ইদানিং বই তেমন পড়া হচ্ছে না কিন্তু প্রচুর মুভি দেখা হচ্ছে। মুভিও আগে তেমন দেখা হয় নি তাই এখনও অনেক ক্ল্যাসিক মুভিই দেখা বাকি৷ তো ভাবলাম শুরু তো করি, পরে যা হয় হবে। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব তা যখন ভেবে পাচ্ছিলাম না তখনই আইএমডিবির (IMDb) লিস্টের কথা মনে পড়ল। যেই ভাবা সেই কাজ, দেখলাম বেশ কয়েকটা। কিন্তু সেদিন হঠাৎ লক্ষ্য করলাম দুই আর তিন নাম্বারই তো দেখা হয় নি লিস্টের। ভাবলাম দেখা শুরু করি কিন্তু তখনই মনে পড়ল বইটা আগে মনে নিলে কেমন হয়, সেজন্যই বইটা পড়া।
সহজ ভাষায় বললে কাহিনিটা একটা মানুষের আবার একটা পরিবারের আবার একটা জাতিগোষ্ঠীর আবার একটা সাম্রাজ্যেরও। ভিটো কর্লিয়নি যিনি সাধারণত ডন বা গডফাদার নামে পরিচিত বইটা মূলত তাকে কেন্দ্র করেই। ইতালির সিসিলি দ্বীপের এক ব্যবসায়ীর সন্তান কিভাবে সাধাসিধে এক মানুষ থেকে নিউইয়র্ক নিয়ন্ত্রণকারী পাঁচ পরিবারের একজন হল কাহিনিটা মূলত সেটাই।
আবার কাহিনিটা মাইকেল কর্লিয়নি বা মাইকেরও যে সবসময় বাবার ব্যবসা থেকে দুরে থেকেও, আমেরিকার হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও একসময় কর্লিয়নি পরিবারের নিয়ন্ত্রণকারী হয়ে গেল। আবার কাহিনিটা আমেরিকা নিয়ন্ত্রণকারী, সেটা হলিউড থেকে শুরু করে রাজনীতি বা বিচারব্যবস্থা, কিছু ইতালীয় পরিবারের যারা বৈধ ব্যবসার আড়ালে মাদক, পতিতা, জুয়া, চোরাকারকার এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা তারা করে না, যাদের সামান্য রাগেও পুরো আমেরিকা জ্বলে ওঠে। আবার বইটা কনি কর্লিয়নি, কে অ্যাডামস, আ্যাপলোনিয়া বা লুসি মানচিনিরও যারা নানাভাবে জড়িত হয়ে পড়ে এসব ব্যবসার সাথে। ক্লেমেঞ্জা, টেসিও, হেগেন, লুকা ব্রাসি, সনি কর্লিয়নি, টেরি, ফন্টেন, নিনো, কার্লো এদেরই বা বাদ দেই কি করে কেননা এদের সামান্য আচরণের পরিবর্তনেও যে নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছে বইটা তথা কর্লিয়নি পরিবার তথা সিসিলিয়ান সাম্রাজ্য।
সেরা একটা ক্রাইম ফিকশন। এত বেশি চরিত্র আর বিস্তৃতি সত্ত্বেও বিরক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ডনদের জীবনের যে অনিশ্চয়তা বইটাও তাই, কোনো কিছু আগাম ভাবার কোনো সুযোগ নেই। প্রতি মুহূর্তে থ্রিল, দিক পরিবর্তন। এই খুনোখুনি আবার এইতো এক টেবিলে বসে ডিনার করা। ঠান্ডা মাথায় দশ-বিশ জন কে মেরে এসে বিছানায় প্রেমিকার সাথে সময় কাটানো; কখনোবা দলের ভিতরে থেকেই গুপ্তচরবৃত্তি করা, কখনো বেশি লোভের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করা। আর গডফাদার চরিত্রটা সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে বাধ্য, সমাজের ভিতর সমাজ, দেশের ভিতরে আরেকটা দেশ সৃষ্টি করেও, মানুষটা কি শান্ত, কি গম্ভীর, কি ভাবুক! আবার অন্যদিকে মাইকেল চরিত্র, উদাসীন যুবক যখন ব্যবসায় জড়িয়ে গেল তখন কি আমূল পরিবর্তন। যারা এখনও পড়েন নি তাদের পড়ার আমন্ত্রণ। আমার তো পড়া হলো যাই এবার মুভি তিনটা দেখে আসি!!!
মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম
তৃতীয় বর্ষ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বইয়ের ফেরিওয়ালায় লিখতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন
বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে বই ধার করতে সদস্য হোন