Skip to content
Home » আলমগীর কবির: বাংলাদেশী চলচ্চিত্র যার কাছে ঋণী

আলমগীর কবির: বাংলাদেশী চলচ্চিত্র যার কাছে ঋণী

    আলমগীর-কবির-alamgir-kabir
    Redirect Ads

    হালের জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্রকারকে চিনে অথচ আলমগীর কবিরকে চিনেনা এমন চলচ্চিত্র প্রেমীও দেখেছি। এটা যে আমাদের জন্য কতোবড় লজ্জার তা অপেক্ষা রাখেনা।

    বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যদি দুজন চলচ্চিত্রকারের কাছে সবচেয়ে ঋণী হয়ে থাকে তবে একজন জহির রায়হান হলে অন্যজন নিঃসন্দেহে আলমগীর কবির হবেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০ চলচ্চিত্রের তিনটিই তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র। অথচ আলমগীর কবির চলচ্চিত্রই নির্মাণ করেছেন ৭টি।

    Download

    বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।
    ধীরে বহে মেঘনা, সীমানা পেরিয়ে, রূপালী সৈকতে, পরিণীতা, মহানায়ক, সূর্য কন্যার মতো মাস্টারক্লাস চলচ্চিত্রের জন্ম তাঁর হাতে।

    ছাত্রজীবনেও আলমগীর কবির ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী।
    বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থী আলমগীর কবিরের চলচ্চিত্রের শুরুটাও অক্সফোর্ডে। নিজের চলচ্চিত্র জীবনের শুরুর ব্যাপারটা তিনি নিজেই বলেছিলেন ‘অক্সফোর্ডে পড়ার সময় ইংমার বার্গম্যানের ( বিশ্বখ্যাত সুইডিশ ফিল্মমেকার) ‘সেভেনথ সিল’ বেশ কবার দেখি। ওটা দেখার পরই আমার মনে হলো চলচ্চিত্রই আমার জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম হতে পারে।

    এরপর অক্সফোর্ডেই চলচ্চিত্রের ইতিহাস, পরিচালনা করা, চলচ্চিত্রের নন্দনতত্ত্বের উপর কিছু কোর্স করেছিলেন আলমগীর কবির।

    মুক্তিযুদ্ধের সময় আলমগীর কবির স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারের প্রধান প্রতিবেদক ও ছিলেন তিনি। প্রামান্যচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রের জীবন শুরু হয়।

    Download

    ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিখ্যাত চলচ্চিত্র “ধীরে বহে মেঘনা”। এই চলচ্চিত্রটির নির্মাণশৈলী বাংলাদেশে নির্মিত যেকোনো মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র থেকে আলাদা। কারন এই চলচ্চিত্রে আলমগীর কবির মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজ ও ফিকশন যেমন- মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধযাত্রা, ১৬ ডিসেম্বর ট্রাকভর্তি মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি এবং ঘরে ফেরার দৃশ্য। এমন বহু দৃশ্য ক্লিপ যুক্ত করেছিলেন।

    এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (বাচসাস) এবং জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এটি আলমগীর কবিরের পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ছিলো।

    এরপর ১৯৭৫ সালে নির্মাণ করেন তার দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “সূর্য কন্যা“। এই চলচ্চিত্রে আলমগীর কবির উপস্থাপন করেছেন ব্যক্তি, সমাজ ও ইতিহাসে নারীর অবস্থানের সাহসী ব্যাখ্যা। তার সূর্যকন্যা’র একটি স্বপ্নের সাহসী চরিত্র ছিল ল্যানিন। এই চলচ্চিত্রের দক্ষ নির্মাণ শৈলীর জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।। এই চলচ্চিত্র ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলো।

    ১৯৭৭ সালে নির্মাণ করেন তাঁর তৃতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “সীমানা পেরিয়ে“। এটি নির্মাণ করা হয় মূলত ১৯৭০-এর ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের একটি সত্যি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেই সময় এই জলোচ্ছ্বাসের ধ্বংসলীলার প্রায় তিন মাস পর একজোড়া মানব-মানবীকে বরিশালের দক্ষিণের একটি সামুদ্রিক চরে আদিম পরিস্থিতিতে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ঢাকার তত্কালীন সংবাদপত্রে ঘটনাটির বিবরণ আলমগীর কবিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তিনি এর বেশ কয়েক বছর পর সীমানা পেরিয়ে নামের এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচয়িতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

    Download

    এরপর ১৯৭৯ সালে নির্মাণ করেন “রূপালী সৈকতে“। রুপালি সৈকত চলচ্চিত্রটিও সেই সময় দারুণ আলোচিত হয়, বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (বাচসাস) পেয়েছিলেন।

    ১৯৮২ সালে নির্মাণ করলেন “মোহনা” চলচ্চিত্রটি, এটি তার পরিচালিত পঞ্চম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য রচয়িতার হিসেবে একটি পুরস্কার লাভ করেন। এটি আন্তজার্তিকভাবেও বেশ প্রশংসিত হয়। ১৯৮২ সালের মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব-এ মোহনা চলচ্চিত্রের জন্য আলমগীর কবির ডিপ্লোমা অফ মেরিট পেয়েছিলেন।

    তাঁর ষষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ছিলো “পরিণীতা“”।‌ ১৯৮৪ সালে এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলো। ১৯৮৫ সালে তিনি নির্মাণ করেন তার সপ্তম ও সর্বশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মহানায়ক। এটি প্রযোজনা করেছিলেন বুলবুল আহমেদ।

    আলমগীর কবির তাঁর দেড় যুগের চলচ্চিত্র জীবনে মোট সাতটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়া নয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন, এগুলো হলো- লিবারেশন ফাইটার, প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ, কালচার ইন বাংলাদেশ, সুফিয়া, অমূল্য ধন, ভোর হলো দোর খোল, আমরা দুজন, এক সাগর রক্তের বিনিময়, মনিকাঞ্চন ও চোরাস্রোত।

    Download

    তাঁকে হারানোর বেদনা টা ছিলো ভয়াবহ! এমন হবে কারো কল্পনাতেও হয়তো ছিলোনা। ১৯৮৯ সালের ২০শে জানুয়ারী বগুড়া জেলায় একটি চলচ্চিত্র বিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঢাকা ফিরে আসার পথে তাঁর গাড়ি পাবনার‌ নগরবাড়ি ফেরীতে উঠার জন্য অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু পিছন থেকে তাঁর গাড়িকে একটা ট্রাক ধাক্কা দিলে তাঁর গাড়িটি যমুনা নদীতে ডুবে যায়। গাড়ির ভিতরে থাকা আলমগীর কবির ও অভিনেত্রী টিনা খান পানিতে ডুবে মারা যান।

    তাঁর মতো চলচ্চিত্রকারকে অকালে হারিয়ে ফেলা আমাদের জন্য এক ভয়ংকর ট্রাজেডি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এটাই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নয়তো জহির রায়হান, আলমগীর কবির, তারেক মাসুদের মতো চলচ্চিত্রকারদের কেন আমরা অকালে দূর্ঘটনায় হারাবো। বাংলাদেশ এক দূর্ভাগা দেশ!

    আজ ২৬ ডিসেম্বর কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার চলচ্চিত্রচার্য আলমগীর কবিরের জন্মদিন। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই তাঁর প্রতি।

    লিখেছেনঃ Ahmad Istiak

    বইয়ের ফেরিওয়ালায় আপনার লেখা প্রকাশ করতে চাইলে এইখানে লেখা জমা দিন।

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    Download
    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন