Skip to content
Home » পুতুল নাচের ইতিকথা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

পুতুল নাচের ইতিকথা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    পুতুল নাচের ইতিকথা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    Redirect Ads

    ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ তত্ব, সমকালীন বিশ্বযুদ্ধোত্তর অবসাদ, সম্রাজ্যবাদী শক্তির পাশবিক ক্রিয়াকলাপ, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা — এ সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এঁর শিল্প-প্রতিভা বিকশিত এবং লালিত। তাঁর রচিত “পুতুল নাচের ইতিকথা” (১৯৩৬) উপন্যাসে ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্বের প্রভাব লক্ষণীয়।

    “পুতুল নাচের ইতিকথা”অধিকতর ব্যাপক এক সামাজিক বাস্তবতাকে ভিত্তি করে প্রবাহিত। এ বাস্তবতার সাথে অনিবার্যভাবে জড়িত মানব-ভাগ্য। ডাক্তার শশী আর কুসুম উভয়ই অনুচ্চারিত ভালোবাসার দুই নিপীড়িত আত্মা। সামাজিক সংস্কারের লৌহ খাঁচায় দুজনে বন্দী। সামাজিক প্রেক্ষিত এমনই ভয়াবহ যে সংস্কার মুক্ত ডাক্তার হয়েও শশী তাকে ডিঙিয়ে যাবার এতোটুকু দুঃসাহসের পরিচয় অবধি দিতে পারেনা। কুসুম তো নারী, পল্লী বাংলার শত-সহস্র সংস্কারের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা! কী এক অপূর্ব কৌশলেই ঔপন্যাসিক এই দুই অনন্য চরিত্রে সৃষ্টি করেছেন।

    Download

    মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন —

    “সত্যিই তো আর পুতুল নয় মানুষ। অদৃশ্য শক্তি বা অন্য মানুষের আঙুলে বাঁধা সুতোর টানে সত্যই তো মানুষ পুতুলের মতো নাচে না”

    কিনতু তিনি যখন “পুতুল নাচের ইতিকথা” উপন্যাসটি লিখলেন আমরা প্রশ্ন করতেই পারি এই পুতুলের অদৃশ্য সুতো তবে কার আঙুলে বাঁধা? এর উত্তর জানতে হলে পাঠককে উপন্যাসের প্রধাণ চরিত্র শশী এবং আবর্তনে থাকা গাওদিয়ার মানুষের সাদামাটা জীবনযাত্রার গভীরতাকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাহলেই পাঠক বুঝতে পারবে এই অদৃশ্য দড়ি আসলে কোন অদৃশ্য শক্তির আঙুলে বাঁধা নেই, বাঁধা পড়ে আছে মানুষের নিজের হাতেই! মানুষ সব জেনেও পুতুল হয়ে থাকে – কখনো সমাজের চোখে, কখনো পরিবারের চোখে, আবার কখনো ভালোবাসার মানুষের কাছে।
    যেমন কুসুম সাতটি বছর অবহেলায় কাটিয়েছে গাওদিয়ায়, আবার একসময় নিজে থেকেই সুতো টেনে চলে গেছে বাপের বাড়ি। এমন অনেক দৃষ্টান্তই উপন্যাসে বিদ্যমান।

    মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন –

    “সাহিত্যিকেরও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন”

    আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

    Download


    “পুতুল নাচের ইতিকথা”-য় সেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ লক্ষণীয়। উপন্যাসটির সূত্রপাত বজ্রাঘাতে নিহত হারু ঘোষের বর্ণনার মধ্যদিয়ে। নায়ক শশী ডাক্তার বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও শবস্পর্শ অনুচিতসহ এমন নানা কুসংস্কার তার মধ্যে বিদ্যমান। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের টানাপড়েন ও অস্তিত্বের সংকট শশী চরিত্রের মধ্যদিয়ে প্রকাশিত। কুসুম ভালোবাসায় ভর করে বৃষ্টিতে ভিজে তার কাছে এসেও শশী নিশ্চুপ থাকে। লোকায়ত ভাষায় মনের কথা ব্যক্ত করে কুসুম। উচ্ছ্বল এই নারী একসময় অন্তর্গতভাবে সবকিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কাজেই বলা যায় কুসুমের আত্মিক মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে সেনদিদির সাথে শশীর পিতা গোপালের সম্পর্ক, যাদব পণ্ডিত এবং তার সহধর্মিণীর ইচ্ছা-মৃত্যু ইত্যাদি ঘটনা উপন্যাসটিকে বিচিত্র করে তুলেছে।
    উপন্যাসে পুতুল বলতে মূলত এই মানুষগুলোকেই বোঝানো হয়েছে, যারা চারিত্রিক দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারে না; পুতুলের মতো অন্যের সামান্য ধাক্কাতে চালিত হয়।

    জীবন-ঘনিষ্ঠ এই মানুষগুলোর চরিত্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ আখ্যান রচনাতেই মানিকবাবুর সার্থকতা নিহিত। তাঁর জীবনবোধ, সমাজ চেতনা ও বিজ্ঞান মনস্কতার এক পরিপূর্ণ মিথস্ক্রিয়া হচ্ছে এই অভূতপূর্ব উপন্যাসটি।

    উপন্যাস – পুতুল নাচের ইতিকথা
    ঔপন্যাসিক – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    পুতুল নাচের ইতিকথা বইটির pdf download করতে এখানে ক্লিক করুন

    Download
    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন