“আমি যখন ইউনিভারসিটিতে পড়ি তখন মুনীর ভাই (শহিদ মুনীর চৌধুরী) আমাদের মীর মশাররফের “গাজী মিঞার বস্তানী” পড়াতেন। দেখতাম উনি যখন লেকচার দিতেন সম্পূর্ণ ক্লাশ ছাত্রছাত্রীতে ভরে যেত — এমনকি অন্য ক্লাশের ছাত্রছাত্রীরাও পেছনে দাঁড়িয়ে যেত এবং তাঁর লেকচার উপভোগ করতো। আনিসুজ্জামান স্যার আমাদের রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন পড়াতেন — কী ভালোই পড়াতেন! আরও ছিলেন মোফাজ্জল হায়দার স্যার, হেনা স্যার, রফিক স্যার, মনিরুজ্জামান স্যার। এঁরা আরও অনেকে। মোফাজ্জল হায়দার স্যার এবং মুনীর ভাই দুজনই ১৯৭১-এর ১৪ডিসেম্বর আরও অনেক বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে পাকবাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত হন।”
ফেরদৌসী মজুমদার
উপরের কথাগুলো বলেছেন অন্যতম প্রিয় নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার। তিনি আমার প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অগ্রজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাণের বিভাগ নিয়ে তিনি যে স্মৃতিচারণা করেছেন তা হৃদয়গ্রাহী। তাঁর জীবনী পড়ছি আর ক্ষণে ক্ষণে নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। কলাভবনের ২০১৭ নম্বর রুমটা যেন আমায় হাতছানি দিচ্ছে , আহা প্রিয় কাঠ-গোলাপের গন্ধ মাখা বাংলা বিভাগের করিডোর।
ওনার জীবনের সবথেকে সুন্দর অধ্যায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটা, এই একই কথা আমিও উপলদ্ধি করি। স্কুল – কলেজের বাঁধা ধরা গণ্ডি আমায় কখনোই টানে না, আমিও কেবল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা ফিরে পাবার প্রবল আকাঙ্খা পুষে রাখি মনে।
বইয়ের একটা অধ্যায় ছিল তাঁর শাশুড়ীমাকে নিয়ে, অকপটে তিনি তাদের সম্পর্কের বোঝাপড়া ব্যক্ত করেছেন। সুশ্রী পরিবারে কালো মেয়ের বধূ রূপে পদার্পণ এবং সকলের মন জয় করা সেই আমলে মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। একটা বিষয়ে খুব আলোড়িত হয়েছি , তাঁর শাশুড়ীমার সারল্য। বই থেকে তুলে ধরছি :
“আমি যখন অন্তঃসত্ত্বা, মা তখন আমার স্বামীকে চিঠি লিখে বললেন, “যদি ছেলে হয় টেলিগ্রাম করিও ,আর মেয়ে হইলে চিঠি লিখিলেই চলিবে।” প্রথম পড়ে একটু মন খারাপ হয়েছিল ঠিকই। কিন্ত পরে অবাক হলাম কী সত্যভাষণ তাঁর! কী অকপটে তিনি বলতে পারলেন – বুঝলাম তাঁর এ কথার পেছনে তাঁর বংশ রক্ষার চিন্তা ছিল। কিন্ত আশ্চর্য! কিছুদিন পর দেখলাম ত্রপাকে মা অসম্ভব ভালোবাসতেন। “ভূতুনী” বলে ডাকতেন। তখন আমার মন খারাপটা একদিন দূর করে দিলেন এই বলে যে, “দেখ, আগে ঠিকই চেয়েছিলাম ছেলে হোক — কিন্ত মেয়ে হওয়ার পর দেখলাম নাতি হোক আর নাতনী হোক , সবাই আমার কাছে আদরের ধন।”
(পৃষ্ঠা — ৯৪)
বইটা সমসাময়িক অনেক অজানা বিষয়কে তুলে ধরেছে, তাঁর অভিনয়-জীবনের সাফল্য এবং তার পেছনের গল্পগুলো জেনে ভালো লেগেছে। যেহেতু এটি অনেকটা তাঁর আত্মজীবনীমূলক স্বীকারোক্তি। তবে আমি একে স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ বলেই উল্লেখ করবো। ভীষণ সাবলীল তাঁর ভাবনার প্রকাশ। সুখপাঠ্য বইটি পড়ুয়ারা পড়ে দেখতে পারেন। সবার জীবন থেকেই অনেককিছু শেখার আছে, তাইতো আত্মজীবনী কিংবা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ আমার ভালো লাগে।
উপন্যাস : যা ইচ্ছা তাই লেখক : ফেরদৌসী মজুমদার প্রকাশনী : জার্নিম্যান মুদ্রিত মূল্য : ৪০০ টাকা রিভিউ করেছেন: প্রিয়াংকা বিশ্বাস বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বই ধার করতে সদস্য হোন