Skip to content
Home » একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    একাত্তরের দিনগুলি
    Redirect Ads

    আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির কথা আমরা সবাইই কমবেশি জানি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সবচেয়ে আলোচিত ও পঠিত বইয়ের একটি এটি। আমস্টারডামের এক লুকানো কক্ষে বসে কিশোরী মেয়েটি প্রতিদিনের আতঙ্কময় দিনগুলোর কথা লিখে গিয়েছিলো, যতদিন না পর্যন্ত সে ধরা পড়েছিলো নাৎসিদের হাতে। ধরা পড়ার পর তার পরিণতি হয়েছিলো আর অন্যসব ইহুদিদের মতই, তাকে পাঠানো হয় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে এবং টাইফাস রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা যায় সে। যুদ্ধ শেষে তাঁর বাবা সেই ডাইরিটি খুঁজে বের করে প্রকাশ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই পুরো দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলে এই বই।

    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও এরকম বেশ কিছু দিনলিপি আছে। সুফিয়া কামালের “একাত্তরের ডায়েরি, নীলিমা ইব্রাহিমের “আমি বীরাঙ্গনা বলছি”, এম আর আখতার মুকুলের “আমি বিজয় দেখেছি”। তবে একাত্তরের সেইসব উত্তাল দিনরাত্রিকে নিয়ে লেখা সবচেয়ে অনবদ্য লেখনী হিসেবে সবার আগে নাম আসে শহীদজননী জাহানারা ইমামের লেখা “একাত্তরের দিনগুলি“-র। শুধু একজন শহীদ জননী লিখেছেন বলেই নয়, এই বইটি এতো প্রাসঙ্গিক আর জনপ্রিয় হওয়ার কারণ এর অসাধারণ বর্ণনাভঙ্গি।

    Download

    মুক্তিযুদ্ধের সময়টায় অবরুদ্ধ ঢাকায় কিভাবে আতঙ্কের সাথে দিনাতিপাত করেছে মানুস, সেইসব দিনের সাবলীল বর্ণনা দিয়েছেন লেখিকা। পুত্র হারানোর শোক, যুদ্ধের শেষ মুহুর্তে যখন সবাই বিজয়ের দিন গুনছে সে সময় স্বামী শরিফ ইমামকে হারানোর শোক, সব ছাপিয়ে তিনি লিখে গেছেন। লিখে গেছেন সাঙ্কেতিক ভাষায় যেহেতু বাসা সার্চ হবার সম্ভাবনা সবসময়ই ছিল।

    আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

    জাহানারা ইমামের একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সরদার ফজলুল করিম। সেখানে জাহানারা ইমামকে তিনি যখন প্রশ্ন করেন সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে তিনি কিভাবে দিনের পর দিন ডাইরি লিখেছেন। জবাবে তিনি বলেছিলেন এটা তাঁর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো নিজের খাতায় টুকিটাকি লিখে রাখা। তবে বিপদ হতে পারে আঁচ করে রুমির নাম লিখতেন উলটা করে মীরু। মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচশ টাকা পাঠিয়ে দিলে লিখতেন লন্ড্রিতে পাঁচখানা কাপড় পাঠিয়েছি। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ণনা আছে এই ডাইরিতে। সেদিনের রোজনামচায় লিখেছেন,

    “আজ ভোরে বাসায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তোলা হলো।মঞ্জুর এসেছিলেন, বাড়িতে যারা আছেন, তারাও সবাই ছাদে উঠলেন। ২৫ মার্চ যে ফ্ল্যাগপোলটায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আবার নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম, সেই ফ্ল্যাগপোলটাতেই আজ আবার সেদিনের পতাকাটাই তুললাম। সবাই কাঁদতে লাগলেন। আমি কাঁদতে পারলাম না। জামীর হাত শক্ত মুঠিতে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।”

    এই ধ্রুব লাইনগুলোতে উঠে এসেছে বিজয়ের সুচনালগ্নে এই সংগ্রামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা কিছু মানুষের আবেগ,তাঁদের স্বজন হারানোর অপরিমেয় বেদনার গল্প। একইসাথে পুরো ডাইরিজুড়ে আছে ঢাকার বিখ্যাত গেরিলা দল ক্র্যাক প্ল্যাটুনের সদস্যদের নিয়ে বর্ণনা, যার মধ্যমণিদের একজন ছিলেন লেখিকার বড় ছেলে শফি ইমাম রুমি। রুমি শেষমেশ আর শুধু জাহানারা ইমামের পুত্র হয়ে থাকেননি, তিনি হয়ে উঠেছেন পুরো বাংলাদেশের প্রিয়মুখ, বাংলাদেশের সাহসী গেরিলাদের আত্মত্যাগের বিমূর্ত প্রতীক। সরদার ফজলুল করিম এই বই সম্পর্কে লিখেছিলেন-“একাত্তরের দিনগুলি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক টেস্টামেন্ট, এক বিশেষ দলিল। কেবল তাই নয়। এ সততায়,সত্যে,আবেদনে,পরিমিতিতে সংযমের অত্যাশ্চর্য প্রকাশে অত্যাবশ্যক গ্রন্থের রুপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশের হাজার হাজার পাঠকের ঘরে এ গ্রন্থ আজ রক্ষিত।”

    Download
    আব্দুল্লাহ সাদমান জামী,
    ২য় বর্ষ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,  
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
    Facebook Comments
    Tags:
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন