Skip to content
Home » অনন্ত অম্বরে – হুমায়ূন আহমেদ | Anonto Ambore – Humayun Ahmed

অনন্ত অম্বরে – হুমায়ূন আহমেদ | Anonto Ambore – Humayun Ahmed

    অনন্ত অম্বরে হুমায়ূন আহমেদ
    Redirect Ads

    হুমায়ূন আহমেদের সাথে আড্ডা দিলাম! শুনতে অবাক লাগলেও কথাটি নিতান্ত অমূলক নয়। ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদ প্রচণ্ড আড্ডাপ্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। অনন্ত অম্বরে বইটি পড়লে মনে হবে লেখকের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। এ বইয়ে লেখক তার ব্যক্তিজীবন, সংসারজীবন, লেখক পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী জীবন, পরিচালকজীবন ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেছেন।

    বইটি রচনা ১৯৯১ সালে। লেখক কিভাবে ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেন, কিভাবে হলে সীট পেলেন, কলেজ জীবনের বিভিন্ন আনন্দ-বেদনার ঘটনা সুনিপুনভাবে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনা করেছেন তাদের পরিবারের দীনতা সত্ত্বেও কিভাবে স্নিগ্ধ মায়া-ভালবাসায় জড়িয়ে রাখতেন তাদের মা-বাবা। কলেজ জীবনে ম্যাজিশিয়ান হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার রহস্য সম্পর্কে বলেন। ইকোনমিক্সে ভর্তি হয়েও কেন পরবর্তীতে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হলেন, কিভাবে তা সম্ভব হল তার সরস বর্ণনা আছে এখানে।

    Download

    কেন সাইন্স ফ্যাকাল্টির হল রেখে মুহসিন হলে উঠলেন, মুহসিন হলে কিভাবে সীট পেলেন, মুহসিন হলে ঘটা আজব কিছু ঘটনারও বর্ণনা করেন। রুমে এনে জনৈক তরুণীকে ধর্ষণের, স্ত্রীসহ জনৈক ছাত্রের গোপনে রুমে থাকা, পোষা পাখির মৃত্যুর শোকে জনৈক ছাত্রের উন্মাদ হওয়া-এমন বিভিন্ন ঘটনা আছে এখানে উল্লেখ করা, হলজীবনে পরিচিত-অপরিচিত মানুষের জীবনকে পর্যবেক্ষণ করে দারুণসব ঘটনার বলেছেন। হল-ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বিশ্লেষণ করেছেন আড্ডার ছলে।

    এনএসএফ’র নেতা কর্মীরা হকিস্টিক, চেইন, গান নিয়ে ঘুরে বেড়াত, ত্রাস করত ক্যাম্পাসে। পড়ালেখার চাপের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেন ভাল পড়ালেখা না করলে, তখনকার দিনে “পড়াশোনা সন্তোষজনক নয়” লেখা চিঠি বাড়িতে চলে যেত।

    আরও পড়ুনঃ দেয়াল উপন্যাস হুমায়ুন আহমেদ PDF রিভিউ

    রসায়ন বিভাগের সামনে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে গল্প করছিল বলে ছেলেটিকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। রাজনীতির কাছে শিক্ষকদের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে বলেন,

    Download

    “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তখনো ছিলেন অসহায়, এখনো অসহায়। তাদের মেরুদণ্ড তখনো অশক্ত ছিল। এখনো অশক্ত আছে”।

    গল্পের ছলে বলেছেন প্রথম সিগারেট খাওয়ার অভিজ্ঞতা, প্রথম উপন্যাস লেখার কথা। ঘড়ি নিয়ে অদ্ভুত স্মৃতিচারণ করেছেন, তিনি বলেন-

    “যখন আমার স্ত্রী কোন কারনে আমার উপর রাগ করে-ঘড়ি বন্ধ হয়ে যায়। এই ব্যাপারটা একবার না, আমি অসংখ্যবার লক্ষ্য করেছি। গুলতেকিন রাগ করলে ঘড়ি বন্ধ হয়ে যায়। ঘড়ি এক সময় হঠাত এক সময় আপনা-আপনি চলতে শুরু করে। আমি হাসিমুখে বাড়ি ফিরি। জানি, গুলতেকিনের রাগ পড়ে গেছে। ঘরে ফেরামাত্রই সে বলবে- চা খাবে ? চা বানিয়ে এনে দেব?”

    দেবী উপন্যাসের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলেছেন, সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে লিখেছেন। নিজে ঘটকালী করতে গিয়ে বড় ধরনের বিপদের পরার অবস্থার বর্ণনা করেছেন। হঠাত একদিন কোর্টে বিয়ের করার জন্য জিজ্ঞেস করে মাত্র চৌদ্দ বছরের গুলতেকিনকে তিন মিনিট সময় দেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার, একমিনিট পরেই গুলতেকিন বলেন “চলুন যাই”। বাড়ি ছাড়ার সময় হয়ে যাওয়া, পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে করে ফেলা, লেখকের মায়ের অপরিসীম সাহস আর সহযোগিতার বর্ণনা গা ছমছম করা মুগ্ধতা ভর করে। শহীদ পরিবার হিসেবে পাওয়া বাড়ি বিয়ের পরদিনই ছেড়ে দিতে হয় তাদের, একরাত খোলা আকাশেও কাটাতে হয় তাদের। মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে স্বাধীনতা পুরষ্কার দেওয়ায় নীরব দুঃখ প্রকাশ করেছেন। হাউস টিউটর থাকাকালীন গুলতেকিনের সাথে তার সংসারজীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেছেন, মধ্য রাতে হলের মাঠে দুজনে হাটার গল্প বলেছেন।

    আরও পড়ুনঃ বাদশাহ নামদার রিভিউ PDF হুমায়ূন আহমেদ

    পাঠক ব্যক্তিজীবনে যত খারাপ শ্রোতাই হোক না কেন, লেখক এখানে তার এ বইয়ে পাঠককে করে তোলেন একজন আদর্শ শ্রোতা, প্রতিটি পাতা সৃষ্টি করে পরের পাতায় যাওয়ার প্রবল স্পৃহা। পড়ার সময় মনে হবে মুখে কথার ঝুরি ফোটে এমন এক ব্যক্তির সামনে বসে আছি যিনি এই নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা কলেজে, এই নিয়ে যাচ্ছেন কার্জনে, কখনওবা আমেরিকায়, কখনওবা ঢাকার বাইরে কোন শুটিং স্পটে।

    Download

    পড়তে পড়তে কখনো পাঠক হেসে উঠবেন, আবার গভীর বেদনাবোধ ছেপে যাবে পাঠকের অন্তর দিয়ে। মনে হয় যেন লেখক-পাঠক বসে আড্ডা দিচ্ছেন, যে আড্ডায় লেখক তার জীবনের নানান আনন্দ-বেদনার ঘটনা বলে যাচ্ছেন একে একে। আনন্দঘন মুহূর্ত তৈরির ফাকে ফাকে লেখক তার জীবনে ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক কিছু সত্যের চিত্র তুলে ধরবেন যা পাঠকের মনে বিন্দু বিন্দু বিষাদ হয়ে একসময় বিশাল এক গভীর অম্বর সৃষ্টি করবে যে অম্বর অনন্তকাল ধরে পাঠকের মনে গভীর দাগ কেটে যাবে।

    ভালোলাগার কয়েকটি উক্তি-

    “আমরা বাস করি বর্তমানে- অতীতেও না, ভবিষ্যতেও না”
    “মাঝে মাঝে কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে বলেই আমাদের এই জীবনে এবং এই পৃথিবী এত মজার”
    “অভিমান ভালবাসার মত, কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না”
    “সবরকম প্রতীক্ষাই কষ্টকর কিন্তু চায়ের প্রতীক্ষায় আনন্দ আছে”
    “মানুষকে অবিশ্বাস করলে ঠকতে হয়। যে সবাইকে বিশ্বাস করে সে ঠকে না”
    “মানুষকে চেষ্টা করে মহৎ হতে হয় না, মহত্ত্ব নিয়েই সে জন্মেছে”

    বইঃ অনন্ত অম্বরে Download (PDF)
    লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ

    রিভিউ করেছেনঃ সজীব আল মাসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

    Download

    ইউটিউবে বইয়ের ফেরিওয়ালার বুক রিভিউ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

    বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার

    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন