জোগাড় করা সম্ভব হতো না, তবে এ সময় আমরা দেখি দুটি নারী চরিত্রের এগিয়ে আসার দৃশ্য, যারা দুইজনেই তার মেয়ের বয়সী। একজন তার পালিত মেয়ে কুসুম,আরেকজন গ্রামের মহাজনের মেয়ে অতসী।

উপন্যাসের পরিণতিতে আমরা দেখি সেই গরিব বামুনের সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা, তার মেয়েকে সুপাত্রে বিয়ে দেয়া। এমনকি যে হোটেলে সে দীর্ঘদিন রাঁধুনি হিসেবে কাজ করেছে, সেই হোটেলের সেই অত্যাচারী মালিক চক্কত্তি মশায় আর পদ্মঝিও তার হোটেলে কর্মচারী হিসেবে যোগ দেয়।

Download

উপন্যাস পড়তে গিয়ে পাঠকের ইচ্ছে হতেই পারে হাজারির হাতের নিরামিষ চচ্চড়ি আর মাংস রান্না খেতে!

বিভূতিভূষণের উপন্যাসগুলো বরাবরই বিষাদমাখা।তাঁর উপন্যাস পড়তে গিয়ে পাঠক আশঙ্কায় থাকেন ট্র্যাজেডিময় সমাপ্তির। তবে এ উপন্যাসটি তার উজ্জ্বল ব্যতিক্রমই বলঠককে দেবে একজন স্বাপ্নিক মানুষের উত্থানের পরিতৃপ্তির স্বাদ!

রিভিউ লেখক: সাদমান আবদুল্লাহ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  

আদর্শ হিন্দু হোটেল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় pdf free download করুন

Facebook Comments

Similar Posts