Skip to content
Home » একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর গল্প…

একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর গল্প…

    মুনীর-চৌধুরী-Munier-Choudhury
    Redirect Ads

    প্রতিনিয়ত স্কুলে যাওয়ার সময় মুনীর চৌধুরী পাঠ্যবইয়ের সাথে আরও বহু বই দেখতে পেতো বাকিরা। অন্যরা যখন বিরতিতে খেলায় মগ্ন তিনি তখনো পড়ছেন। সহপাঠীরা তাই নতুন নাম দিলো ‘চালিয়াত’। একজন তো একদিন সন্দেহের চোখে বলেই ফেললো-
    “মুনীর আসলে তুই কি বই পড়িস, না লোক দেখাস?”
    তিনি বই হাতে ধরিয়ে বললেন, “যেখান থেকে ইচ্ছে জিজ্ঞেস কর, দেখ পারি কিনা!

    সবমিলিয়ে পরিবারে তাঁরা ভাইবোনেরা ছিলেন ১৪জন এবং মুনীর চৌধুরী ছিলেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয়। মুনীর চৌধুরীর বাবা খান বাহাদুর আবদুল আলীম চৌধুরী ছিলেন ইংরেজ আমলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। বাড়িতে তাঁদের বইয়ের সমারোহ। বাবা বলতেন তোদের পৈত্রিক সম্পত্তি হলো আমার এই বই। এবার তোমরা জ্ঞান সমুদ্রে সাঁতার কাটো। ১৪ বছর বয়সে ছেলের জন্মদিনে বাবা আবদুল আলিম চৌধুরী ছেলেকে উপহার দিয়েছিলেন ২৭ খন্ডের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকা।

    Download

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তাঁর ক্লাস করতে হুড়োহুড়ি লেগে যেত ছাত্রদের মধ্যে। অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। একটু আগের ভীষণ চেঁচামেচি চলছে ক্লাসে আর তিনি ক্লাসে ঢুকলেন আর মুহূর্তেই শ্মশানের পিনপতন নীরবতা ক্লাসে। এবং কি যাদের ক্লাস নেই তারাও ক্লাসের সামনে ভিড় করতো। এতো উঁচুমানের শিক্ষক ছিলেন তিনি। তাঁর পড়াশোর ভঙ্গিটাই ছিলো সম্পূর্ণ আলাদা। মুনীর চৌধুরীর ক্লাস যিনি একবার করেছেন তিনি নাকি সেই গল্প সারাজীবন করেছেন।

    এক সাহিত্য সভায় কবি আব্দুল কাদির চৌধুরী তাঁকে আগেই বলে নিয়েছিলেন—

    ‘ও মুনীর স্যার, আপনি কিন্তু পরে বলবেন, আমরা আগে বলে নিই। আপনি আগে বললে আমাদের কথা শোনার জন্য কোনও শ্রোতা থাকবে না।’

    ১৯৫৩ সালে কারাবন্দী অবস্থায় লিখেছিলেন ভাষা আন্দোলনের উপর বিখ্যাত নাটক “কবর”
    কারাগারে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৩ সালে বাংলায় প্রাথমিক এম এ তে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলেন তিনি। আরেক কারাবন্দী অধ্যাপক অজিত গুহের কাছেই শিখেছিলেন তিনি প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্য।

    কবর নাটক রিভিউ

    বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ‌১৯৪৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যে প্রথম ছাত্রসভা হয়, তাতে তিনি বক্তৃতা করেছিলেন। একাধারে তিনি ৫২ এর ভাষা সৈনিক ও ৬৫ সালে কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে টাইপরাইটারের জন্য নিজ নামে “মুনীর অপটিমা” নামে উন্নতমানের কী-বোর্ড উদ্ভাবন তাঁর হাতে।

    Download

    ১৯৬৬ সালে তাঁকে পাকিস্তান সরকার ভূষিত করলো বিখ্যাত সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পদকে। কিন্তু ২৬শে মার্চেই তিনি বর্জন করলেন সেই পদক। ৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় নেতা, আল বদর কমান্ডার চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের নির্দেশে কিংবদন্তি নাট্যকার, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো তাঁর পৈতৃক নিবাস ‘দারুল আফিয়া’ থেকে। এরপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর হত্যা।

    রায়ের বাজারের সেই বধ্যভূমি থেকে অন্য আরও অনেক বুদ্ধিজীবীর মতোই আলাদা করে শনাক্ত করা যায়নি মুনীর চৌধুরীকে। অথচ সেই খুনী দুই জামায়াত নেতার ফাঁসির রায় হলেও কার্যকর হয়নি আজ অব্দি। আজো আশরাফুজ্জামান পালিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রে, আর মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে। হয়তো ওপার থেকে বুদ্ধিজীবীরা আমাদের চিরকালেও ক্ষমা করবেন না। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই কিংবদন্তি মুনীর চৌধুরীর প্রতি।

    লিখেছেনঃ Ahmad Istiak

    বইয়ের ফেরিওয়ালায় আপনার লেখা প্রকাশ করতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন।

    Download

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন