Skip to content
Home » মাতাল হাওয়া – হুমায়ূন আহমেদ

মাতাল হাওয়া – হুমায়ূন আহমেদ

    মাতাল হাওয়া হুমায়ূন আহমেদ
    Redirect Ads

    নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মাতাল হাওয়া’ ২০১০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় । এরপর তিন বছর পেরোতেই এর সপ্তম মুদ্রণ প্রকাশিত হয় যা আমাদের বুঝিয়ে দেয় পাঠক মহলে এটি কতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ।ঔপন্যাসিক উৎসর্গ পত্রে লিখেছেন :

    ”কোন মৃত মানুষ মহান আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারেন না । একজন পেরেছিলেন ।আমানুল্লাহ মোহম্মদ আসাদুজ্জামান । তাঁঁর রক্তমাখা শার্ট ছিল ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি ।”

    উৎসর্গপত্র পাঠে আমাদের বুঝে নিতে অসুবিধে হয়না যে আমরা ইতিহাসলব্ধ কোন কাহিনির প্রবেশ দ্বারে এসে দাঁড়িয়েছি ।তবে উপন্যাসটিতে তিনি সচেতনভাবেই রাজনৈতিক সূক্ষ্ম-ছায়ার অন্তরালে ষাটের দশকের মফস্বলীয় জনজীবনের জীবন-ঘনিষ্ঠ উপাখ্যান ব্যক্ত করেছেন ।তিনি চরিত্র চিত্রণ এবং কাহিনির প্রয়োজনে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়কালকে বেছে নিয়েছিলেন ।দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আসলে কোনদিকে মোড় নিতে যাচ্ছে তা আন্দাজ করার কোন সুযোগ তখন ছিল না । সেই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই তিনি উপন্যাসের নামকরণ করেছেন ”মাতাল হাওয়া” ।

    Download

    ”মাতাল হাওয়া” পাঠকালে আমার পাঠক মন ‘সামাজিক’ এবং ‘আত্মজৈবনিক’ দুটো ধারার উপন্যাসের স্বাদই নিতে পেরেছে ।উপন্যাসের একভাগে রয়েছে ‘নাদিয়া-হাবীব-হাসানের কাহিনি ,অন্যভাগে রয়েছে ঔপন্যাসিকের আত্মস্মৃতি ।দুটি পর্বই সমান্তরালভাবে এগিয়ে গেছে । এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেনঃ

    ”৬৮ এবং ৬৯-এর মাতাল হাওয়া আমার গায়ের ওপর দিয়ে গিয়েছে। কিছু অভিজ্ঞতা উপন্যাসের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকিয়ে দেব ।উপন্যাসের কাঠামো নির্মাণে এই বিষয়টা চলে না ,তবে মাতাল হাওয়া কখনোই নিয়ম মানে না ।”

    ——-পৃষ্ঠা ৩৪

    অশীতিপর বৃদ্ধা হাজেরা বিবির ‘হাবু কইরে !ও হাবু ! হাবু !’ হাক-ডাকের মধ্য দিয়ে উপন্যাসের সূত্রপাত ।৫৭ বছর বয়স্ক তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হাবীব ময়মনসিংহ জজকোর্টের ডাকসাইটে ক্রিমিনাল ল’ইয়ার ।তিনি তার পুত্রকে স্নেহপরবশত এই নামেই ডাকেন যা পুত্রকে বিব্রত করে ।আসলে হাজেরা বিবির মাথা কিঞ্চিত এলোমেলো অবস্থায় আছে ।তিনি আশপাশের মানুষকে অশ্লীল এবং অস্বাভাবিক কথাবার্তা শুনিয়ে মজা পান ।

    তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান হাবীব সাহেবের দূরসম্পর্কের ভাই এবং সহজাত কারণেই তার ক্ষমতার হাত বেশ প্রসারিত ।তার একমাত্র কন্যা নাদিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ।তার ফাইনাল পরীক্ষা আসন্ন কিনতু দেশের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই থমথমে পরিস্থিতিতে হাবীব সাহেব মেয়েকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত থাকেন এবং লোক পাঠিয়ে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন ।

    নাদিয়ার উপস্থিতিতে উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে চলে তরতরিয়ে ।কাহিনিসূত্রে আমরা জানতে পারি দেশ জুড়ে তখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার প্রভাব বিরাজিত ।এদিকে নাদিয়া ভীষণভাবে পছন্দ করে তারই বিভাগের হিন্দু শিক্ষক বিদ্যুৎ কান্তি দে কে ।এদিকে হাবীব সাহেব আবার তার কন্যাকে পাত্রস্থ করতে চান একই অঞ্চলের আরেক বিত্তবান জমিদারের অতি রূপবান পুত্র হাসান রাজা চৌধুরীর সাথে যে কিনা একজন খুনের আসামি ।হাবীব সাহেব তারই অন্দরের অতিথিঘরে ছেলেটিকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন ।বলে রাখা আবশ্যক ,দুদে উকিল হাবীব সাহেব নিজ স্বার্থের বাইরে কোন কাজ করেন না সেটির প্রমাণ আমরা পাই ফরিদ চরিত্রের পরিণতির মধ্য দিয়ে ।কাজেই পাঠক তার পরিকল্পনার নকশা সম্পূর্ণটাই জানতে পারবে ধীরে ধীরে ।

    Download

    এভাবেই এগিয়ে চলে গল্পের আখ্যান চরিত্রদের হাত ধরে ।ঔপন্যাসিক যথারীতি তাঁর স্বকীয় ধারায় পাঠককে চমকে দেয়ার মতো করেই ঘটনাবলী সাজিয়েছেন ।নাদিয়া-হাসানের শেষ পরিণাম কী হতে পারে তা অনুমান করার কোন সুযোগ ঔপন্যাসিক রাখেননি । কাহিনির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে পাঠকের প্রতিক্রিয়া কতটা মারাত্মক হতে পারে এই উপন্যাসে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ।

    আরেকটি বিষয় উল্লেখ করি ; হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট বিপুল জনপ্রিয় চরিত্র ‘রূপা’র জন্মকথাটা জানতে পারা রীতিমতো ছিল সৌভাগ্যের :

    “আমার এক বন্ধু জনৈকা তরুণীর প্রেমে পড়ল Iতরুণীর নাম রূপা Iবন্ধুর প্রেমপত্র লিখে দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব পড়ল আমার হাতে Iরূপার চিঠি সে আমাকে এনে দেয় Iআমি আগ্রহ নিয়ে পড়ি Iউত্তর লিখতে বসি Iচিঠি চালাচালি চলতে থাকে Iরূপা আমাকে চেনে না,আমিও তাকে চিনি না Iগভীর আগ্রহ এবং আনন্দ নিয়ে তাকে চিঠি লিখে যাই Iমাতাল সময়ে লেখা প্রেমপত্রগুলিই হয়তোবা আমার প্রথম সাহিত্যকর্ম I

    আমার বন্ধুর সঙ্গে রূপা মেয়েটির বিয়ে হয়নি Iআমার বন্ধু তার পরিচিত এক আত্মীয়াকে বিয়ে করে শ্বশুরের পয়সায় ইংল্যান্ড চলে গেলো Iতার বিয়ের দাওয়াতে কুমিল্লা গিয়েছিলাম Iবিয়ের আসরে বন্ধুপত্নীকে দেখে ধাক্কার মতো খেলাম Iঅতি স্বাস্থ্যবতী কন্যা Iমাথা শরীরের তুলনায় ছোট Iমেয়েটিকে অত্যন্ত আনন্দিত মনে হলো Iসে সারাক্ষণই হাসছে Iকিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটির সারাক্ষণ হাসির কারণ বের করলাম Iতার দাঁত মুখের বাইরে,ঠোঁট দিয়েও সেই দাঁত ঢেকে রাখা যায় না I

    Download

    রূপাকে আমি দেখিনি Iতার ছবি দেখেছি Iকী মিষ্টি কী শান্ত চেহারা !পটে আঁকা ছবি I রূপা যেন হারিয়ে না যায় তার জন্যই হিমুর বান্ধবী হিসেবে আমি তাকে নিয়ে আসি Iহিমুকে নিয়ে লেখা প্রতিটি উপন্যাসে রূপা আছে I

    আমরা কাউকেই হারাতে চাইনা, কিন্তু সবাইকেই হারাতে হয় I”

    --------- পৃষ্ঠা- ১২০

    পরিশেষে আবারও বলছি, “মাতাল হাওয়া”কে কিছুটা স্মৃতিকথামূলক উপন্যাস বলা চলে,তবে খুব জোরালো নয় , রাজনৈতিক ছায়া বিদ্যমান । উপন্যাসের শেষ এত ভয়ংকর হবে জানলে আমি হয়তো পড়া শুরুই করতাম না Iএকরাশ মন খারাপ আর অস্থিরতা নিয়ে বসে ছিলাম শেষ পৃষ্ঠা পার করে !তবে ঔপন্যাসিক অনেকবার আভাসে বুঝিয়েছিলেন শেষটা কতটা ভয়ংকর হতে যাচ্ছে । যারা এখনো পড়েননি নির্দ্বিধায় হাতে তুলে নিন উপন্যাসটি ।

    উপন্যাস : মাতাল হাওয়া
    ঔপন্যাসিক : হুমায়ূন আহমেদ 
    প্রকাশনী :অন্যপ্রকাশ 
    মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০

    লেখক : প্রিয়াংকা বিশ্বাস
    সাবেক শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ,
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

    বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বই ধার করতে সদস্য হোন

    Download

    বইয়ের ফেরিওয়ালায় লিখতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন

    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন