সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, “এ কাহিনীর মূল নায়কের নাম সময়।” সমাজবিজ্ঞানে “Social Change” নামে একটা কোর্স আমাদের পাঠ্য ছিল, সেখানে কম বেশি সবাই বাংলা রেঁনেসার কথা পড়েছি । “সেই সময়” উপন্যাসটি সেই বাংলা রেঁনেসার সময়কেই ধরার চেষ্টা করে, আর কে না জানে, কবি যখন কোন ইতিহাস গ্রন্থ লেখেন তখন তা শুধু ইতিহাস হয়েই থাকে না, কবিতাও হয়ে যায় !
“সেই সময়” এ জন্যেই অনন্য ।
যদিও ইতিহাসবেত্তাদের মতে রেঁনেসা এসেছিল আঠারশ পঁচিশের দিকে, সুনীলের উপন্যাসের সময়কাল কিন্তু ১৮৪০-১৮৭০ ! লেখক এখানে প্রথমেই প্রচলিত মতের কিছুটা বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘ইয়ং বেঙ্গল’ গোষ্ঠীর আবির্ভাব এ পুনর্জাগরণের প্রভাবক হলেও তার বিকাশ হয়েছিল আরো দু’ তিন দশক পর । “সেই সময়” উপন্যাসটি মূলত ‘নবীনকুমার’ নামে এক ক্ষণজন্মা বাঙালি যুবকের ঘটনাবহুল জীবনের গল্প বলে । সুনীল এখানে ছদ্মনামের আশ্রয় নিলেও বিদ্যোৎসাহিনী সভা, মহাভারতের অনুবাদ ইত্যাদি বিভিন্ন ইতিহাসশ্রয়ী উপাখ্যান আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নবীনকুমার “কালীপ্রসন্ন সিংহ” ছাড়া আর কেউ হতেই পারেন না !
শুধু কালীপ্রসন্ন সিংহই নন, এ উপন্যাস একইসাথে মেদিনীপুরের ঈশ্বরচন্দ্র , যশোরের মাইকেল অথবা পোস্টমাস্টার দীনবন্ধু মিত্রের সাথেও আমাদের পথ চলতে শেখায় । কখনো প্রিন্স দ্বারকানাথ তার ইংল্যান্ড জয়ের গল্প শোনান, কখনো ডেভিড হেয়ারের অকাল মৃত্যুতে আমাদের চোখেও জল আসে । ইংল্যান্ডের বীটন সাহেব বাঙালি উচ্চারণে কীভাবে বেথুন সাহেব হয়ে উঠলেন অথবা মাইকেল পত্নী আরিয়েত্তাই যে আমাদের হেনরিয়েটা , “সেই সময়” -এ না গেলে কি আর জানা সম্ভব ? সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজে ইতিহাস ভালোবাসতেন বলেই বোধহয় এতটা শ্রমসাধ্য পরিশ্রম করেছেন, এ আকরগ্রন্থটি রচনায় ।
কোন চরিত্রই পুরোপরি সাদা অথবা কালো হন না, তাই মাইকেল যখন অপরিমিত মদ্যপানে তার দুঃসময় নিজেই ডেকে আনেন, আমরাও তার ওপর রেগে যাই । কখনো নবীনকুমারকে ভীষণ ছেলেমানুষ মনে হয়, কখনো বা বিধুশেখর বাবুকে । “সেই সময়” পাঠককে নতুন করে আরো একবার “বর্ণপরিচয়” বা “শর্মিষ্ঠা” পড়ার লোভটাও যে উসকে দেয় না, তাই বা বলি কি করে !
সবশেষে নবীনকুমারকেই একটু উদ্ধৃত করা যাক, মৃত্যুশয্যায় তাঁর আশ্বাসবাণী নিজেদের ব্যর্থতাকেই মনে করায় বারবার !
“. . .খুব বাসনা ছিল পরের শতাব্দীটি দেখে যাবো. . . কতই বা দূর ! সেই এক রাত্রে ঘন ঘন তোপধ্বনির মধ্যে এই শতাব্দীর অবসান হইয়া বিংশ শতাব্দী আসিবে. . . মনশ্চক্ষে যেন দেখিতে পাই. . . তাহা কত আলোকজ্জ্বল. . . কত আনন্দময়. . . .হে অনাগত যুগ, তোমার জয় হউক ! “
বইঃ সেই সময় Download (PDF)
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
লিখেছেনঃ Tasnia Tahsin Shuha
ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত