Skip to content
Home » হৃদয়ে প্রবাস – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

হৃদয়ে প্রবাস – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    হৃদয়ে প্রবাস
    Redirect Ads

    হৃদয়ে প্রবাস” লন্ডনের কোন এক বৃষ্টিস্নাত দিনে তপন এসেছিল তার পরিচিত বন্ধু অ্যালিসের কাছে জন্মদিনের উৎসব পালনের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ দেয়ালে টানানো একটা ছবিতে ছেলেটার চোখ আটকে যায়, বাঙালি ছেলেটা তার বিদেশিনী বন্ধুকে প্রশ্ন করে :

    — ঐ ছবিটা কার ?

    Download

    –আমার বাবার।

    — না, ঐ পাশে দাঁড়ানো লোকটি ?

    — দ্যাট জেন্টেলম্যান কিলড মাই ফাদার!

    ছেলেটি চুপ করে একদৃষ্টিতে ছবিটার দিকে চেয়ে থাকে। অনেক কালের পুরনো ছবি, রং জ্বলে লালচে হয়ে এসেছে, তবু স্পষ্ট চেনা যায়। কত দূরে, পৃথিবীর কোথায় যেন বাংলাদেশ বলে এই ভূখণ্ড আছে, তার একটা ছোট্ট গ্রাম, সেই গ্রামের স্কুল বাড়ির সামনে একজন বিশাল চেহারার ইংরেজ, তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একজন রোগা ছোটখাট চেহারার বাঙালি যুবা। ইংরেজটির হাতে লাল রিবন বাঁধা কয়েকটি বই ও মুখে বদান্যতার হাসি, বাঙালি যুবকটি হাত জোড় করে নমস্কার করে আছে। অন্তত ত্রিশ বছর আগে তোলা ছবি, তবু স্পষ্ট এখনো, এখনো দুজনের মুখের হাসি সম্পূর্ণ ম্লান হয়নি।

    Download

    আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে ৫০০ বই পড়া উচিত

    পাঠকের এতটুকু পড়ার পর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে পরাধীন ভারতবর্ষের কোন এক ইতিহাস লুকিয়ে আছে এই ঝুলে থাকা ছবিতে “হৃদয়ে প্রবাস” উপন্যাসের মূল কাহিনি গড়িয়ে গেছে দেয়ালে ঝোলানো ত্রিশ বছর আগেকার এই ছবিটাকে ঘিরে। তপন এবং অ্যালিসের সম্পর্কের টানাপড়েনটা শুরু হয় এই ছবিকে কেন্দ্র করে। কি সত্য লুকিয়ে আছে প্রায় ত্রিশ বছর আগেকার এই ছবির মাঝে সেটা জানতে হলে ছোট্ট উপন্যাসটা পাঠককে পড়ে নিতে হবে।

    সময় এবং পারিপার্শ্বিক দিনযাপনের অনুষঙ্গ মানুষকে কতটা বদলে দেয় তার সুন্দর চিত্র এঁকে দিয়েছেন ঔপন্যাসিক। যেমন : অ্যালিস নিখুঁতভাবে টেবিল সাজিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের এক অতি অখ্যাত গরীব পরিবারের ছেলে তপন, আজকাল সে এসব ব্যাপারে খুব তারিফ করতে পারে। খাওয়ার টেবিল ভালো করে সাজানো নয় দেখলে বিরক্ত হয় ,অথচ তাদের বংশে কেউ আগে কোনদিনই টেবিলে বসে খায়নি। আবার উদ্বাস্ত জীবনের শুরুতে শৈশবের আত্মীয়-স্বজনদের অবহেলা আজো তপনকে ব্যথিত করে। সময়ের আবর্তে উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাওয়া তপনকে যখন ছোট কাকিমা বিশেষ খাতির-যত্ন করেন, সেটাও বড্ড দৃষ্টিকটু বিভ্রম সৃষ্টি করে। কারণ, একদিন তপনের প্রতি তার আচরণ ছিল প্রভু – ভৃত্যের মতো। খুব সাবলীলভাবে উপন্যাসে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একদিকে বর্তমানের প্রেক্ষিতে সাদা চামড়াদের প্রতি ভারতীয়দের দাসত্বমূলক মনোভাব অন্যদিকে বিদেশের মাটিতে নিজেদের হীনমন্যতায় ভোগার অভিজ্ঞতাগুলো চিত্রায়িত করেছেন।

    আবার দেশের মাটিতে তুমুল সুখে দিনযাপনের সুজোগ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে কষ্টকর জীবন প্রক্রিয়ায় মানিয়ে নেয়া চরিত্রও দেখিয়েছেন। মোটকথা, মানুষের বিচিত্র জীবনবোধকে, রাজনৈতিক এবং দেশাত্মবোধক দর্শনের প্রভাব, স্বদেশপ্রেম, উপমহাদেশীয় রক্ষণশীলতা, সিদ্ধান্তহীনতার অনিশ্চয়তা সবকিছুই তিনি বরাবরের মতো তুলে ধরছেন তাঁর কলমের দক্ষতায় নির্মিত চরিত্রের প্রবাহমানতার মধ্য দিয়ে। পরিশেষে বলছি, গল্পটা একরোখা – জেদী তপন আর এই রুক্ষ মানুষটাকে মুহূর্তেই ভালোবেসে মরিয়া হয়ে ওঠা অ্যালিসের। দেয়ালে ঝোলানো ছবির ঘটনাটা সমগ্র উপন্যাসের নেপথ্য সঙ্গীত রূপে নিজেকে উৎসর্গ করেছে। আর উপন্যাস জুড়ে ছড়িয়ে আছে অতীতে ফেলে আসা গুটিকতক চরিত্রের উপস্থিতি। পাঁচ বছরের ব্যবধানে যাদের সাথে তপনের বহুদিনের পুরনো সম্পর্কর সব সুর গেছে কেটে। এটাই সময় এবং জীবনের নিষ্ঠুরতা হয়তো যা প্রতিটা মানুষকে মেনে নিতে হয়। সর্বোপরি , তপন আর অ্যালিসের নিয়তির গতিপথে থমকে দাঁড়াবে পাঠক।

    Download
    উপন্যাস-হৃদয়ে প্রবাস 
    ঔপন্যাসিক-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়  
    রিভিউ লেখক: প্রিয়াংকা বিশ্বাস  
    Facebook Comments
    x
    error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করুন