অভিলাষ বুদ্ধদেব গুহ PDF রিভিউ | Abhilash By Buddhadeb Guha PDF
বইয়ের নাম: অভিলাষ
লেখক: বুদ্ধদেব গুহ
প্রকাশনী: ষ্টার পাবলিকেশন্স
প্রকাশকাল: আগস্ট, ১৯৯৫
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: সুধীর মিত্র
রকমারি মূল্য: ১১০/-
পৃষ্ঠা: ১২৭
বয়সটা তখন কৈশোর পেরোনোর পথে। কাজিনের (বড় ভাই) কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে কয়েকটা বই পেয়ে গেছিলাম। সে কি আনন্দ! পূর্ব পশ্চিম (১ ও ২) আর অভিলাষ। সুনীলের প্রথম আলো পড়েছিলাম আরো আগেই। পূর্ব-পশ্চিম পড়ার পর আজ অবধি ট্রিলজির প্রসঙ্গে এটিই আমার সবচে পছন্দের। তারপরেই ভাল লাগার প্রিয় বইটির অবস্থান।
অভিলাষ- আমার প্রিয় নভেল।
আমার সবচে প্রিয় বইটি নিয়েই বলব আজ।
প্রথমেই প্রচ্ছদের মেয়েটির অপরুপ দেবী মূরতি মুগ্ধ করে দিয়েছিল। বইটা হাতে নিলে প্রতিবারই আমি এই কল্পিত মুখায়বের মেয়েটিকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারি না।
কলি ও পর্ণা। শহুরে, কালচার্ড, রুপবতী, স্মার্ট এবং চাকুরে দুই বান্ধবী। আরেক বান্ধবী রুবির কাকার কাছে গল্প শুনে কলকাতা থেকে বেড়াতে এসেছিল নিদপুরাতে। তবে নিদ পুরাতে নয়, প্রাত্যহিক জীবনের ক্লান্তি ভুলে ছুটি কাটাতে আর একটু দম ফেলতে। কিন্তু এখানে এসে একেবারে রাজবাড়ির মেহমানদারি জুটবে ভাবতে পারে নি। স্টেশানে গাড়ি নিয়ে ওদের আনতে গেছিল মন্দার হোটেলের ম্যানেজার স্নিগ্ধ রায় চৌধুরী।
সিগারেট ধরানোর সময় লাইটারের আলোয় স্নিগ্ধকে দেখে বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠেছিল কলির। মানুষটা খুনী না গুণী?
আরও পড়ুনঃ মাধুকরী উপন্যাস রিভিউ PDF বুদ্ধদেব গুহ
নাম জানা না জানা বিচিত্র সব ফুল আর ফলের প্রশস্ত বাগান, স্তুপ হয়ে থাকা পাতা, বিশাল বড় দোলনা, হাজারো পাখির কিসকিস কলরব আর এর মাঝখানে শত বছরের পূণ্যের প্রতিকৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল দৈত্যাকার বাড়ি। ভোরের গন্ধ, ঘাসের গন্ধ, ফুলের গন্ধ, ফলের গন্ধ, মাটির গন্ধ, প্রকৃতির অদ্ভূত অপরূপ রুপ, সব মিলে দুই বন্ধুতে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেছিল। সাথে আছে এচড়ের চপ, ঝিঙে-পোস্ত, নিম-বেগুনের ভাজা, আম-তেতুলের শরবৎ এবং আরো এত এত খাবার!
হোটেলের মালিক ও ম্যানেজার স্নিগ্ধ। তার এ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার প্রণয় রুদ্র। দুজন প্রাণের বন্ধু। প্রণয় নিজের নাম নিয়ে বড়ই শরমিন্দা। নিজেকে তাই রুক্ষ রুদ্র নামে পরিচয় দেয়। সব সময় ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে রাখা সজীব-প্রাণবন্ত এক আদিবাসী ছেলে। বন্ধুর জন্য অন্তঃপ্রাণ।
মানুষের তো নানামুখী লক্ষ্য থাকে জীবনের। আমার জীবনের লক্ষ্য “প্রণয়” হওয়া। কেন?
বইটা পড়লে, প্রণয়ের সাথে পরিচয় হলে বুঝবেন।
পর্ণা ডিভোর্সী। পিছনে ফেলে আসা অতীতের সুবর্ণ মাঝে মাঝেই পর্ণাকে আকুল করে তোলে।
ফুলের বনে কলির পাশে স্নিগ্ধকে দেখে ভাল লাগার চে কষ্টই যেন বেশি হয় তার।
জীবনের সবচে প্রিয় স্বপ্নগুলো পূরণের অভিলাষ নিয়ে এগিয়ে চলে গল্প। এগিয়ে চলে স্নিগ্ধ-কলি-প্রণয়-পর্ণার জীবনও।
আরও পড়ুনঃ সবিনয় নিবেদন PDF রিভিউ বুদ্ধদেব গুহ
প্রথম যখন পড়েছিলাম শুধু মুগ্ধ হয়েছিলাম। কারণ জানতাম না। তারপর যতবার পড়েছি ভাল লাগা ক্রমশ বেড়েছে। প্রিয় ও পছন্দের লাইন দাগাতে যেয়ে দেখি বইয়ের এক চতুর্থাংশ পাতা সবুজ হয়ে গেছে। বইটা ভাল লাগার বিশেষ একটা কারণ সম্ভবত গল্পের প্রতিটি চরিত্রই অত্যন্ত স্মার্ট, রুচিশীল, সুন্দর এবং সাবলীল। এমনকি আদিবাসী রিকশাচালক দলমার জংলা সৌন্দর্যের সাথে উন্নত মানসিকতার পরিচয় পাঠককে মুগ্ধ করবে।
বুদ্ধদেব গুহের লেখা বাবলি, একটু উষ্ণতার জন্য, সবিনয় নিবেদন অথবা মাধুকরী যারা পড়ে ফেলেছেন তাদেরকে বুদ্ধদেবকে চেনানোর নতুন তেমন কিছু নেই। অরণ্য, প্রচুর জীবনমুখী কথার মালা আর আদিম রসের আনাগোনা লেখকের লেখার প্রধান উপাদান। এই বইটি তবু একটু ভিন্ন ঐ বইগুলোর তুলনায়। যারা পড়েন নি, এই বইটি আগে পড়ুন। আমার মতে, শিল্পীর হাতে আঁকা সবচে ভাল ছবিটা যেমন, এ বইটিও লেখকের তেমনি সৃষ্টি।
প্রণয়ের মুখের বলা প্রিয় উক্তি দিয়ে ইতি টানছি-
“আই অলসো র্যান। সকলকেই যে ফার্স্ট হতে হবেই তার কী মানে? যারা প্রথম হয় না, তারাই তো প্রথমকে প্রথম করে, না কি?”
লিখেছেনঃ Khadiza Manowara
বইঃ অভিলাষ [ Download PDF ]
লেখকঃ বুদ্ধদেব গুহ
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
বুদ্ধদেব গুহ রচনা সমগ্র পিডিএফ ডাউনলোড করুন