Skip to content
Home » আহমদ ছফা – প্রেম ও বিয়ে

আহমদ ছফা – প্রেম ও বিয়ে

    আহমদ ছফা জীবনী শামীম শিকদার ভাস্কর
    Redirect Ads

    আহমদ ছফা চিরকুমার ছিলেন একথা সবাই জানে। কিন্তু আহমদ ছফা মুগ্ধ ছিলেন একজনের প্রেমে। রীতিমতো জীবন-মরণ প্রেম। ছফা বরাবরই ভাস্কর শামীম শিকদারের প্রতি তাঁর দূর্বলতার কথা বলেছেন।

    তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস “অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী“-তে তা উঠে এসেছে। যেখানে শামীম শিকদারের চিত্র তিনি এঁকেছেন “দূরদানা” চরিত্রে। শামীম শিকদার ছিলেন ছফার প্রথম প্রেমিকা। এই প্রেমটা অনেকাংশে ছিলো একপাক্ষিক।

    Download

    চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর অনেকটা নিরাশ্রয় হয়ে পড়েন ছফা। ছিলেন অন্যের আশ্রয়ে‌। আজ এখানে তো কাল ওখানে। কিছু পত্রিকায় অনুবাদের কাজ করতেন, আর প্রুফ রিডারের কাজ। তাও একবারে স্বল্প। তিনবার প্রুফ দেখার পর প্রতি ফর্মা প্রতি দেয়া হতো মাত্র সাড়ে তিন আনা‌।

    জীবনের এই কঠিন বাস্তবতা, ছফা তা অনুভব করেছেন বারেবারে।
    এরই মধ্যে ছফার একটি বাজে দোষ ছিলো। যদিও তাঁর জীবনের প্রতি একধরনের বিতৃষ্ণা জন্মেছিলো। যে মেয়ের সাথেই কথা হতো। কদিন বাদে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসতেন তাঁকে। এতে ঐ মেয়েরা খুব বিব্রত বোধ করতেন, অপমানিত হতেন‌। আবার তিনি নিজে উল্টো বলে বেড়াতেন মালেকা বেগম, সুরাইয়া খানম, শামীম শিকদার আমাকে বিয়ে করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তখন বিয়ে করার জন্য অনেকটা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন ছফা। তাঁর নারী সান্নিধ্যের ভীষণ প্রয়োজন ও ছিলো। ছিলো একটু খানি দিনশেষে আশ্রয়ের প্রয়োজন।

    কিন্তু ছফার এই আচরণে মেয়েরা ভীষণ বিরক্ত ও অপমানিত। অনেকেই তাঁকে দেখলে এড়িয়ে চলতো। কিন্তু তাঁর সঙ্গ ছাড়লোনা শামীম শিকদার।

    শামীম শিকদার ছিলেন বিখ্যাত ছাত্রনেতা সিরাজ শিকদারের বোন। ভীষণ বেপরোয়া স্বভাবের শামীম শিকদার। কারো ধার ধারেন না। অনেকেই বলতো পান্ডা শামীম।

    Download

    একদিন ছফা শামীম শিকদারকে নিয়ে গেলেন আবুল কাসেম ফজলুল হকের বাড়িতে। ঘরে ঢুকতেই ছফার সঙ্গে শামীম শিকদারকে দেখে আবুল কাসেম ফজলুল হক জিজ্ঞেস করলেন। কেন এসেছো?
    ছফা বললেন, আমরা বিয়ে করবো। শামীম আমাকে বিয়ে করতে চায়। বিয়ে করার জন্য এসেছি।

    ভীষণ আশ্চর্য হয়ে আবুল কাশেম ফজলুল হক বললেন, তো আমার এখানে কেন? আমার কি প্রয়োজন?
    ছফা বললেন, আপনাকে লাগবে বলেই তো এসেছি। আমার ঢাকায় থাকার জায়গা নেই। বিয়ের পরে আপনার এখানে থাকবো।

    আবুল কাশেম ফজলুল হক মেনে নিলেন। তিনি তাঁর বাড়ির একটি ঘর এক মাসের জন্য ছফার জন্য ছেড়ে দিতে তৈরী। কিন্তু শর্ত একটাই।

    ছফা বললেন, আবার কি শর্ত?
    আবুল কাশেম ফজলুল হক বললেন, আগে বিয়ে রেজিস্ট্রি হবে। কাজী ঠেকে আনুন। তারপর থাকাখাওয়া।

    আহমদ ছফা চলে গেলেন কাজী আনতে। এরই মধ্যে শামীম শিকদার বললেন, আমি উঠছি।
    বিস্ময়ের চোখে ফজলুল হক জিজ্ঞেস করলেন তবে বিয়ে কখন? ছফা যে কাজী আনতে গেল‌।

    Download

    শামীম শিকদার কোন ভণিতা করেই বললেন,

    “বিষয়টা আমি মজা করেছি। ওর সাথে স্রেফ মজা করলাম। ছফার সাথে বিয়ে করা যায় নাকি!আর ওসব বিয়ে সংসারে আমার পোষাবে না। তিনি সবাইকে বলে বেড়ান আমি নাকি তাঁকে বিয়ে করার জন্য পাগল। আদতে যতোসব ফালতু কথা। আর উনার ব্যক্তিত্ব বলতে কিছু আছে কিনা আমার সন্দেহ। যাকেই দেখেন তাঁকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন।”

    ফিরে এসে শামীম শিকদারকে না পেয়ে আবুল কাশেম ফজলুল হকের মুখে আদ্যোপান্ত শুনে ছফা মে আঘাতটি পেয়েছিলেন তা বাকি জীবনে ভুলতে পারেননি। আর কখনো বিয়ে বা প্রেমের চিন্তাও মাথায় আনেননি।

    তবে তাঁদের বন্ধুত্ব আজীবনই ছিলো। কবি অসীম সাহা স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন-

    “একদিন সন্ধ্যায় ছফা ভাইয়ের ওখানে যেতেই তিনি আমাকে বললেন, চল অসীম, শামীমের ওখানে যাই। আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের পূর্বদিক দিয়ে তখন আর্ট কলেজে যাবার রাস্তা ছিল। আমরা বেরিয়ে পড়ি। হাঁটার এক ফাঁকে ছফা ভাই আমাকে হঠাৎ করেই বলে ফেললেন, বুঝলে অসীম, আমি বোধহয় শামীমকে ভালবেসে ফেলেছি। আমি বললাম, ভাল কথা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, না না, কিন্তু ওকে আমি বিয়ে করব না। আমি বললাম, কেন? তিনি বললেন, ও আমাকে মেরে ফেলবে।”

    (ছফা, স্মা., পৃ. ৮৫)

    ছবি- আহমদ ছফা ও শামীম শিকদার যখন বাংলামোটরে
    ছবি কৃতজ্ঞতা- সুশীল চন্দ্র সিংহ।

    Download

    লিখেছেনঃ Ahmad Istiak

    বইয়ের ফেরিওয়ালায় আপনার লেখা প্রকাশ করতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন।

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন